কলকাতা, 21 জুন: লোকসভা ভোটে এবার বহরমপুর থেকে পরাজিত হয়েছেন তিনি ৷ রাজ্যে বামেদের সঙ্গে জোটের পরও ভরাডুবি হয়েছে দলের ৷ আর রাজ্যে দলের এই বিপর্যয়ের পর থেকেই জল্পনা বাড়ছিল, তবে কি এবার প্রদেশ সভাপতি থেকেও সরবেন অধীর চৌধুরী ? সেই জল্পনাই কার্যত বাস্তবায়িত হল ৷ শুক্রবার অধীর চৌধুরী সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দিলেন, তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন ৷ আর এ ক্ষেত্রে তাঁর যুক্তি, তিনি আদতে অস্থায়ী সভাপতি ছিলেন ৷
10 ফেব্রুয়ারি 2010 সাল থেকে অধীরঞ্জন চৌধুরী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে ছিলেন। দীর্ঘ 10 বছরের বেশি সময় তিনি রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতির পদ সামলেছেন ৷ লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতাও ছিলেন অধীর ৷ এর আগে মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি পদেই ছিলেন তিনি ৷ 25 বছর বহরমপুরের সাংসদ ছিলেন ৷ ওই কেন্দ্রে রীতিমতো অপরাজেয় হয়ে উঠে ছিলেন অধীর ৷ চলতি লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের কাছে হেরে যান তিনি ৷ এরপরই অধীরকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয় ৷ যেভাবে ভোটে বামেদের সঙ্গে জোট করে মমতা বিরোধিতায় সরব হয়েছিলেন অধীর তাতে প্রশ্ন উঠেছিল, আদৌ তাঁকে প্রদেশ সভাপতি পদে রাখবে তো হাইকমান্ড ? সেই জল্পনার মাঝেই ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবান্নে এসে বৈঠকও করেন কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম ৷ আর সেই বৈঠকের 24 ঘণ্টা কাটতে না-কাটতে দলের রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন অধীর ৷
সারা দেশে দল ভালো ফল করলেও বাংলায় বিপর্যয় হয়েছে কংগ্রেসের ৷ দুটি থেকে একটি আসনে নেমে এসেছে হাত শিবির ৷ এই বিপর্যয় স্বাভাবিকভাবে চাপের মুখে পড়েছিলেন অধীর চৌধুরী। চরম তৃণমূল এবং মমতা বিরোধিতা তার উপর বামেদের সঙ্গে জোট করে চলার পক্ষেই বারবার সওয়াল করেছেন তিনি। ফল খারাপ হওয়াতে দলের বিরোধী অংশের চাপও পড়ছিল তাঁর উপর। এরপরই ভোটের ফলের দায় কাঁধে নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে চিঠি পাঠান রাহুল গান্ধির কাছে। চিঠি দেন কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের কাছে। যদিও সেই ইস্তফা পত্র গ্রহণ করা হয়েছে বলে দিল্লির তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
এদিন প্রদেশ কংগ্রেসের বৈঠক শেষে সেই কথা নিজেই জানান অধীর চৌধুরী। পাশাপশি তিনি এও বলেন, "মল্লিকার্জুন খাড়গে সভাপতি হওয়ার পরে নতুন করে কোথাও কোনও প্রদেশ সভাপতি নিয়োগ হয়নি। ফলে আমিও অস্থায়ী সভাপতি ছিলাম।" একই সঙ্গে, এদিন বৈঠকে দাবি ওঠে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে সংগঠন। ফলে শুধু প্রদেশ সভাপতি পদেই নয়, বিভিন্ন শাখা সংগঠনের পদ, জেলা সভাপতি পদেও আনতে হবে আমুল রদবদল ৷ প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর, রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি পদে বসতে পারেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। সভাপতির দৌঁড়ে আছেন সদ্য জয়ী মালদহ দক্ষিণের সংসদ ইশা খান চৌধুরীও।