মালদা, 26 ফেব্রুয়ারি: বাবরি, জ্ঞানবাপীর পর এবার কি মালদার আদিনা মসজিদ ? কয়েকদিন ধরেই এই প্রশ্নেই উত্তাল মালদা-সহ গোটা রাজ্য৷ সম্প্রতি আদিনা মসজিদে এসে বৃন্দাবনের সাধু হিরণ্ময় গোস্বামী দাবি করেন, আদিনা মসজিদ আসলে 'আদিনাথ মন্দির' ৷ সেই ভিডিয়ো ক্লিপ ইতিমধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল ৷ যদিও ইটিভি ভারত সেই ভিডিয়ো ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি ৷ ওই ক্লিপে হিরণ্ময় গোস্বামীর সঙ্গে নবীনচন্দ্র পোদ্দার নামে এক পুলিশকর্মীকে তর্ক করতেও দেখা গিয়েছে ৷ ওই পুলিশকর্মীর বাধাকে তোয়াক্কা না করে ঐতিহাসিক সেই সৌধে পড়ে থাকা এক প্রস্তরখণ্ডকে শিবলিঙ্গ দাবি করে পুজো করেন ওই সাধু ৷ বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই কঠোর হয়েছে প্রশাসন ও পুলিশ ৷ আদিনা মসজিদে ঢুকতে জারি করা হয়েছে কঠোর নির্দেশিকা ৷ সৌধের ভিতরে ছবি তোলার উপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে ৷ সংবাদমাধ্যমের প্রবেশের উপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে ৷
আদিনা মসজিদ নাকি মন্দির, তা নিয়ে বিতর্ক অবশ্য বহুদিন থেকেই ৷ বছর তিনেক আগেও হিন্দু মহাসভার তরফে দাবি করা হয়েছিল, আদিনা মসজিদ আসলে 'আদিনাথ মন্দির' ৷ তারপর অবশ্য বিষয়টি থিতিয়ে যায় ৷ এই মসজিদের ইতিহাস নিয়েও দ্বিমত রয়েছে ৷ ইতিহাসবিদ সুখময় মুখোপাধ্যায়ের মতে, প্রাচীন বাংলার সুলতান সিকান্দার শাহ এই মসজিদ নির্মাণ করেন ৷ 1373 সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ৷ শেষ হয় 1375 সালে ৷ সেই সময় দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ ছিল এটি ৷ পরবর্তীতে রাজা গণেশ এই মসজিদ দখল করে কাছারি হিসাবে ব্যবহার করতেন ৷ আবার কালীপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মধ্যযুগে বাঙ্গালা’ গ্রন্থে উলটো মতবাদও পাওয়া যায় ৷ ফলে আদিনা মসজিদের আসল ইতিহাস কী, তা নিয়ে ধন্ধ থেকেই যায় ৷
এই পরিস্থিতিতে নতুন করে হিরণ্ময় গোস্বামীর দাবি নিয়ে আদিনা মসজিদ লাগোয়া কুতুবশহর জামে মসজিদের ইমাম মহম্মদ জামিল আখতার বলেন, “ইতিহাস থেকে আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, আদিনা মসজিদ নির্মাণের বুনিয়াদ তৈরি করেন হাজি ইলিয়াস বাদশা ৷ তাঁর মৃত্যুর পর তাঁরই ছেলে সুলতান সিকান্দার মসজিদ নির্মাণের কাজ শেষ করেন ৷ সেই সময় এই এলাকায় মানুষের বসবাস বেশি ছিল ৷ সেকারণেই এখানে মসজিদ নির্মিত হয়েছিল ৷ পরবর্তীতে প্রবল ভূমিকম্পে এখানে বসবাসকারী মানুষজন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়৷ মসজিদও বন্ধ হয়ে যায় ৷ তারপর কেন্দ্রীয় সরকার আদিনা মসজিদ অধিগ্রহণ করে ৷ সেখানে মুসলিমরা আর নমাজ পড়ে না, হিন্দুরাও পুজো করে না ৷ আমরা সবাই জানি, এটা মসজিদ ৷ হঠাৎ মোবাইলে দেখলাম, একজন ওখানে পুজোপাঠ করছেন ৷ সরকারি লোক তাঁকে বাধা দেন ৷ ওখানকার কিছু হিন্দু ভাইও প্রতিবাদ করেছেন ৷ এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতি জড়িয়ে আছে কি না, সেটা বলতে পারব না ৷ আমরা শুধু শান্তি চাই ৷ ওটা সরকারের হাতেই থাকুক ৷”
তৃণমূলের দাবি, ভোটের মুখে এনিয়ে জিগির তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি ৷ দলের জেলা সহসভাপতি দুলাল সরকার বলেন, “যে কোনও ভোটের আগে মন্দির-মসজিদের জিগির তোলা একটা রাজনৈতিক দলের অভ্যাস ৷ তাই বিজেপি রামকে রাস্তায় এনে পুজো করে ৷ ইতিহাস ঘেঁটে সরকার যদি আদিনায় মন্দির থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে, তবে পরিবর্তন করতে পারে ৷ তার জন্য অনেক প্রক্রিয়া রয়েছে ৷ কিন্তু ভোটের মুখে এভাবে জিগির তোলা ঠিক নয় ৷" অন্যদিকে, বিজেপির দক্ষিণ মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ বলেন, “এই বিষয় নিয়ে বিজেপির কোনও রাজনৈতিক অ্য়াজেন্ডা নেই ৷ বিষয়টি সামাজিক ৷ পরাধীন ভারতবর্ষে আমাদের সংস্কৃতি, গরিমার উপর অনেক আঘাত এসেছে ৷ নতুন ভারত সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছে ৷ রাম তো শুধু হিন্দুদের দেবতা নয়, তিনি রাষ্ট্রের আদর্শ ৷ আজ মানুষ জেগেছে ৷ শুধু আদিনা নয়, যেসব ঐতিহাসিক জায়গায় পরাধীনতার কালে কলঙ্ক লেপন করা হয়েছিল, তার মর্যাদা ফেরানোর প্রয়াস মানুষ করবেই ৷ একে দমিয়ে রাখা যাবে না ৷"
আরও পড়ুন
জ্ঞানবাপীর 'ব্যাস তেহখানায়' পুজোর নির্দেশ বহাল রাখল এলাহাবাদ হাইকোর্ট
দ্বারকার কাছে সমুদ্রগর্ভে বিশেষ পুজো মোদীর, করলেন স্কুবা ডাইভও