কলকাতা, 14 মার্চ: "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার কাছে ভগবান ৷ ভগবানের কাছে যদি মার খেতে হয়, তাহলে সেটা আশীর্বাদ", কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের বললেন বাবুন (স্বপন) বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আর এই আশীর্বাদ নিয়েই "আগামী 72 ঘণ্টার মধ্যে দিদির কাছে পৌঁছব", দিদির অভিমান ভাঙাতে এমনটাই বললেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই ৷
তবে এই দিদি-ভাইয়ের বিবাদটা কোনও ব্যাপার নয় ৷ বরং এর সুযোগ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করলেন বাবুন ৷ বুধবার রাতে বাবুন বলেন, "এটা পরিবারের মধ্যে ৷ দিদি মারুক, ধরুক, যা খুশি করুক ৷ দিদি বকতেই পারেন ৷ বাবা-মা যদি বলে, ঘর থেকে বেরিয়ে যা ৷ কিন্তু সময়ে সেই অভিমান মিটে যায় ৷ কিছু মানুষ এটা নিয়ে খেলছে ৷ যাঁরা খেলছেন, তাঁদের সঙ্গে খেলা হবে ৷"
- এদিন কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে কী বললেন স্বপন ওরফে বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় ?
"আমি লোভী নই, অভিমানী", বলেন বাবুন ৷ দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "দিদি আমার কাছে ভগবান" ৷ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না-করে তিনি বলেন, "আমি নিজের হাওড়ায় চাকরি করতাম ৷ হাওড়াবাসীদের কাছে আমার একটা ভালোবাসা এবং আন্তরিকতার জায়গা আছে ৷ তৃণমূলের কর্মী হিসেবে আমি আমার জায়গা থেকে বলতেই পারি, হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে এই প্রার্থীকে দাঁড় না করিয়ে অন্য কাউকে প্রার্থী করা যেত ৷ এতে আমি খুশি নই ৷ কারণ, আমি এই প্রার্থীকে খাটতে দেখিনি ৷ তাই হাওড়াবাসীদের কাছে আবেদন, দিদি যা বলছেন শুনুন ৷ কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এই প্রার্থী ঠিক নয় ৷ "
প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের খারাপ ব্যবহারের কথা মনে করে বাবুন বলেন, "মোহনবাগান ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় তাঁর কোনও জায়গা ছিল না ৷ আমার শরীরে পেসমেকার বসানো রয়েছে ৷ আমায় সেদিন ধাক্কা মেরে আঘাত করেছিলেন তিনি ৷ আমি সেটা ভুলে যাইনি ৷"
বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেন বাবুন ৷ তিনি বলেন, "এটা ভুয়ো খবর ৷ দিল্লি গিয়েছি মানেই যে এটা বিজেপির কোনও ব্যাপার, তা নয় ৷ আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রক্তের ভাই ৷ সেখানে বিজেপির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না ৷"
দলের প্রাক্তন মুখপাত্র কুণাল ঘোষকে আক্রমণ করেন বাবুন ৷ তিনি বলেন, "কুণাল ঘোষ এত কথা বলছে ৷ তিনি কী কাজ করেছেন ? কুণালকে তো কেউ কিছু বলছে না ? বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেই দোষ ? কেন ?" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমান তিনি ভাঙাবেনই ৷ এ নিয়ে বাবুন বলেন, "এটা দিদি-ভাইয়ের ব্যাপার ৷ আমি দিদির পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইব ৷ দিদি মারুক, ধরুক, যাই করুক, এটা পরিবারের ব্যাপার ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার কাছে ভগবান ৷ ভগবানের কাছে যদি মার খেতে হয়, তাহলে সেটা আশীর্বাদ ৷ এই আশীর্বাদ নিয়েই আমি আগামী 72 ঘণ্টার মধ্যে দিদির কাছে পৌঁছব ৷"
এই বিতর্কের সূত্রপাত লোকসভার প্রার্থী ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ৷ 10 মার্চ ব্রিগেডে তৃণমূলের জনগর্জন সভা থেকে 42টি লোকসভা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয় ৷ এরপর মঙ্গলবার কানাঘুষো শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি গিয়েছেন ৷ বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "হাওড়া লোকসভা আসন থেকে প্রার্থী বাছাইয়ে আমি খুশি নই ৷ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় সঠিক পছন্দ নয় ৷ সেখানে অনেক যোগ্যপ্রার্থী ছিল, যাদের উপেক্ষা করা হয়েছে ৷ প্রসূন আমাকে যে অপমান করেছিলেন তা আমি কখনওই ভুলতে পারব না ৷ নির্দল প্রার্থী হিসেবে হাওড়া আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি ৷" এমনকী শোনা যায়, তিনি নাকি বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন ৷
এদিন আবার শিলিগুড়িতে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁকে সাংবাদিকরা এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, "আমি সরাসরি বলছি, বড় হলে অনেকের লোভ অনেক বেশি হয়ে যায় ৷ আমার পরিবারের ও (বাবুন) কেউ বলে আমি মনেই করি না ৷ আমার সঙ্গে আজ থেকে সব সম্পর্ক ছিন্ন ৷ আমার পরিবারের সঙ্গে আর কোনও সম্পর্ক নেই ওর ৷ আমার ভাই বলে পরিচয় দেবেন না ৷ তাঁর অনেক কাজ আমার পছন্দ নয় ৷" এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাবুনকে 'লোভী' বলেন ৷ এরপরই বাবুনের সুর বদলে যায় ৷
আরও পড়ুন: