বোলপুর, 17 ডিসেম্বর: এক বা দুই নয়, বল্লভপুর অভয়ারণ্যে একসঙ্গে গর্ভবতী 22টি হরিণ ৷ তাদের সুস্থ রাখতে পরিচর্যায় বিশেষ নজর দিয়েছে বনবিভাগ । সুস্থ শাবক প্রসবের জন্য বল্লভপুর অভয়ারণ্যে হরিণগুলিকে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসার মধ্যে রাখা হয়েছে ৷
এ বিষয়ে বোলপুর বন দফতরের রেঞ্জার জ্যোতিষ বর্মন বলেন, "এই অভয়ারণ্যে খুব ভালো সুস্থ হরিণের জন্ম হয় ৷ তাই আমরা গর্ভবতী হরিণদের বিশেষ নজরে রাখি ৷ চিকিৎসকও 15 দিন অন্তর অন্তর এসে দেখে যান ওইসব হরিণদের ৷ যা ওষুধ দিয়ে যান সেগুলো আমরা নিয়ম করে খাওয়াই ৷ এছাড়াও বনবিভাগের কর্মীরাও বিশেষ খেয়াল রাখেন গর্ভবতী হরিণদের ।"
হরিণ উদ্যান
1967 সালে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠিত বল্লভপুর অভয়ারণ্য ৷ এই অভয়ারণ্য হরিণ উদ্যান বলে পরিচিত ৷ চিত্রা হরিণ বা চিতল হরিণ সংরক্ষণের জন্য খ্যাত এই উদ্যান । রাজ্যের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হরিণ রয়েছে এখানে ৷ বাস্তুতন্ত্র ও খাদ্যচক্র রক্ষার্থে বল্লভপুর অভয়ারণ্যে থেকেই সর্বাধিক হরিণ জলদাপাড়া, গরুমারা, বক্সা জাতীয় উদ্যানে হরিণ নিয়ে যাওয়া হয় ৷ তাই এই অভয়ারণ্যে হরিণের প্রজনন ও প্রসবের দিকে বাড়তি গুরুত্ব দেয় বনবিভাগ ৷
এই মুহূর্তে বল্লভপুর অভয়ারণ্যে প্রায় 22টি হরিণ গর্ভবতী ৷ জানুয়ারি মাসের শেষের দিকেই প্রসব হবে সবার । তাই তাদের বিশেষ পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসার মধ্যে রাখা হয়েছে ৷ এমনটাই ইটিভি ভারতকে জানালেন বোলপুরের রেঞ্জার জ্যোতিষ বর্মন ও পশু চিকিৎসক দীপককুমার মণ্ডল ৷ তাঁদের কাছ থেকে জানা গেল গর্ভবতী হরিণের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ৷
কিভাবে বোঝা যায় হরিণ গর্ভবতী?
হরিণের পেটের নীচের দিক-সহ স্তন ফুলে ওঠে । এমনকি, প্রসবদ্বারও কিছুটা ফুলে ওঠে ৷ যা দেখে প্রাথমিকভাবে বোঝা যায় একটি হরিণ গর্ভবতী । এছাড়া, গর্ভবতী হরিণের চেহারায় একটি উজ্বল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় ৷ একটি হরিণের গর্ভকালীন সময় 200 থেকে 210 দিন ।
একটি হরিণের কয়'টি শাবক হয়?
কম বয়স্ক হরিণের একটি শাবকই হয় সাধারণত । একটি বয়স্ক বা প্রাপ্তবয়স্ক হরিণ দু’টি শাবকও প্রসব করে থাকে । তিনটি শাবক প্রসব করাটা খুবই বিরল । খুব কম দেখা যায় একটি হরিণ তিনটি শাবক প্রসব করেছে ৷ তাই সাধারণত একটি হরিণ একটিই সুষ্ঠ শাবক প্রসব করে ৷
গর্ভবতী হরিণকে কী খেতে দেওয়া হয়?
বনবিভাগ ও চিকিৎসকদের প্রথম লক্ষ্য থাকে গর্ভাবস্থায় যাতে হরিণরা বেশি বিচরণ না-করে ৷ তার জন্য একটি জায়গায় পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয় ৷ গর্ভাবস্থায় হরিণদের সাধারণত সুষম খাদ্য দেওয়া হয় ৷ এছাড়া, সবুজ ঘাস, গমের ভুষি, ভুট্টার গুঁড়ো, সোয়াবিন ফ্লেক্স, গুঁড়, ছোলা, বট, কাঁঠাল পাতা খাদ্য হিসাবে দেওয়া হয় ৷
জলেগুলে কালো নুন, ফটার দেওয়া হয় ৷ কোনও গর্ভবতী হরিণ যদি দুর্বল থাকে, তার জন্য ক্যালসিয়াম, বেশ কিছু ভিটামিন, মিনারেল দেওয়া হয় ৷ পাশাপাশি নুন চেটে খেতে দেওয়া হয় । এতে পুষ্টিকর শাবক প্রসব হয় ৷ প্রয়োজনে লিভার ভালো রাখার জন্য হরিণদের বিশেষ ওষুধ দেওয়া হয় ৷
পশু চিকিৎসক দীপককুমার মণ্ডল বলেন, "আমিই বল্লভপুর অভয়ারণ্যে হরিণদের চিকিৎসার বিষয়টা দেখি ৷ এই অভয়ারণ্যে সব থেকে উৎকৃষ্ট হরিণ পাওয়া যায় ৷ পরিবেশের জন্য এখানে হরিণ ভালো প্রসব হয় ৷ গর্ভাবস্থায় হরিণের স্বাস্থ্যের দিকে আমরা বিশেষ নজর দিই । ভিটামিন, মিনারেল, ফটার, ক্যালসিয়াম দেওয়া হয় ৷ লিভারের ওষুধও দিই ।