কলকাতা, 7 নভেম্বর: প্রায় দু’বছর পর জামিন পেয়ে বীরভূমে ফিরেছেন অনুব্রত মণ্ডল ৷ লালমাটির জেলায় তিনিই আবার ঘাসফুলের কান্ডারি হয়ে উঠবেন, এমনটাই মনে করেন অনেকে৷ কিন্তু সেটা কি হবে ? জামিন পাওয়ার পর প্রায় মাস দুয়েক কেটে গিয়েছে, এখনও বীরভূমের সভাপতি প্রত্যাবর্তন হয়নি অনুব্রত মণ্ডলের ৷ তার উপর বৃহস্পতিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মতামত’ সামনে আসার পর বিষয়টি নিয়ে জটিলতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত মিলল ৷
এদিন জন্মদিন ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের । সেই উদ্দেশ্যে অসংখ্য সমর্থক-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন কালীঘাটে ৷ অনুগামীদের সঙ্গে দেখা করার পর সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অভিষেক ৷ সেখানে তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে যেহেতু বীরভূমে লোকসভা নির্বাচনে কোর কমিটির পারফরম্যান্স ভালো, তাই তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, বীরভূমের দায়িত্ব কোর কমিটির হাতে থাকলেই ভালো । যদিও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন এটা তাঁর ব্যক্তিগত মত ।
উল্লেখ্য, 2022 সালের 11 অগস্ট গরুপাচার মামলায় গ্রেফতার হন বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের তৎকালীন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ৷ মাসছয়েক পর তাঁর ঠিকানা হয় দিল্লির তিহাড় জেলে ৷ 2023 সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন ও 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় তিহাড়েই ছিলেন অনুব্রত ৷
এই সময়ের মধ্যে বীরভূমের সভাপতি পদে কাউকে বসায়নি তৃণমূল ৷ বরং কোর কমিটির হাতেই দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷ সেই কোর কমিটির নেতৃত্বেই দুই ভোটেই ভালো ফল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলেই কার্যত বীরভূমে কোর কমিটি রেখে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন অভিষেক ৷ তাঁর কথায়, লোকসভা নির্বাচনে ফল ভালো হয়েছে । দুই সংসদের লিড বেড়েছে ৷ অনুব্রত মণ্ডলকে জেলে পাঠিয়েছে । তাতেও কিছু হয়নি ।
তবে পারফরমেন্স নিয়ে অভিষেকের এই মতামত যে শুধু বীরভূম সম্পর্কে তা নয়, বরং সারা রাজ্যেই তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদলে পারফরমেন্সই শেষকথা হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি ৷ চোখের অস্ত্রোপচার করতে বিদেশে যাওয়ার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একগুচ্ছ সুপারিশ করে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক । তিনি জানিয়েছেন যে আনুগত্য নয়, পারফরমেন্সই শেষ কথা বলবে ।
এদিন তিনি জানান, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি যে সুপারিশ করেছেন, তাতে 35টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে কম করে দশ থেকে 12টির বেশি সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি বদলের সুপারিশ করেছেন ।
একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি এক কথার ছেলে । যা বলেন সে কথা রাখার চেষ্টা করেন । আগামী তিনমাসের মধ্যে এই পরিবর্তনগুলি দেখা যাবে । ইতিমধ্যেই সেই তিনমাস অতিবাহিত হয়েছে । তা নিয়েই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হয় ৷ তখন তিনি বলেন, ‘‘আমার কাজ আমি করে দিয়েছি । চোখে অস্ত্রোপচারের আগেই কোথায় কাকে বদল করা উচিত, সে ব্যাপারে নেত্রীকে রিপোর্ট দিয়ে গিয়েছি । হতে পারে উপ-নির্বাচন ও আর সাত-পাঁচ কারণে এই ব্যাপারে তিনি এখনও সিদ্ধান্ত নেননি ।’’
যতদূর জানা গিয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুপারিশের মধ্যে কলকাতা ছাড়া 125টা পুরসভায় রদবদলের প্রস্তাব রয়েছে । অভিষেকের বক্তব্যে স্পষ্ট যে সমস্ত পুরসভায় ফল খারাপ হয়েছে, সেক্ষেত্রে কাউন্সিলরের পাশাপাশি চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে ।
একই সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন আরজি করের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত সরকারের । এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের অন্যান্য দফতরগুলিতেও সংশোধন করা উচিত । তবে আরজিকরের ঘটনা নিয়ে এদিন সরাসরি বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন তিনি ৷ অভিষেকের কথায়, আরজি করের ঘটনায় বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলেও মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইনি । আরজি কর এর আন্দোলনে বামেরা সামনের সারিতে থাকলেও তিনি আরও জানিয়েছেন, 26-এর বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে সিপিএমের ভোট আরও কমবে ।