সন্দেশখালি, 8 ফেব্রুয়ারি: ভাঙচুর, লুঠপাট, অগ্নিসংযোগ ! বুধবার রাত থেকে ফের নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালি । পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, শাহজাহান ঘনিষ্ঠ সন্দেশখালি অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি উত্তম সর্দারকে পুলিশি নিরাপত্তায় ক্ষুদ্ধ গ্রামবাসীদের হাত থাকে রক্ষা করতে হল। সূত্রের খবর, ওই তৃণমূল নেতাকে মারধরও করা হয়েছে। তাতে আক্রান্ত হয়েছেন জেলাপরিষদের সদস্য উত্তম সর্দার । পরে, তাঁকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে চিকিৎসার জন্য । পুনরায় হামলার আশঙ্কায় 'ফেরার' শাহজাহান ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা এবং উত্তম সর্দারকে পুলিশের তরফে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে । হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুঠপাটের ঘটনায় বসিরহাট জেলা পুলিশ পৃথক তিনটি মামলা রুজু করেছে । তার ভিত্তিতে শুরু হয়েছে তদন্ত ।
গ্রামবাসীদের একটাই দাবি, "লুঠ হয়ে যাওয়া বিঘার পর বিঘা জমি এবং ভেড়ির লিজের টাকা দিতেই হবে তৃণমূল নেতাদের । নইলে তাঁরা নিজের হকেরটা বুঝে নেবেন ৷"
এমনকি, ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা শাহজাহান ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা এবং উত্তম সর্দারের গ্রেফতারের দাবিতেও সরব হয়েছেন । পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে যে কোনও সময় দাবানলের মতো সেই পুঞ্জিভূত ক্ষোভ আছড়ে পড়তে পারে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে । এর আভাস মিলেছিল বুধবারই । এদিন যেভাবে গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে জীবন বাঁচাতে শাহজাহানের অনুগত তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা নৌকা করে ত্রিমোহনী এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন, তাতেই স্পষ্ট হয়েছিল শাসকদলের আধিপত্য ধাক্কা খেতে শুরু করেছে । শুধু নৌকা করে নয় ! প্রাণ বাঁচাতে তৃণমূলের কাউকে কাউকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে ডাঙায় উঠতেও দেখা গিয়েছে । কিন্তু, কি এমন হল পরিস্থিতি এতটা উত্তপ্ত হয়ে উঠল ? ওয়াকিবহাল একাংশের ধারণা, "এসবই নিয়তির পরিহাস ! সন্দেশখালিকাণ্ডের 'মাস্টারমাইন্ড' দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান 'ফেরার' হতেই তৃণমূল নেতাদের উপর জমে থাকা দীর্ঘদিনের আক্রোশ এখন স্ফুলিঙ্গের মতো প্রকাশ পেতে শুরু করেছে ।"
সন্দেশখালির 'বেতাজ বাদশা' তৃণমূল নেতা শাহজাহানের অন্যায়-অত্যাচারে সাধারণ গ্রামবাসীরা রীতিমতো বীতশ্রদ্ধ ! দাপুটে এই তৃণমূল নেতার দৌরাত্ম্য এতটাই যে, একসময় তাঁর কিংবা শাহজাহান ঘনিষ্ঠ শাসক নেতাদের অত্যাচার মুখ বুজেই সহ্য করতে হত ত্রিমোহনী, কাহারপাড়া, দাসপাড়া-সহ আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামগুলি । এখন সেখানেই জনবিস্ফোরণ ঘটতে শুরু করেছে । সাহস করে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ নেতাদের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জেও উঠছেন গ্রামবাসীদের একাংশ । বাঁশ, লাঠিসোঁটা, দা, কুড়ুল সবকিছু নিয়েই গ্রামের মহিলারা বেরিয়ে এসেছেন রাস্তায় । যদিও এর পিছনে বিজেপি এবং সিপিএমের পরিকল্পিত ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব । এমনকি, চক্রান্ত করে শান্ত সন্দেশখালিকে অশান্ত করার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ তাঁদের ।
এদিকে, বুধবার বিকেল থেকে যে অশান্তি সন্দেশখালি 2 নম্বর ব্লকে শুরু হয়েছিল, সেই অশান্তি সন্ধ্যা গড়াতেই ছড়িয়ে পড়ে অন্যত্র। ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা রাতে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরার পোল্ট্রি ফার্ম-সহ অফিস ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। তাণ্ডব চালানো হয় বেআইনিভাবে গজিয়ে ওঠা একের পর এক মাছের ভেড়িতেও । এমনকী, ভেড়ির ঠিক পাশে আলাঘরেও আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। বাদ যায়নি 'ফেরার' শাহজাহান ঘনিষ্ঠ আরেক নেতা উত্তম সর্দারের পোল্ট্রি ফার্মও। সেই তাণ্ডবের চিহ্ন এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেখানে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই থমথমে সন্দেশখালির 2 নম্বর ব্লকের আদিবাসী অধ্যুষিত একাধিক গ্রাম । অশান্তির জেরে বুধবার বিকাল থেকে ফেরি সার্ভিস সাময়িকভাবে বন্ধ থাকলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের চালু হয়েছে সন্দেশখালি ফেরিঘাটের ফেরি সার্ভিস ।
আরও পড়ুন :