ETV Bharat / state

কলকাতায় হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী সংস্কার প্রকল্প, কাজ শুরু নতুন বছরেই

কেন্দ্রের 'নমামি গঙ্গে' প্রকল্পের অধীনে হবে আদিগঙ্গা সংস্কার ও পলি নিষ্কাশন। সেই কাজ শুরু হবে আগামী বছরের শুরুতেই ৷

Adi Ganga Revival Plan
বৃহত্তম নদী সংস্কার প্রকল্প (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 6, 2024, 1:25 PM IST

কলকাতা, 6 নভেম্বর: কেন্দ্রের 'নমামি গঙ্গে' প্রকল্পের অধীনে গঙ্গা নদীর আমূল সংস্কার করা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই প্রকল্পের অধীনে বিহারের পর এ রাজ্যে কলকাতায় আদিগঙ্গা সংস্কার ও পলি নিষ্কাশন করা হবে। 'নমামি গঙ্গে' অধীনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প এই আদিগঙ্গা সংস্কার। জানা গিয়েছে, সেই কাজ শুরু হবে আগামী বছরের শুরুতেই ৷

সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আদিগঙ্গা মজে যাওয়া খালের রূপ নিয়েছে ৷ জোয়ারের জলে প্লাবিত হয় দুই পাড়ের এলাকা ৷ এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ার আশপাশেও সেই জল ছবি দেখা মেলে। পাশাপাশি এই জলে দূষণের মাত্রাও লাগামহীন। দু'পাড়ের লোকজন যথেচ্ছ আবর্জনা ফেলে এই জলে। যার ফলে অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠচ্ছে পরিবেশ। ফলে দূষণের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে দুই পাড় বসবাসকারীদের উপর। এই আদি গঙ্গার দৈর্ঘ্য প্রায় 15.5 কিলোমিটার ৷ আর তার দুই পা লাগোয়া আছে কলকাতা কর্পোরেশনের 29টি ওয়ার্ড ও সোনারপুর পুরসভার তিনটি ওয়ার্ড। বিপুল সংখ্যক লোকের বসবাস।

দূষণ যে চরম মাত্রায় পৌঁছেছে তাতে উদ্বেগও বাড়ছে ৷ শুধু আদিগঙ্গা নয়, গঙ্গাদূষণ নিয়েও গোটা দেশের পরিবেশ কর্মীরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি পলি তোলা না-হওয়ায় একেবারেই নাব্যতা হারিয়েছে আদিগঙ্গা। এই পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকার গঙ্গা নদী রক্ষায় 'নামামি গঙ্গে' প্রকল্প চালু করেছে। সেই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন রাজ্যে গঙ্গা নদী পরিষ্কার করা, জলের গুণগতমান ঠিক করা, নাব্যতা ফেরানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেই প্রকল্পের আওতাধীন বিহারে সংস্কার ও পলি নিষ্কাশনের জন্য কমবেশি 800 কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে । এই প্রকল্পে পলি নিষ্কাশন ও সংস্কার কাজে দেশের সব থেকে বেশি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বিহারে। তারপরেই পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আদি গঙ্গা প্রকল্প।

দূষিত, মজে যাওয়া আদি ঙ্গা হাল ফেরাতে নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। তার জন্য খরচ হবে প্রায় 753 কোটি টাকা। দফায় দফায় কাজ হবে।
এই প্রকল্প আদি গঙ্গার নাব্যতা বৃদ্ধি করার জন্য 15.5 কিলোমিটার পলি নিষ্কাশন করা হবে। রাজ্যের উদ্যোগে ইতিমধ্যে কুদঘাট পর্যন্ত 9 কিলোমিটার পলি নিষ্কাশন হয়েছে ৷ আরও 6 কিলোমিটার কাজ হবে ৷ আদি গঙ্গার উপর যতগুলি সেতু আছে সেগুলো সংস্কার করে রং করা হবে। লাগানো হবে জালও । যাতে কেউ আবর্জনা না ফেলতে পারেন। একই কারণে দুই পাড়ের 31 কিলোমিটার লোহার জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হবে।

রাজ্যের সহায়তায় ইতিমধ্যে 7 কিলোমিটার কাজ করা হয়েছে। দুই পাড়ের মোট 80টি ঘাটের সংস্কার হবে। আশপাশের ওয়ার্ডের নিকাশি দূষিত জল যাতে সরাসরি না-পড়ে, আদি গঙ্গায় তাই তিনটি নিকাশি জল পরিশোধন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে ৷ 23টি পাম্পিং স্টেশন, 74টি পেন স্টক গেট। 50 কিলোমিটারের বেশি নিকাশি পাইপ লাইন তৈরি হচ্ছে ৷ এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আরও বড় একটি কাজ হবে সেটা হল, দই ঘাটে হবে 137 কোটি টাকা খরচ করে লক গেট ৷

এই সব কাজ শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় তিন বছরের বেশি সময় ৷ কলকাতা কর্পোরেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, টেন্ডার হয়ে গিয়েছে এই কাজের। জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হবে ৷ এই কাজ সম্পন্ন হলে আদিগঙ্গা লাগোয়ো 32টি ওয়ার্ডের মানুষ জমা জলের কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ফিরবে দুই ধারে ৷ ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কমবে এলাকায় ৷ ব্যারেজের ফলে জোয়ার-ভাটা সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। যার জেরে বান এলে ভাসবে না মুখ্যমন্ত্রী বাসভবন-সহ আশেপাশের এলাকা। নিকাশি জল পরিষেধনের ফলে জলের গুণমান বৃদ্ধি পাবে।

এই প্রসঙ্গে কলকাতা কর্পোরেশনের এক উচ্চদের আধিকারিক বলেন, "গঙ্গার উপর আমাদের জীবনের বড় অংশ নির্ভরশীল। তাই গঙ্গা রক্ষা করতে হবে। আমরা মানুষকে সচেতন করার জন্য গঙ্গা উৎসব করি প্রতি বছর। সাইকেল ব়্যালি থেকে লিফলেট বিলি হয়। বসে আঁকো প্রতিযোগিতা হয় বিভিন্ন স্কুলে। কেন্দ্রের অর্থ সাহায্যে এই প্রকল্পের কাজ আরও এগোবে ৷ এই কাজ হলে আদি গঙ্গার আমূল পরিবর্তন হবে। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আশেপাশে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষের।"

পড়ুন: ছটের আগে তৎপর প্রশাসন, ফের বন্ধ কলকাতার দুই সরোবর

কলকাতা, 6 নভেম্বর: কেন্দ্রের 'নমামি গঙ্গে' প্রকল্পের অধীনে গঙ্গা নদীর আমূল সংস্কার করা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই প্রকল্পের অধীনে বিহারের পর এ রাজ্যে কলকাতায় আদিগঙ্গা সংস্কার ও পলি নিষ্কাশন করা হবে। 'নমামি গঙ্গে' অধীনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প এই আদিগঙ্গা সংস্কার। জানা গিয়েছে, সেই কাজ শুরু হবে আগামী বছরের শুরুতেই ৷

সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আদিগঙ্গা মজে যাওয়া খালের রূপ নিয়েছে ৷ জোয়ারের জলে প্লাবিত হয় দুই পাড়ের এলাকা ৷ এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ার আশপাশেও সেই জল ছবি দেখা মেলে। পাশাপাশি এই জলে দূষণের মাত্রাও লাগামহীন। দু'পাড়ের লোকজন যথেচ্ছ আবর্জনা ফেলে এই জলে। যার ফলে অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠচ্ছে পরিবেশ। ফলে দূষণের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে দুই পাড় বসবাসকারীদের উপর। এই আদি গঙ্গার দৈর্ঘ্য প্রায় 15.5 কিলোমিটার ৷ আর তার দুই পা লাগোয়া আছে কলকাতা কর্পোরেশনের 29টি ওয়ার্ড ও সোনারপুর পুরসভার তিনটি ওয়ার্ড। বিপুল সংখ্যক লোকের বসবাস।

দূষণ যে চরম মাত্রায় পৌঁছেছে তাতে উদ্বেগও বাড়ছে ৷ শুধু আদিগঙ্গা নয়, গঙ্গাদূষণ নিয়েও গোটা দেশের পরিবেশ কর্মীরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি পলি তোলা না-হওয়ায় একেবারেই নাব্যতা হারিয়েছে আদিগঙ্গা। এই পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকার গঙ্গা নদী রক্ষায় 'নামামি গঙ্গে' প্রকল্প চালু করেছে। সেই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন রাজ্যে গঙ্গা নদী পরিষ্কার করা, জলের গুণগতমান ঠিক করা, নাব্যতা ফেরানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেই প্রকল্পের আওতাধীন বিহারে সংস্কার ও পলি নিষ্কাশনের জন্য কমবেশি 800 কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে । এই প্রকল্পে পলি নিষ্কাশন ও সংস্কার কাজে দেশের সব থেকে বেশি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বিহারে। তারপরেই পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আদি গঙ্গা প্রকল্প।

দূষিত, মজে যাওয়া আদি ঙ্গা হাল ফেরাতে নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। তার জন্য খরচ হবে প্রায় 753 কোটি টাকা। দফায় দফায় কাজ হবে।
এই প্রকল্প আদি গঙ্গার নাব্যতা বৃদ্ধি করার জন্য 15.5 কিলোমিটার পলি নিষ্কাশন করা হবে। রাজ্যের উদ্যোগে ইতিমধ্যে কুদঘাট পর্যন্ত 9 কিলোমিটার পলি নিষ্কাশন হয়েছে ৷ আরও 6 কিলোমিটার কাজ হবে ৷ আদি গঙ্গার উপর যতগুলি সেতু আছে সেগুলো সংস্কার করে রং করা হবে। লাগানো হবে জালও । যাতে কেউ আবর্জনা না ফেলতে পারেন। একই কারণে দুই পাড়ের 31 কিলোমিটার লোহার জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হবে।

রাজ্যের সহায়তায় ইতিমধ্যে 7 কিলোমিটার কাজ করা হয়েছে। দুই পাড়ের মোট 80টি ঘাটের সংস্কার হবে। আশপাশের ওয়ার্ডের নিকাশি দূষিত জল যাতে সরাসরি না-পড়ে, আদি গঙ্গায় তাই তিনটি নিকাশি জল পরিশোধন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে ৷ 23টি পাম্পিং স্টেশন, 74টি পেন স্টক গেট। 50 কিলোমিটারের বেশি নিকাশি পাইপ লাইন তৈরি হচ্ছে ৷ এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আরও বড় একটি কাজ হবে সেটা হল, দই ঘাটে হবে 137 কোটি টাকা খরচ করে লক গেট ৷

এই সব কাজ শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় তিন বছরের বেশি সময় ৷ কলকাতা কর্পোরেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, টেন্ডার হয়ে গিয়েছে এই কাজের। জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হবে ৷ এই কাজ সম্পন্ন হলে আদিগঙ্গা লাগোয়ো 32টি ওয়ার্ডের মানুষ জমা জলের কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ফিরবে দুই ধারে ৷ ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কমবে এলাকায় ৷ ব্যারেজের ফলে জোয়ার-ভাটা সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। যার জেরে বান এলে ভাসবে না মুখ্যমন্ত্রী বাসভবন-সহ আশেপাশের এলাকা। নিকাশি জল পরিষেধনের ফলে জলের গুণমান বৃদ্ধি পাবে।

এই প্রসঙ্গে কলকাতা কর্পোরেশনের এক উচ্চদের আধিকারিক বলেন, "গঙ্গার উপর আমাদের জীবনের বড় অংশ নির্ভরশীল। তাই গঙ্গা রক্ষা করতে হবে। আমরা মানুষকে সচেতন করার জন্য গঙ্গা উৎসব করি প্রতি বছর। সাইকেল ব়্যালি থেকে লিফলেট বিলি হয়। বসে আঁকো প্রতিযোগিতা হয় বিভিন্ন স্কুলে। কেন্দ্রের অর্থ সাহায্যে এই প্রকল্পের কাজ আরও এগোবে ৷ এই কাজ হলে আদি গঙ্গার আমূল পরিবর্তন হবে। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আশেপাশে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষের।"

পড়ুন: ছটের আগে তৎপর প্রশাসন, ফের বন্ধ কলকাতার দুই সরোবর

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.