ETV Bharat / state

দুর্গোৎসবে 'না', আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে জৌলুসহীন পারিবারিক পুজোও - Durga Puja 2024

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ বছর জৌলুসহীনভাবেই পুজো হচ্ছে বারাসতের শতাব্দী প্রাচীন চট্টোপাধ্যায় পরিবারে । পরিবর্তে বিচার চেয়ে প্রার্থনা করবেন মায়ের কাছে ।

Durga Puja 2024
চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজো (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 5, 2024, 2:33 PM IST

বারাসত, 5 অক্টোবর: সুবিচার মেলেনি এখনও । তাই আরজি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদ জানাতে কোনও জাঁকজমক থাকছে না বারাসতের শতাব্দী প্রাচীন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজোতে । জৌলুসহীন, অনাড়ম্বরভাবেই এ বছর তাঁদের পারিবারিক এই পুজো হতে চলেছে ।

কাটছাঁট করা হয়েছে পুজোর বেশকিছু আয়োজনেও । থাকবে না কোনও আলোর রোশনাই ৷ হবে না ভোগ বিতরণ এবং বস্ত্রদানের মতো সামাজিক কর্মসূচিও । শুধু থাকছে মায়ের পুজোর আচার ও রীতি-নীতি । কিন্তু, কেন এই পথে হাঁটতে হল চট্টোপাধ্যায় পরিবারকে?

দুর্গোৎসবে 'না', আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে জৌলুসহীন পারিবারিক পুজোও (ইটিভি ভারত)

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে,আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীর উপর নির্যাতন ও খুনের ঘটনা রীতিমতো নাড়া দিয়েছে চট্টোপাধ্যায় পরিবারকে । ঘটনার প্রায় দু'মাস পরেও এখনও অধরা আরজি কর-কাণ্ডের প্রকৃত দোষীরা । তাই, পুজো হলেও পরিবারের সকলেরই মন আজ ভারাক্রান্ত । এই আবহে বহু পুরনো চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজোর আয়োজন করাটাই কার্যত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল পরিবারের সদস্যদের কাছে । শেষমেশ বুকে একরাশ যন্ত্রণা এবং মনে ব‍্যথা চেপে রেখেই এ বছর মায়ের পুজো করতে হচ্ছে তাঁদের ।

Durga Puja 2024
উৎসবের বদলে বিচার চান পরিবারের সদস্যরা (নিজস্ব ছবি)

তবে, পুজো হলেও তা হচ্ছে একেবারে নমো নমো করে । পুজোর যেটুকু আচার অনুষ্ঠান করতে হয়, সেটুকু বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত আড়ম্বরই এ বছর বাতিল করা হয়েছে পুরনো এই বনেদি বাড়ির পুজোতে । শুধু তাই নয়, পুজোর পাঁচটা দিন পরিবারের সকলেই মা দুর্গার কাছে নির্যাতিতা ছাত্রীর বিচার চেয়ে প্রার্থনা করবেন বলেও জানিয়েছেন পরিবারের অন‍্যতম সদস্য সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় । বারাসতে ঐতিহ্যবাহী বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম এই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো ।

কথিত আছে, আজ থেকে একশো বছরেরও বেশি সময় আগে প্রচলন হয়েছিল বনেদি বাড়ির এই পুজোর । বংশধর বিপিন বিহারী চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই প্রথম এই পুজোর সূচনা হয়েছিল বারাসতের গুস্তিয়াতে । পরবর্তীতে সেই পুজো স্থানান্তরিত হয়ে চলে যায় কলকাতার শ‍্যামবাজারে যদু মিত্র লেনে । বংশ পরম্পরায় একসময় চট্টোপাধ্যায় পরিবারের এই পুজো হাতবদল হয়ে ফিরে আসে বারাসতে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে । বিগত প্রায় 20 বছর ধরে এখানেই হয়ে আসছে তাঁদের পারিবারিক পুজো । পুজোর সময় পরিবারের সমস্ত সদস্যই মিলিত হন এখানে । চলে হই-হুল্লোড়, আনন্দ, উপভোগও । আলোর রোশনাইয়ে সেজে ওঠে বাড়ির দালান । বাদ যায় না দুঃস্থদের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দেওয়াও । অষ্টমীতে কুমারী পুজো, ভোগ বিতরণ । এসব তো আছেই । কিন্তু, ব্যতিক্রম এবার ৷

