কলকাতা, 19 ফেব্রুয়ারি: বেশ কয়েকবছর আগে বাজেট অধিবেশনে আলোচনায় তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী সিপিএম কাউন্সিলরের শরীরের তুলনা টেনে বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন। সোমবার পৌরনিগমে সেই বাজেট অধিবেশনেই গল্প শুনিয়ে শিরোনামে তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ এ গল্প নিছক গল্প নয়, নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়কে সামনে রেখে গল্পের পরতে পরতে রয়েছে যৌনতা ৷ ধর্মগুরু এবং প্রব্রাজিকার সেই মুচমুচে গল্প খুব স্বাভাবিকভাবেই পছন্দ হয়নি বিরোধীদের ৷ ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ তুলে চেয়ারপার্সন মালা রায়কে গল্পের অংশ অভিনেত্রী-কাউন্সিলরের ভাষণ থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানান বিজেপি কাউন্সিলররা ৷ এমনকী সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানায় বিরোধীরা ৷ পাশাপাশি এ হেন কথা অধিবেশনে কেন বলেছেন তা ওই কাউন্সিলরের থেকে জানতে চেয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
এদিন বাজেট নিয়ে ব্যাখ্যা করতে উঠে তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি গল্পের উদাহরণ দেন। একটি বিশেষ ধর্মগুরু ও প্রব্রাজিকার মধ্যে যৌন আবেদনের সেই গল্পের মতই বাজেট। এমনই দাবি করেন অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এই গল্পে সংশ্লিষ্ট ধর্মগ্রন্থের 112 অনুচ্ছেদের তুলনা টেনে 112 কোটি টাকা ঘাটতির কথা বোঝান। তৃণমূল কাউন্সিলরের বক্তব্যের মাঝে বাধা না-দিলেও বক্তব্য শেষে বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ ও বিজয় ওঝা উঠে অনন্যার গল্পের তীব্র আপত্তি জানান। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ তুলে এই অংশ অধিবেশনের মিনিটস থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তোলা হয়।
সজল ঘোষ এ বিষয়ে বলেন, "ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। সেখানে তৃণমূল কাউন্সিলর বাজেট অধিবেশনে একটি ধর্মের সাধক, ধর্মগুরুদের নিয়ে যৌনতামূলক গল্প বলছেন। আসলে ওদের দলের নেতারা যা করেন সেটাই গল্প হিসেবে তুলেছেন। এটা ঠিক নয়।" তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে শুধু বিজেপি নয়, নির্দিষ্ট সেই ধর্মাবলম্বী তৃণমূলের দুই কাউন্সিলরও ক্ষোভপ্রকাশ করেন। নিজেদের মধ্যেই কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল কাউন্সিলররা।
বরো চেয়ারম্যান ও তৃণমূল কাউন্সিলর সুস্মিতা ভট্টাচার্যও ক্ষোভ উগরে বলেন এটা ওঁর (অনন্যা বন্দ্যোপাধ্য়ায়) বানানো গল্প। আমাদের ধর্ম এমন কিছু শেখায় না। এমনকী ধর্মগ্রন্থের 112 নম্বর অনুচ্ছেদ পড়েও শোনান তিনি। ওই অংশ বাদ দেওয়ার দাবি জানান । যদিও এই প্রসঙ্গে বাম কাউন্সিলররা চুপ ছিলেন।
এদিকে সন্ধেয় দলীয় কাউন্সিলরের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে নিন্দার সরব হন খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কলকাতার মহানাগরিক তাঁর সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি লেখেন, "আজ পৌরসভায় বাজেট বক্তৃতায় পৌর প্রতিনিধি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু মন্তব্য সমাজের এক সম্প্রদায়ের মানুষকে আঘাত করেছে। আমি এই বিষয়ে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে জানাচ্ছি যে ওনার এই মতের সঙ্গে দল একমত নয় এবং দলের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা করা হচ্ছে। ওনার কাছে তৃণমূল কংগ্রেসের পৌর দলের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যের জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে।"
আরও পড়ুন: