মালদা, 3 সেপ্টেম্বর: রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কী হয় ! নিজের জীবন দিয়ে তার প্রমাণ দিলেন 26 বছরের যুবক ৷ রান্না পছন্দ না-হওয়ায় স্ত্রীর উপর রাগ করে কাচের শো-কেসে সজোরে ঘুষি মেরেছিলেন তিনি ৷ তাতে কেটে যায় তাঁর হাতের ধমনী ৷ তড়িঘড়ি যুবককে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে ৷ কিন্তু বাঁচানো যায়নি তাঁকে ৷ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় যুবকের ৷ সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে বামনগোলা ব্লকের প্রত্যন্ত ভুলকিমারি গ্রামে ৷ মৃত যুবকের নাম বিদ্যা বিশ্বাস ৷
পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানিয়েছেন, "এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি ৷ আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ অভিযোগ দায়ের হলে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে ৷"
মঙ্গলবার মালদা মেডিক্যালে যুবকের দেহের ময়নাতদন্ত করিয়েছে বামনগোলা থানার পুলিশ ৷ এই ঘটনায় শোকের আবহ গোটা এলাকায় ৷ ভুলকিমারি গ্রামে যুবকের দীর্ঘদিনের বাস ৷ পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন তিনি ৷ এক মাস আগে বেঙ্গালুরুতে কাজ করতে যান ৷ রবিবারই তিনি বাড়ি ফিরে আসেন ৷ প্রায় এক বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছে ৷ স্ত্রী অনিতা বিশ্বাস বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ৷ বাড়িতে বিদ্যার বাবা-মা থাকলেও তাঁরা স্বামী-স্ত্রী আলাদাই থাকতেন ৷
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রবিবার সন্ধে নাগাদ বিদ্যা বেঙ্গালুরু থেকে বাড়ি ফিরে আসেন ৷ সোমবার সকাল হতেই বেরিয়ে পড়েন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে ৷ প্রতিবারই ভিনরাজ্য থেকে ফেরার পর তিনি এমনটাই করতেন ৷ গতকাল বন্ধুদের সঙ্গে মদ্যপানও করেন তিনি ৷ বাড়ি ফিরে স্নান সেরে খেতে বসেন ৷ অনিতা তাঁকে খাবার বেড়ে দেন ৷ কিন্তু রান্না পছন্দ হয়নি বিদ্যার ৷ এ নিয়ে তিনি স্ত্রীকে বকাবকি শুরু করেন ৷ অনিতাও স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে দেন ৷
জানা গিয়েছে, দু'জনের সেই ঝামেলা একসময় বড় আকার নেয় ৷ তখনই উত্তেজনার বশে ঘরে থাকা কাচের শো-কেসে সজোরে ঘুষি চালিয়ে দেন বিদ্যা ৷ হাত কেটে দরদর করে রক্ত পড়তে শুরু করে তাঁর ৷ অত রক্ত দেখে ঘাবড়ে যান অনিতাও ৷ তিনি কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান বেঁধে দিয়ে রক্তপাত বন্ধ করার চেষ্টা করেন ৷ কিন্তু তাতে কাজ হয়নি ৷ ভয়ার্ত অনিতা চিৎকার শুরু করে দেন ৷ ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন ৷ প্রবল রক্তপাতে ততক্ষণে নেতিয়ে পড়েছেন বিদ্যা ৷ স্থানীয়রা তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানীয় বামনগোলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ কিন্তু কিছুক্ষণ চিকিৎসার পরেই মৃত্যু হয় বিদ্যার ৷ চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, ধমনী কেটে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্যই বিদ্যার মৃত্যু হয়েছে ৷ খবর পেয়ে বামনগোলা থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় ৷
অনিতার বক্তব্য,"সামান্য কারণে গতকাল আমাদের ঝগড়া হয় ৷ ও বাইরে থেকে ফিরে আসায় আমি যতটা পারি ভালো করে রান্না করেছিলাম ৷ কিন্তু সেই খাবার ওর পছন্দ হয়নি ৷ এ নিয়েই ঝগড়া শুরু ৷ একসময় ও ভীষণ উত্তেজিত হয়ে ওঠে ৷ আমাকে মারতে আসে ৷ আমি কোনওরকমে সরে গেলে ও শো-কেসে ঘুষি চালিয়ে দেয় ৷ হাত কেটে গিয়েছিল ৷ দেখি, ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে ৷ আমি ভয়ে চিৎকার শুরু করি ৷ পড়শিরা এসে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ বুঝতে পারিনি, সামান্য কারণে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে যাবে ৷"