ভাঙড়, 12 ডিসেম্বর: ভাঙড় দু'নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে আরাবুল ইসলামের ঘরে পড়ল তালা ৷ সেটি দখল নেওয়ার অভিযোগ শওকত মোল্লা ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা খয়রুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৷ এবার তাই বিডিও অফিস চত্বরে টেবিল পেতে বসে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছেন ভাঙড় দু'নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলাম ৷
তিনি জানান, সপ্তাহে দু'দিন এভাবেই তিনি পরিষেবা দেবেন । যদিও এ বিষয়ে তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত খয়রুল ইসলামের কটাক্ষ, আরাবুল নাটক করছেন ৷ তবে বিডিও অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, আরাবুল ইসলামকে বিডিও অফিসের তিনতলায় বসার জায়গা করে দেওয়া হয় । কিন্তু তিনি সেখানে বসতে রাজি হননি ।
ভাঙড়ে তৃণমূলের শুরু থেকে দীর্ঘ এক যুগ ধরে দু'নম্বর বিডিও অফিসের পঞ্চায়েত সমিতির ঘরে বসতেন আরাবুল ইসলাম । সেই অফিস আরাবুলের চেনা পরিচিতদের কাছে তাঁরই অফিস হয়ে ওঠে ৷ তবে পঞ্চায়েত ভোট পরবর্তী হিংসায় জেলবন্দি হন আরাবুল ইসলাম । প্রায় 10 মাস কারাগারে বন্দি থাকেন তিনি ৷ এরপর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ছাড়া পেয়ে ভাঙড়ে ফেরেন ৷ তবে মাঝখানে কেটে যায় কয়েকটা মাস ৷ এই সময়ে আরাবুলের অফিস দখল করে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল নেতা খয়রুল ইসলামের বিরুদ্ধে ।
তবে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নিজের পরিচিত অফিস ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন আরাবুল ইসলামও ৷ এই নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি । সেই মামলা আদালতে বিচারাধীন ৷ কিন্তু এরপরেও এখনও অফিস ফিরে পাননি আরাবুল । নিজের অফিসে বসতে না পেরে তাই বৃহস্পতিবার ভাঙড় দু'নম্বর বিডিও অফিস চত্বরে টেবিল পেতে সাধারণ মানুষের পরিষেবায় ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি ।
এ বিষয়ে ভাঙড় দু'নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলাম বলেন, "মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে আমি এখানে এসেছি । আমি এসে দেখি দীর্ঘদিন ধরে আমি যে ঘরে বসে মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছি, সেই ঘর অন্য পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য দখল করেছেন । এই বিষয়টি জানানোর পর বিডিও তাঁর নিজের ঘরে আমাকে বসতে দিয়েছিলেন । কিন্তু সাধারণ মানুষ সেই ঘরে যেতে কিছুটা হলেও দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছিল । আমি বসে থাকার কারণে বিডিওরও কাজের ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছিল । সেজন্য বিডিও অফিসের সামনে টেবিল চেয়ার পেতে মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছি ।"
তাঁর কথায়, "আমি সমস্ত বিষয় নিয়ে দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি ৷ দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের নির্দেশ দিয়েছে, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করার জন্য । আমরা আইনের দ্বারস্থ হয়েছি ৷ পাশাপাশি আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ ৷ আমরা অশান্তি করতে চাই না । বিডিওর পক্ষ থেকে আমাকে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল ৷ সেই ঘরে বসে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো নেই । তাই সপ্তাহে দু'দিন আমি বিডিও অফিসের সামনে বসব এবং সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেব ।"
এ বিষয়ে ভাঙড় দু'নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমির কর্মাধ্যক্ষ খয়রুল ইসলাম বলেন, "এতদিন আমরা জানতাম আরাবুল ইসলাম খুনি এবং তোলাবাজ ৷ এখন এই ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গেল উনি নাটকবাজ । উনি এই সামান্য বিষয় নিয়ে নাটক করছেন । পঞ্চায়েত সমিতিতে কে কোন ঘরে বসবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে থাকা সমস্ত সদস্যরা ।"
তাঁর সংযোজন, "আরাবুল বাবুকে জানতে হবে এটি কারও পৈতৃক সম্পত্তি নয় । যদি মানুষের পরিষেবা দেওয়ার কথা এতটাই ভাবতেন তাহলে এতদিন কোথায় ছিলেন । এতদিন ভাঙড়ের মানুষ কী কোনও পরিষেবা পায়নি ! উনি নাটক করছেন সংবাদমাধ্যমের সামনে । বিডিওর তরফ থেকে ওঁকে একটা বসার জন্য ঘর দেওয়া হয়েছিল ৷ উনি সেই ঘরে বসেননি । বিডিও অফিসের সামনে টেবিল চেয়ার পেতে নাটক করছেন ।"
তৃণমূলের অন্দরে দুই নেতার কোন্দলকে কেন্দ্র করে ভাঙড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর ৷