কলকাতা, 9 অগস্ট: বিধানসভায় শাসক-বিরোধীদের বিরোধিতার চেনা ছবি বদলে দিলেন তিনি। যাঁদের এক জায়গায়, একসঙ্গে দেখা প্রায় দুষ্কর তাঁরাই শুক্রবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে একসঙ্গে শেষ বিদায় জানালেন ৷ এদিন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষ বারের মতো বিধানসভায় নিয়ে আসা হয় ৷ সেখানেই এক ফ্রেমে দেখা গেল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে।
এদিন সকালে পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বুদ্ধবাবুর পার্থিব দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিধানসভায় ৷ তাঁর দেহ শকটের সঙ্গে বিধানসভায় এসেছিলেন প্রাক্তন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। এদিন বিধানসভাতেই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য-সহ শাসক এবং বিরোধী দলের নেতারা।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শুভেন্দু ৷ প্রয়াত নেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন ছিল তা তুলে ধরেন বিরোধী দলনেতা ৷ ফিরে যান 2001 সালের ঘটনায় ৷ সেবার বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যান শুভেন্দু ৷ প্রার্থী হিসেবে তিনি নিরাপত্তা পেয়েছিলেন ৷ ভোটে হেরে যাওয়ার পর নিরাপত্তা ছেড়ে দেন ৷ কিন্তু শুভেন্দুর বাবা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিশির অধিকারীকে বুদ্ধদেব বলেন, শুভেন্দুর নিরাপত্তা ছাড়া উচিত নয় ৷ শুধু বলাই নয়, নিজেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেন ৷
প্রসঙ্গত, 1977 সালে প্রথমবার বিধায়ক হয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৷ সেই 77 থেকে পরপর দু'বার কাশীপুর বেলগাছিয়া কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে 82 সালে কাশীপুরে হেরে যান ৷ এরপর 1987 সাল থেকে টানা ছ'বার যাদবপুর থেকে জয়ী হয়েছিলেন বুদ্ধদেব। 2011 সালে পালাবদলের বছরে এই যাদবপুরেই প্রাক্তন পুলিশকর্তা মনীশ গুপ্তের কাছে হারতে হয়েছিল তাঁকে। এরপর শেষবারের মতো এদিন বিধানসভায় নিয়ে আসা হয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নশ্বর দেহ ৷ তাঁর সঙ্গেই ছিলেন সন্তান সুচেতন এবং স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ৷
বিধানসভার অভ্যস্ত দলাদলি, রাজনৈতিক কলহের ছবি দেখতে ৷ সেখানে ধরা পড়ল অন্য ছবি ৷ এদিন দেখা গেল একই সারিতে দাঁড়িয়ে রইলেন শাসক ও বিরোধী দলের তাবড় নেতারা। এদিন অভিষেক ও শুভেন্দু ছাড়াও তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধিরাও হাজির ছিলেন। বিধানসভার সামনে দেখা গেল লাল পতাকার সারি। লাল ফুল আর পতাকায় প্রিয় নেতাকে বিদায় জানাল বিধানসভা। বিধানসভার এই ছবি আরও একবার বিশিষ্ট কবি অমিয় চক্রবর্তী সেই লাইনটিই মনে করিয়ে দিল-"মেলাবেন তিনি মেলাবেন"। রাজনৈতিক বৈরিতা সরিয়ে বিধানসভার চৌহদ্দিতে এক জায়গায় এনে দিয়ে গেলেন শাসকবিরোধী সকলকেই ৷