বারাসত, 12 নভেম্বর: রাত পোহালেই হাড়োয়া ও নৈহাটি কেন্দ্রের উপনির্বাচন । রক্তক্ষয়ী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এই দুই কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট করাতে কার্যত বদ্ধপরিকর নির্বাচন কমিশন । নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে সমস্ত রকম প্রস্তুতি নিয়েছে ।
প্রশাসন সূত্রে খবর, উত্তর 24 পরগনার এই দু’টি কেন্দ্রের জন্য মোট 28 কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে । বুথের বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে অবশ্য থাকছে রাজ্য পুলিশের কাঁধেই । সূত্রের খবর, এই দু’টি কেন্দ্রের জন্য প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি পুলিশ থাকছে । তবে, ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতেই । এছাড়া, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে কিউআরটি-র গাড়িও ঘুরবে এই দু’টি কেন্দ্রের অলিগলিতে ।
এর মধ্যে শুধুমাত্র হাড়োয়ার জন্যই থাকছে 15 কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী । শুধু হাড়োয়া কেন্দ্রের জন্য 15 কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন, এর আগে কখনও সেভাবে দেখা যায়নি । বিরোধী শিবিরের মতে, হাড়োয়ায় রক্তক্ষয়ী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই নির্বাচন কমিশনকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে । যদিও শাসক শিবিরের দাবি, কেন্দ্রীয় বাহিনী যত সংখ্যক মোতায়েন করা হোক, মানুষ ভোট দেবে তৃণমূলকেই ।
2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন হাজি নুরুল ইসলাম । সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল তাঁকে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করে । সেই ভোটে বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে 3 লক্ষ 33 হাজার ভোটে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন হাজি নুরুল ।
সাংসদ নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় সংসদীয় রীতি অনুয়ায়ী তাঁকে হাড়োয়ার বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছে ৷ অন্যদিকে, নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পার্থ ভৌমিক গত বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন । ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে পার্থকে এবার প্রার্থী করেছিল তৃণমূল । বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংকে প্রায় 65 হাজার ভোটে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তিনিও । ফলে তাঁকেও নৈহাটির বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছে । এর জেরে হাড়োয়া ও নৈহাটি, দুই বিধানসভা কেন্দ্রেই বিধায়ক শূন্য হয়ে পড়ে । জাতীয় নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি রাজ্যের অন্য চার বিধানসভার সঙ্গে এই দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনও ঘোষণা করে ।
উপনির্বাচনে হাড়োয়ায় তৃণমূল প্রার্থী করেছে সদ্য প্রয়াত সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামের মেজো ছেলে শেখ রবিউল ইসলামকে । তাঁর বিরুদ্ধে আইএসএফ, বিজেপি ও কংগ্রেস আলাদা করে প্রার্থী দিয়েছে । তবে, তুল্যমূল্য বিচারে এই কেন্দ্রে বিরোধী প্রার্থীর থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী শেখ রবিউল ইসলাম ।
এর নেপথ্যে বিগত ভোটের পরিসংখ্যান তুলে ধরছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা । 2021 সালের বিধানসভা ভোটে হাজি নুরুল আইএসএফ প্রার্থীকে প্রায় 81 হাজার ভোটে পরাজিত করেছিলেন । সেই ভোটে বিজেপি চলে গিয়েছিল তৃতীয় স্থানে । সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল শুধু হাড়োয়া কেন্দ্র থেকেই প্রায় 1 লক্ষ 11 হাজার ভোটে লিড পেয়ে এগিয়ে রয়েছে । স্বাভাবিকভাবে হাড়োয়ায় বিরোধীদের পিছনে ফেলে তৃণমূল অনেকটাই সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে । তবে, আইএসএফও লড়াই জারি রেখেছে ।
অন্যদিকে, নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে পার্থ ভৌমিকের ছেড়ে যাওয়া আসনে তৃণমূল এবার প্রার্থী করেছে তাঁরই ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা তথা নৈহাটি পৌরসভার পুরপারিষদ সনৎ দে-কে । উল্লেখযোগ্য বিষয়, একদা বামেদের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি নৈহাটিতে সিপিএম কোনও প্রার্থী দেয়নি এবারের উপনির্বাচনে । তাঁরা আসনটি এবার ছেড়ে দিয়েছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনকে । প্রার্থী হয়েছেন দেবজ্যোতি মজুমদার । রাজ্যে প্রথমবার বাম জোটের অন্তর্ভুক্ত হল লিবারেশন । বিজেপি ও কংগ্রেস এখানে আলাদা করে প্রার্থী দিয়েছে । তবে, দীর্ঘদিন ধরেই এই আসনটি তৃণমূলের দখলে থাকায় বিরোধীদের পিছনে ফেলে এখানে শাসকদল তৃণমূল প্রচারের হাওয়া পালে ব্যাপক ভাবে টেনেছে ।
নির্বাচনী পরিসংখ্যান বলছে 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক 18 হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করেছিলেন । লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের লিড ছিল 15 হাজারেরও বেশি । স্বভাবতই, গঙ্গাপাড়ের ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল নৈহাটিতে জয়ের ব্যাপারে তৃণমূল বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছে । তবে বিনাযুদ্ধে মাটি ছাড়তে নারাজ বিরোধীরাও ।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাড়োয়া বিধানসভার মোট ভোটার 2 লক্ষ 69 হাজার 103 জন । তার মধ্যে মহিলা ভোটার 1 লক্ষ 30 হাজার 393 জন । পুরুষ ভোটার 1 লক্ষ 38 হাজার 705 জন । ভোটগ্রহণে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার জন্য মোট 31টি সেক্টর করা হয়েছে । মোট বুথ 297টি । উত্তেজনাপ্রবণ বুথ 34টি । বুথে নিরাপত্তায় মোট 15 কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে । রাজ্য পুলিশের আধিকারিক ও কর্মী থাকছেন 1 হাজার 670 জন । মোট ভোটকর্মীর সংখ্যা 1 হাজার 116 জন। সঙ্গে 27টি কুইক রেসপন্স টিমের গাড়ি ঘুরবে গোটা হাড়োয়া বিধানসভা এলাকায় ।
অন্যদিকে, নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা 1 লক্ষ 93 হাজার 834 । পুরুষ ভোটার 96 হাজার 74 জন । মহিলা ভোটার 97 হাজার 752 জন । মোট বুথের সংখ্যা 210টি । ভোট পরিচালনার জন্য 13 কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকছে । সঙ্গে রাজ্য পুলিশের আধিকারিক ও কর্মী মিলিয়ে থাকছে এক হাজারেরও বেশি ।
এদিকে, শেষ বেলায় দু’টি কেন্দ্রের ডিসিআরসি সেন্টারে চূড়ান্ত ব্যস্ততা ভোট কর্মীদের মধ্যে । ইভিএম মেশিন-সহ কমিশনের প্রয়োজনীয় গাইডলাইন মেনে ইতিমধ্যে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের দিকে রওনা হয়ে গিয়েছেন ভোটের কাছে নিযুক্ত কর্মীরা ।
সবমিলিয়ে, দু’টি কেন্দ্রে অবাক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে সংকল্প নিয়েছে নির্বাচন কমিশন ।