Durga Puja 2024
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে জৌলুসহীন পারিবারিক পুজো (নিজস্ব ছবি)

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ বছর পুজোর আড়ম্বরের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে প্রায় সমস্ত কিছুই । পুজোর আনন্দ উপভোগের পরিবর্তে পরিবারের সদস্যরা চাইছেন, নির্যাতিতার মৃত্যুর সুবিচার । বন্দনা চট্টোপাধ্যায় নামে পরিবারের এক প্রবীণ সদস্য বলেন, "বুকে কষ্ট, বেদনা নিয়েই এ বছর আমাদের মায়ের পুজো করতে হচ্ছে । মা'কে আনতে হবে । পুজো করতে হবে বলেই করা । তা না হলে আমরা সেটাও করতাম না । আলোর রোশনাই থেকে শুরু করে পুজোর তোরণ ও ভোগ বিতরণ, সবকিছুই এ বছর আমরা কাটছাঁট করে দিয়েছি । এত আন্দোলন, প্রতিবাদ ! তারপরও কী নির্যাতিতার পরিবার বিচার পাবে না? এটা ভেবেই যেন মন আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে । শুধু আমিই নই, আমার মতো অনেক মায়ের বুক ফেটে যাচ্ছে । মা দুর্গার কাছে একটাই প্রার্থনা করব, নির্যাতিতার পরিবার বিচার পাক ।"

Durga Puja 2024
বারাসতের শতাব্দী প্রাচীন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজো (নিজস্ব ছবি)

একই সুর শোনা গিয়েছে পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের গলাতেও । তাঁর কথায়, "আরজি করের নির্মম এই ঘটনায় গোটা পরিবার ভেঙে পড়েছে । সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছে আমার মেয়ে সায়নী । ও যখন নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়েছিল, তখন তাঁর বাবা-মা দু'জনেই আমার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, আমাদের বাড়ির প্রদীপ চিরতরে নিভে গিয়েছে । আর কোনোদিন জ্বলবে না । সেটা যখন সায়নী বাড়িতে এসে বলল, তখন পরিবারের সকলেই আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম, এ বছর কোনও জাঁকজমক থাকবে না পারিবারিক পুজোতে । সেটাই করতে চলেছি আমরা ।"

বারাসত, 5 অক্টোবর: সুবিচার মেলেনি এখনও । তাই আরজি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদ জানাতে কোনও জাঁকজমক থাকছে না বারাসতের শতাব্দী প্রাচীন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজোতে । জৌলুসহীন, অনাড়ম্বরভাবেই এ বছর তাঁদের পারিবারিক এই পুজো হতে চলেছে ।

কাটছাঁট করা হয়েছে পুজোর বেশকিছু আয়োজনেও । থাকবে না কোনও আলোর রোশনাই ৷ হবে না ভোগ বিতরণ এবং বস্ত্রদানের মতো সামাজিক কর্মসূচিও । শুধু থাকছে মায়ের পুজোর আচার ও রীতি-নীতি । কিন্তু, কেন এই পথে হাঁটতে হল চট্টোপাধ্যায় পরিবারকে?

দুর্গোৎসবে 'না', আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে জৌলুসহীন পারিবারিক পুজোও (ইটিভি ভারত)

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে,আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসক ছাত্রীর উপর নির্যাতন ও খুনের ঘটনা রীতিমতো নাড়া দিয়েছে চট্টোপাধ্যায় পরিবারকে । ঘটনার প্রায় দু'মাস পরেও এখনও অধরা আরজি কর-কাণ্ডের প্রকৃত দোষীরা । তাই, পুজো হলেও পরিবারের সকলেরই মন আজ ভারাক্রান্ত । এই আবহে বহু পুরনো চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজোর আয়োজন করাটাই কার্যত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল পরিবারের সদস্যদের কাছে । শেষমেশ বুকে একরাশ যন্ত্রণা এবং মনে ব‍্যথা চেপে রেখেই এ বছর মায়ের পুজো করতে হচ্ছে তাঁদের ।

Durga Puja 2024
উৎসবের বদলে বিচার চান পরিবারের সদস্যরা (নিজস্ব ছবি)

তবে, পুজো হলেও তা হচ্ছে একেবারে নমো নমো করে । পুজোর যেটুকু আচার অনুষ্ঠান করতে হয়, সেটুকু বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত আড়ম্বরই এ বছর বাতিল করা হয়েছে পুরনো এই বনেদি বাড়ির পুজোতে । শুধু তাই নয়, পুজোর পাঁচটা দিন পরিবারের সকলেই মা দুর্গার কাছে নির্যাতিতা ছাত্রীর বিচার চেয়ে প্রার্থনা করবেন বলেও জানিয়েছেন পরিবারের অন‍্যতম সদস্য সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় । বারাসতে ঐতিহ্যবাহী বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম এই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো ।

কথিত আছে, আজ থেকে একশো বছরেরও বেশি সময় আগে প্রচলন হয়েছিল বনেদি বাড়ির এই পুজোর । বংশধর বিপিন বিহারী চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই প্রথম এই পুজোর সূচনা হয়েছিল বারাসতের গুস্তিয়াতে । পরবর্তীতে সেই পুজো স্থানান্তরিত হয়ে চলে যায় কলকাতার শ‍্যামবাজারে যদু মিত্র লেনে । বংশ পরম্পরায় একসময় চট্টোপাধ্যায় পরিবারের এই পুজো হাতবদল হয়ে ফিরে আসে বারাসতে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে । বিগত প্রায় 20 বছর ধরে এখানেই হয়ে আসছে তাঁদের পারিবারিক পুজো । পুজোর সময় পরিবারের সমস্ত সদস্যই মিলিত হন এখানে । চলে হই-হুল্লোড়, আনন্দ, উপভোগও । আলোর রোশনাইয়ে সেজে ওঠে বাড়ির দালান । বাদ যায় না দুঃস্থদের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দেওয়াও । অষ্টমীতে কুমারী পুজো, ভোগ বিতরণ । এসব তো আছেই । কিন্তু, ব্যতিক্রম এবার ৷

Durga Puja 2024
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে জৌলুসহীন পারিবারিক পুজো (নিজস্ব ছবি)

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ বছর পুজোর আড়ম্বরের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে প্রায় সমস্ত কিছুই । পুজোর আনন্দ উপভোগের পরিবর্তে পরিবারের সদস্যরা চাইছেন, নির্যাতিতার মৃত্যুর সুবিচার । বন্দনা চট্টোপাধ্যায় নামে পরিবারের এক প্রবীণ সদস্য বলেন, "বুকে কষ্ট, বেদনা নিয়েই এ বছর আমাদের মায়ের পুজো করতে হচ্ছে । মা'কে আনতে হবে । পুজো করতে হবে বলেই করা । তা না হলে আমরা সেটাও করতাম না । আলোর রোশনাই থেকে শুরু করে পুজোর তোরণ ও ভোগ বিতরণ, সবকিছুই এ বছর আমরা কাটছাঁট করে দিয়েছি । এত আন্দোলন, প্রতিবাদ ! তারপরও কী নির্যাতিতার পরিবার বিচার পাবে না? এটা ভেবেই যেন মন আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে । শুধু আমিই নই, আমার মতো অনেক মায়ের বুক ফেটে যাচ্ছে । মা দুর্গার কাছে একটাই প্রার্থনা করব, নির্যাতিতার পরিবার বিচার পাক ।"

Durga Puja 2024
বারাসতের শতাব্দী প্রাচীন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজো (নিজস্ব ছবি)

একই সুর শোনা গিয়েছে পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের গলাতেও । তাঁর কথায়, "আরজি করের নির্মম এই ঘটনায় গোটা পরিবার ভেঙে পড়েছে । সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছে আমার মেয়ে সায়নী । ও যখন নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়েছিল, তখন তাঁর বাবা-মা দু'জনেই আমার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, আমাদের বাড়ির প্রদীপ চিরতরে নিভে গিয়েছে । আর কোনোদিন জ্বলবে না । সেটা যখন সায়নী বাড়িতে এসে বলল, তখন পরিবারের সকলেই আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম, এ বছর কোনও জাঁকজমক থাকবে না পারিবারিক পুজোতে । সেটাই করতে চলেছি আমরা ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.