সন্দেশখালি, 29 ফেব্রুয়ারি: শাহজাহানের পর এবার কি পালা তাঁর ভাই শেখ সিরাজউদ্দিনেরও ? তিনিও কি গ্রেফতার হবেন 'বেতাজ বাদশা' দাদার দেখানো পথে ? নাকি সন্দেশখালির 'বাঘ' শেখ শাহজাহানের মতো বেড়মজুর অঞ্চলের 'ত্রাস' সিরাজউদ্দিনের ক্ষেত্রেও পুলিশ ধীরে চলো নীতি নিয়ে চলবে ? সন্দেশখালি কাণ্ডের 'মাস্টারমাইন্ড' তৃণমূলের 'বাহুবলী' নেতা শাহজাহান পুলিশের জালে ধরা পড়তেই এ সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন মহলে । যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে সন্দেশখালিতে ।
'দাদা' শাহজাহানের মতো 'ভাই' সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধেও উঠেছে ভুরি ভুরি অভিযোগ । জবর দখল জমি লুঠ, কৃষিজমি কব্জা করে ইচ্ছে মতো ভেড়ি বানানো, আবাস ও জব কার্ডের টাকা হাতিয়ে নেওয়া । সবেতেই 'বাদশা' দাদার পথ অনুসরণ করেছিলেন 'ভাই' সিরাজও । অল্পদিনেই তিনিও বেড়মজুর অঞ্চলের 'ত্রাস' হয়ে ওঠেন । তাঁর বেপরোয়া দৌরাত্ম্য এবং জুলুমবাজিতে একপ্রকার সন্ত্রস্ত হয়ে থাকত গোটা অঞ্চল । এলাকায় সিরাজ 'ভাই'য়ের দাপট এতটাই ছিল যে, প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা, ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন গ্রামবাসীরা । বুকে একরাশ আতঙ্ক নিয়েই সবসময় দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হত তাঁদের ।
সূত্রের খবর, বেড়মজুর অঞ্চলে কমপক্ষে 250 বিঘা জমি লুঠ করার অভিযোগ রয়েছে এলাকার 'মাফিয়া' শেখ সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে । সবটাই করা হয়েছে গ্রামবাসীদের হুমকি এবং মারধর দিয়ে । এমনটাই অভিযোগ অধিকাংশ গ্রামবাসীর । সেই জবরদখল করা জমি ফেরতের দাবিতেই প্রায় তিনদিন ধরে জ্বলেছে সন্দেশখালির বেড়মজুর অঞ্চল । ঝাঁটা, লাঠি হাতে নিয়ে পথে নেমে চলে প্রতিবাদ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ । তার জেরে ভেড়ির আলাঘরে হয় অগ্নিসংযোগ ৷ কিছুই বাদ যায়নি শাহজাহানের ভাই সিরাজউদ্দিনের গ্রেফতারের দাবি ঘিরে ।
তবে তাঁর গ্রেফতারি চেয়ে যখন ক্ষোভে ফুঁসছেন বেড়মজুরের মানুষজন, ঠিক তখনই মাঠে নামে পুলিশ । বেড়মজুর বাজারের কাছে খোলা হয় সহায়তা কেন্দ্র । যেখানে গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক অভিযোগপত্র জমা পড়েছে । যার মধ্যে শাহজাহানের 'গুণধর' ভাই শেখ সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধেই একশোর বেশি জমি সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের সহায়তা কেন্দ্রে । প্রাথমিক তদন্তে সেই অভিযোগের সত্যতা মেলায় শেষ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করা হয় সন্দেশখালি থানাতে ।
এ দিকে, সন্দেশখালিকাণ্ডের নাটের 'গুরু' শেখ শাহজাহান 55 দিন ধরে কোন দুর্গে লুকিয়ে ছিলেন ? এ নিয়ে যখন চর্চা বাড়ছিল রাজনীতির অন্দরে, তখনই ঠিক 56 দিনের মাথায় মিনাখাঁ থানা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে । সাংবাদিক সম্মেলনেও বিষয়টি তুলে ধরেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার । অর্থাৎ এই ক'দিন সন্দেশখালির 'বাঘ' যে নিজের ডেরাতেই ছিলেন, তা একপ্রকার স্পষ্ট বলে মনে করছে বিরোধীরা ৷
তাহলে কি দাদার মতো ভাই সিরাজউদ্দিনও এলাকাতেই রয়েছেন ? তাঁর গতিবিধিও কি পুলিশের নখদর্পণে ? সিরাজউদ্দিনের গ্রেফতার হওয়া কি স্রেফ সময়ের অপেক্ষা ? এই সমস্ত যাবতীয় প্রশ্নই এখন চর্চার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে সন্দেশখালির মানুষের কাছে । যদিও তার উত্তর মিলবে একমাত্র বেড়মজুরের 'ত্রাস' শেখ সিরাজউদ্দিন গ্রেফতার হলেই !
আরও পড়ুন: