বীরভূম, 13 জানুয়ারি: ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জয়দেব মেলার প্রাক্কালে বন্ধ বাউল অ্যাকাডেমি। 2023 সালের 1 ফেব্রুয়ারি জয়দেবে এই বাউল অ্যাকাডেমি উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই বছর হয়নি, তার আগেই বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই অ্যাকাডেমি ৷ আক্ষেপ বাউল শিল্প থেকে পর্যটকদের ৷
যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের বাউল অ্যাকাডেমি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা তাঁর অজানা বলে জানালেন ইলামবাজারের বিডিও অনির্বাণ মজুমদার ৷ তিনি বলেন, "বিষয়টি আমার জানা নেই ।"
2016 সালে জয়দেব মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ই তিনি মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছিলেন অজয় নদের তীরে জয়দেবে গড়ে তোলা হবে বাউল অ্যাকাডেমি ৷ এখানে স্বল্প ব্যয়ে যে কেউ থাকতে পারবেন, বাউল চর্চা করতে পারবেন ৷ সেই মত 2017 সাল থেকে রাজ্যের পর্যটন দফতরের তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু হয় ৷ যা 2020 সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড পরিস্থিতি তা পিছিয়ে যায় ৷
অবশেষে 2023 সালের 1 ফেব্রুয়ারি বীরভূম জেলা সফরে বোলপুরে এসে ভার্চুয়ালি এই বাউল অ্যাকাডেমির উদ্বোধন করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় 8 কোটি টাকা খরচ হয়েছে এই বাউল অ্যাকাডেমি গড়তে ৷ এখানে 20টি ঘর, একটি স্টুডিও, সংগ্রহশালা, গানের সংগ্রহ, গ্রন্থাগার, পাণ্ডুলিপি, রেকর্ডার, সিডি, বাউল চর্চার সামগ্রী রয়েছে ৷ এছাড়া 250 আসন বিশিষ্ট প্রেক্ষাগৃহ এবং মুক্তমঞ্চ প্রভৃতির সুবিধা আছে ৷
তবে উদ্বোধনের 2 বছর কাটতে না-কাটতেই বন্ধ হয়ে পড়ে আছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রকল্প। প্রশাসনের তরফে জানা যাচ্ছে, সংস্কারের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে ৷ কিন্তু, প্রশ্ন উঠেছে উদ্বোধনের পর 2 বছরও কাটে হয়নি, সংস্কারের প্রয়োজন হল কেন ? মকরসংক্রান্তিতে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয় ঐতিহ্যবাহী 400 বছরের প্রাচীন জয়দেব মেলায় ৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা আসেন, বাউল-ফকিররা আসেন এই মেলায়। তার আগে কার্যত বন্ধ এই বাউল অ্যাকাডেমি। যা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আক্ষেপ প্রকাশ করছেন বাউল শিল্পী থেকে শুরু করে পর্যটকেরা ৷
তন্ময় দাস বাউল বলেন, "রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কত সুন্দর একটা ব্যবস্থা করেছেন ৷ আর সেটা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। এটা খুবই খারাপ লাগার বিষয় ৷ জয়দেব মেলায় কত বাউল, ভক্তরা আসেন। তারা থাকতে পারতেন। কিন্তু উদ্বোধনের পর কিছুদিন চলেছিল। তারপর বন্ধ।" তবে কেউ কেউ আবার বলছেন, নামেই বাউল অ্যাকাডেমি। এখানে থাকতে যা খরচ হয়, তা ভবঘুরে গান পাগল বাউল-ফকিরদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় ৷
পর্যটক তাপস কুমার দে বলেন, "জয়দেব মেলার জন্য এসেছি। দেখছি বাউল অ্যাকাডেমি বন্ধ হয়ে আছে ৷ সরকারের উচিত দ্রুত এটাকে খোলার ব্যবস্থা করা।" স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সায়ন রায় বলেন, "অনলাইনে বুক করা যেত এই বাউল অ্যাকাডেমি। তবে নামের সঙ্গে মিল নেই ৷ যা খরচ তাতে বাউল-ফকিররা এসে থাকতে পারবে না ৷ পরিবেশের সঙ্গেও খাপ খায় না ৷ জানি না সরকার কী ভেবে বানিয়েছিল।"
বাউল অ্যাকাডেমি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শেখ সামিরুল বলেন, "সংস্কারের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। পরে খুলবে ৷ আমাদের কাছে এমনই নির্দেশ আছে। বাকি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।"