ETV Bharat / state

বায়ু দূষণের মধ্যেই কংক্রিট বর্জ্যের দেদার পাচার, পরিস্থিতি নাগালে আনতে নজরদারিতে আধিকারিক - CONCRETE WASTE SMUGGLING

পুর কমিশনারের নির্দেশ অনুসারে, প্রতি ওয়ার্ডে নির্মাণস্থলে নজরদারি করবেন সংশ্লিষ্ট নিয়োজিত আধিকারিক । এরপর তাঁরা রিপোর্ট দেবেন উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে ।

Construction waste
শহর থেকে নির্মাণ বর্জ্য পাচারের অভিযোগ (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 17, 2024, 6:50 PM IST

কলকাতা, 17 ডিসেম্বর: দিল্লি বা কলকাতায় বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ হল নির্মাণ কাজ । অভিযোগ, মহানগরে সেই নির্মাণ কাজের সামগ্রী থেকে কংক্রিট বর্জ্যের বেলাগামভাবে পাচার চলছে । নির্মাণ আইন মানছেন না অনেকেই । আবার রাবিশ নিয়ে চলে যাচ্ছেন বড় কারবারীরা । তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষমেষ কড়া মনোভাব নিল কলকাতা পুরনিগম । নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হল প্রতি বরোয় একজন করে আধিকারিককে ৷

শহরের বিভিন্ন জায়গায় চলছে নির্মাণ কাজ । সেখান থেকে তৈরি হচ্ছে ধুলো । কর্পোরেশনের নির্দেশিকা রয়েছে, নির্মাণস্থল ঢেকে কাজ করার ৷ কেউ তা তোয়াক্কা করছে না ৷ নজরদারিও না থাকারও অভিযোগ রয়েছে ৷ অন্যদিকে নির্মাণ সামগ্রী প্রকাশ্যেই ফুটপাথ জুড়ে পড়ে থাকে দিনের পর দিন । যার জেরে শহর কলকাতার বায়ু দূষণ আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে ।

নির্মাণ বর্জ্য পাচার রুখতে নজরদারিতে আধিকারিক (ইটিভি ভারত)

আর সব থেকে বড় অভিযোগ হল, নির্মাণ কাজকে ঘিরে চলছে কংক্রিট বর্জ্যের বেলাগাম পাচার । কলকাতা কর্পোরেশন বিপুল টাকা খরচ করে রাজারহাটের পাথরঘাটায় তৈরি করেছে কংক্রিট বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার প্ল্যান্ট ৷ পুরনিগমের তরফে শহর জুড়েই বারেবারে আবেদন করা হয়েছে, এমনকি নিয়ম তৈরি করা হয়েছে যে শহরের কোনও অংশে নির্মাণ বর্জ্য তৈরি হলে, সেটা এই প্ল্যান্টে দিতে হবে । তার বিনিময় লাভ হবে নাগরিকদের । সেই বর্জ্য দিয়ে তৈরি হবে ইট, পেভার ব্লক, যা রাস্তা ও ফুটপাথে লাগানো হবে ।

অভিযোগ, তা না করে কয়েকগুণ বেশি টাকায় দেদার সেই বর্জ্য বিক্রি হয়ে যাচ্ছে । কিছু অসাধু চক্র সেই বর্জ্য পাচার করছে, যা দিয়ে কলকাতা লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় হচ্ছে জলা ভরাট, জমি উঁচু করার কাজ । জমা বুজিয়ে দেওয়ার নানা কুপ্রভাব পড়ছে শহরের পরিবেশে ৷ আর তার প্রভাব পড়ছে মানব দেহে ।

Construction waste
রাবিশ নিয়ে পাচারের কারবার (নিজস্ব ছবি)

যখন পরিবেশের ক্ষতি সাধন হচ্ছে এই বর্জ্যের মাধ্যমে, তখন সেই কংক্রিট বর্জ্যের অভাবে উৎপাদন থমকে যাচ্ছে রাজারহাটের প্ল্যান্টে । কোথায় এমন নির্মাণ বর্জ্য হচ্ছে চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের । সার্বিক এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকদের দেওয়া হল বাড়তি দায়িত্ব ।

Construction waste
মোটা টাকার বিনিময়ে নির্মাণ বর্জ্য পাচারের অভিযোগ (নিজস্ব ছবি)

কলকাতা কর্পোরেশন সূত্রে খবর, প্রতি বরোতে বিল্ডিং বিভাগের একজন করে আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ তাঁর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে কোথায় নির্মাণ কাজ হচ্ছে সে বিষয়ে নজরদারি করতে হবে ওই আধিকারিককে ৷ পাশাপাশি নতুন নির্মাণের অনুমতি মিলতেই, পুরনো ভবন ভাঙার কাজ শুরু হলে, সেই বর্জ্য যাতে কলকাতা কর্পোরেশনের প্ল্যান্টে আসে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে ওই আধিকারিকদের ।

এই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা কর্পোরেশনের কমিশনার ধবল জৈন । কমিশনারের নির্দেশ অনুসারে, প্রতি ওয়ার্ডে নির্মাণস্থলে নজরদারি করবেন সংশ্লিষ্ট নিয়োজিত আধিকারিক । এরপর তাঁরা রিপোর্ট দেবেন উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে ।

Construction waste
বায়ু দূষণের কারণ নির্মাণ বর্জ্য (নিজস্ব ছবি)

সম্প্রতি রাস্তার মাঝে রাবিশ ভর্তি লরি আটকে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম । ওই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে দিয়েছিলেন তিনি । পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে বলেছিলেন মেয়র । কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি বলে অভিযোগ ৷ দক্ষিণ কলকাতার একটি নির্মাণস্থলের বিপরীতে দোকান কর্মী কমল বলেন, "ধুলোয় ভয়ঙ্কর সমস্যা হচ্ছে । হাঁপানির টান উঠে শ্বাসকষ্ট হয় ৷ কিন্তু কিছু করার নেই ।"

Construction waste
কংক্রিট বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার হয় প্ল্যান্টে (নিজস্ব ছবি)

পরিবেশ বিজ্ঞানী সোমেন্দ্রমোহন ঘোষের কথায়, "বর্তমান সময় দাঁড়িয়ে এই বিষয়টি কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । দূষণ নিয়ন্ত্রণে দিল্লি নির্মাণ কাজ পর্যন্ত বন্ধ করে তাহলে কলকাতা নয় কেন । শহরে সমস্ত নির্মাণের ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে । রাবিশ যেন নির্দিষ্ট প্ল্যান্টে যায় । তাতে দূষণ অনেকটাই লাগাম দেওয়া যাবে ।"

নির্মাণ বর্জ্য সম্পর্কে যাতে স্থানীয় নাগরিকরা কর্পোরেশনকে জানাতে পারেন তার জন্য একটি নম্বর চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুরনিগমের এক আধিকারিক বলেন, "নির্মাণ বর্জ্য সেই জায়গা থেকে তুলতে হলে কর্পোরেশনকে টাকা দিতে হয় সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ব্যক্তিকে ৷ কিন্তু যদি ব্যবসায়ীরা সেটা কিনে নেয় তাহলে উলটে তারা টাকা দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ব্যক্তিকে ৷ তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা এই বর্জ্য মোটা টাকা দিয়ে কিনে নেয় । অনেকেই টাকার লোভে তা বিক্রি করে দেয় ব্যবসায়ীদের । যাতে নির্মাণ বর্জ্য কর্পোরেশন ছাড়া অন্য কেউ বিক্রি করে দিতে না পারে । এবার সেই দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে ৷ "

কলকাতা, 17 ডিসেম্বর: দিল্লি বা কলকাতায় বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ হল নির্মাণ কাজ । অভিযোগ, মহানগরে সেই নির্মাণ কাজের সামগ্রী থেকে কংক্রিট বর্জ্যের বেলাগামভাবে পাচার চলছে । নির্মাণ আইন মানছেন না অনেকেই । আবার রাবিশ নিয়ে চলে যাচ্ছেন বড় কারবারীরা । তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষমেষ কড়া মনোভাব নিল কলকাতা পুরনিগম । নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হল প্রতি বরোয় একজন করে আধিকারিককে ৷

শহরের বিভিন্ন জায়গায় চলছে নির্মাণ কাজ । সেখান থেকে তৈরি হচ্ছে ধুলো । কর্পোরেশনের নির্দেশিকা রয়েছে, নির্মাণস্থল ঢেকে কাজ করার ৷ কেউ তা তোয়াক্কা করছে না ৷ নজরদারিও না থাকারও অভিযোগ রয়েছে ৷ অন্যদিকে নির্মাণ সামগ্রী প্রকাশ্যেই ফুটপাথ জুড়ে পড়ে থাকে দিনের পর দিন । যার জেরে শহর কলকাতার বায়ু দূষণ আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে ।

নির্মাণ বর্জ্য পাচার রুখতে নজরদারিতে আধিকারিক (ইটিভি ভারত)

আর সব থেকে বড় অভিযোগ হল, নির্মাণ কাজকে ঘিরে চলছে কংক্রিট বর্জ্যের বেলাগাম পাচার । কলকাতা কর্পোরেশন বিপুল টাকা খরচ করে রাজারহাটের পাথরঘাটায় তৈরি করেছে কংক্রিট বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার প্ল্যান্ট ৷ পুরনিগমের তরফে শহর জুড়েই বারেবারে আবেদন করা হয়েছে, এমনকি নিয়ম তৈরি করা হয়েছে যে শহরের কোনও অংশে নির্মাণ বর্জ্য তৈরি হলে, সেটা এই প্ল্যান্টে দিতে হবে । তার বিনিময় লাভ হবে নাগরিকদের । সেই বর্জ্য দিয়ে তৈরি হবে ইট, পেভার ব্লক, যা রাস্তা ও ফুটপাথে লাগানো হবে ।

অভিযোগ, তা না করে কয়েকগুণ বেশি টাকায় দেদার সেই বর্জ্য বিক্রি হয়ে যাচ্ছে । কিছু অসাধু চক্র সেই বর্জ্য পাচার করছে, যা দিয়ে কলকাতা লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় হচ্ছে জলা ভরাট, জমি উঁচু করার কাজ । জমা বুজিয়ে দেওয়ার নানা কুপ্রভাব পড়ছে শহরের পরিবেশে ৷ আর তার প্রভাব পড়ছে মানব দেহে ।

Construction waste
রাবিশ নিয়ে পাচারের কারবার (নিজস্ব ছবি)

যখন পরিবেশের ক্ষতি সাধন হচ্ছে এই বর্জ্যের মাধ্যমে, তখন সেই কংক্রিট বর্জ্যের অভাবে উৎপাদন থমকে যাচ্ছে রাজারহাটের প্ল্যান্টে । কোথায় এমন নির্মাণ বর্জ্য হচ্ছে চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের । সার্বিক এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকদের দেওয়া হল বাড়তি দায়িত্ব ।

Construction waste
মোটা টাকার বিনিময়ে নির্মাণ বর্জ্য পাচারের অভিযোগ (নিজস্ব ছবি)

কলকাতা কর্পোরেশন সূত্রে খবর, প্রতি বরোতে বিল্ডিং বিভাগের একজন করে আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ তাঁর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে কোথায় নির্মাণ কাজ হচ্ছে সে বিষয়ে নজরদারি করতে হবে ওই আধিকারিককে ৷ পাশাপাশি নতুন নির্মাণের অনুমতি মিলতেই, পুরনো ভবন ভাঙার কাজ শুরু হলে, সেই বর্জ্য যাতে কলকাতা কর্পোরেশনের প্ল্যান্টে আসে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে ওই আধিকারিকদের ।

এই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা কর্পোরেশনের কমিশনার ধবল জৈন । কমিশনারের নির্দেশ অনুসারে, প্রতি ওয়ার্ডে নির্মাণস্থলে নজরদারি করবেন সংশ্লিষ্ট নিয়োজিত আধিকারিক । এরপর তাঁরা রিপোর্ট দেবেন উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে ।

Construction waste
বায়ু দূষণের কারণ নির্মাণ বর্জ্য (নিজস্ব ছবি)

সম্প্রতি রাস্তার মাঝে রাবিশ ভর্তি লরি আটকে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম । ওই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে দিয়েছিলেন তিনি । পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে বলেছিলেন মেয়র । কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়নি বলে অভিযোগ ৷ দক্ষিণ কলকাতার একটি নির্মাণস্থলের বিপরীতে দোকান কর্মী কমল বলেন, "ধুলোয় ভয়ঙ্কর সমস্যা হচ্ছে । হাঁপানির টান উঠে শ্বাসকষ্ট হয় ৷ কিন্তু কিছু করার নেই ।"

Construction waste
কংক্রিট বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার হয় প্ল্যান্টে (নিজস্ব ছবি)

পরিবেশ বিজ্ঞানী সোমেন্দ্রমোহন ঘোষের কথায়, "বর্তমান সময় দাঁড়িয়ে এই বিষয়টি কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে । দূষণ নিয়ন্ত্রণে দিল্লি নির্মাণ কাজ পর্যন্ত বন্ধ করে তাহলে কলকাতা নয় কেন । শহরে সমস্ত নির্মাণের ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে । রাবিশ যেন নির্দিষ্ট প্ল্যান্টে যায় । তাতে দূষণ অনেকটাই লাগাম দেওয়া যাবে ।"

নির্মাণ বর্জ্য সম্পর্কে যাতে স্থানীয় নাগরিকরা কর্পোরেশনকে জানাতে পারেন তার জন্য একটি নম্বর চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুরনিগমের এক আধিকারিক বলেন, "নির্মাণ বর্জ্য সেই জায়গা থেকে তুলতে হলে কর্পোরেশনকে টাকা দিতে হয় সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ব্যক্তিকে ৷ কিন্তু যদি ব্যবসায়ীরা সেটা কিনে নেয় তাহলে উলটে তারা টাকা দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা ব্যক্তিকে ৷ তাই অসাধু ব্যবসায়ীরা এই বর্জ্য মোটা টাকা দিয়ে কিনে নেয় । অনেকেই টাকার লোভে তা বিক্রি করে দেয় ব্যবসায়ীদের । যাতে নির্মাণ বর্জ্য কর্পোরেশন ছাড়া অন্য কেউ বিক্রি করে দিতে না পারে । এবার সেই দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে ৷ "

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.