কলকাতা, 29 জানুয়ারি: রাজ্যে 'ইন্ডিয়া' জোট নিয়ে একটা অনিশ্চয়তার সম্ভাবনা গত কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছিল। দিনকয়েক আগেই এই নিয়ে মুখ খোলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়ে দেন, রাজ্যে কারও সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই তৃণমূলের। আগামী লোকসভা নির্বাচনে একাই লড়াই করবে তৃণমূল। তখন থেকে নানাভাবে জোট নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করা হয়েছে ৷ এবার এই ব্যাপারে মুখ খুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন রাজ্যে জোট এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে, তা খোলসা করলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই জোট ভেস্তে যাওয়ার পিছনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন। এদিন সেসব নিয়েই খোলসা করে কথা বললেন অভিষেক। রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেস্তে যাওয়ার নেপথ্যে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের আচরণকেই দায়ী করলেন তিনি। একইসঙ্গে অধীর চৌধুরীকে 'ট্রোজেন হর্স' আখ্যা দিলেন অভিষেক। সোমবার জোট থেকে শুরু করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অভিষেক বলেন, "আজ কংগ্রেস বলছে মমতা ছাড়া ইন্ডিয়া জোট ভাবতে পারছি না। কিন্তু গত সাত মাসে কংগ্রেসের কোন নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলতে এসেছে ? এই সাত মাসের মধ্যে প্রদেশের কোন নেতা বলেছেন আমরা চাই তৃণমূল কংগ্রেস আমাদের সঙ্গে এসে কথা বলুক ! এই ছয় থেকে সাত মাসে কতবার কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছে ? কতবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে আক্রমণ করেছে, আর কতবার বিজেপিকে আক্রমণ করেছে ?"
এদিন কংগ্রেসের তরফে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন চাওয়া নিয়েও প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকেও কটাক্ষ করা হয়েছে। অভিষেক বলেন, "কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্ব বলছে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন দরকার। কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্ব বলছে ইডি-সিবিআই খুব ভালো কাজ করছে। কিন্তু দিল্লিতে তারা ভালো কাজ করছে না। প্রদেশ নেতৃত্ব বলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বি-টিম। বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির ট্রোজান হর্স। মানুষ আজকে বুঝতে পারছে বিজেপির বিটিম কে! কে বিজেপির ট্রোজান হর্স।"
গত ছয় থেকে সাত মাসে রাজ্যে কংগ্রেসের ভূমিকার সমালোচনা করতে গিয়ে অভিষেক বলেন, "গত 210 দিনে কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্ব কতবার ক'টা সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপিকে আক্রমণ করেছে! মানুষের 100 দিনের টাকা বন্ধ, কটা সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছে ? কতবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছেন এই 22 লক্ষ মানুষের টাকা আপনার আটকে রাখতে পারেন না জোর জবরদস্তি করে। আপনারা ছাড়ুন। কতবার তারা বলেছেন বাংলার প্রতি নরেন্দ্র মোদি সরকার বঞ্চনা করছে ? কতবার এর জন্য বিজেপিকে ধিক্কার জানিয়েছে ?" অভিষেকের এদিন প্রশ্ন, "বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে কার লাভ, বিজেপির লাভ নাকি, তৃণমূল কংগ্রেসের লাভ ? তাহলে কংগ্রেসের জোট বন্ধু কে ? প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি যখন বিজেপির লাভের কথা বলেন, তখন ট্রোজান হর্সটা কে!"
এদিন অধীর চৌধুরী নিয়ে বলতে গিয়ে অভিষেক সরাসরি বলেছেন, "আপনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি একই সঙ্গে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা। আর আপনি বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতা থাকলে আমার বিরুদ্ধে লড়ুক। ছয় মাস ধরে আমরা এসবের বিরুদ্ধে একটাও কথা বলেছি! 210 দিন ধরে আমরা একটাও মন্তব্য করিনি। তবে ধৈর্যেরও একটা সীমা থাকে। যে মহিলা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তাকে আপনি বলছেন, চ্যালেঞ্জ করছি আমার বিরুদ্ধে লড়ুন। এ কথা কে বলছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলছেন এবার মানুষ ঠিক করুক। আমরা ছ'মাস আগে বলেছিলাম আমরা ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে আছি। আজও মুখ্যমন্ত্রী সে কথাই বলছেন। আমাদের কোনো ইগো নেই। সে জোটে কে থাকল না থাকল, এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।"
আরও পড়ুন: