কলকাতা, 18 জুলাই: এবার পাঠ্যপুস্তকে কলকাতার তিন প্রধান ফুটবল ক্লাব ৷ দেশের ফুটবলের ইতিহাসে মোহনবাগান, মহমেডান ও ইস্টবেঙ্গলের অবদান প্রচুর । শুধু তাই নয়, কলকাতার তিন প্রধানকে ঘিরে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নানা ঘটনাও ৷ সেই কারণেই এবার মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডানের স্পোর্টিংয়ের ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে পাঠ্যপুস্তকে। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ময়দানের তিন বড় ক্লাব।
এই তিন ক্লাবের কী অবদান, তা নিয়ে পাঠ্যবইয়ে বিস্তারিত রয়েছে। পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন সময়ে এই তিন ক্লাবে খেলে যাওয়া উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়দেরও নামও ৷ চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে পড়বে তিন ক্লাবের ইতিহাস ৷ একাদশ শ্রেণিতে তিন ক্লাবের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । মোহনবাগানের আইএফএ শিল্ড পাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়কার ট্রফি জয়ের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে পাঠ্যবইয়ে ৷
শতাব্দীপ্রাচীন তিন ক্লাবকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত আগে হয়নি ৷ উচ্চশিক্ষা পর্ষদের এই সিদ্ধান্তে অভিভূত তিন প্রধান ৷ মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বলেন, “এই সিদ্ধান্তের জন্য মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ দিচ্ছি । কৃতিত্ব দিচ্ছি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকেও । মোহনবাগানের অবদানের কথা ইতিহাস বইয়ে অর্ন্তভুক্ত হলে নতুন প্রজন্ম আরও বেশি করে জানবে । ফুটবল এবং ফুটবল মাঠ থেকে সমাজের ওপর এই তিন দলের প্রভাবের কথাও জানবে । স্বাধীনতা সংগ্রামে মোহনবাগানের অবদানের কথা জানতে পারবে । একাদশ শ্রেণিতে করা হয়েছে । আমি চাই, মাধ্যমিক স্তরেও করা হোক । এখনকার প্রজন্ম ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ নিয়ে উৎসাহী ৷ এই তিন ক্লাব যে শুধু ক্লাব নয়, প্রতিষ্ঠান ৷ সেই সম্পর্কে জানা এবং জানানো জরুরি ৷”
তিন প্রধান তাদের ইতিহাস নিজেদের মতো করে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করেছে । ইস্টবেঙ্গলে লাইব্রেরি এবং মিউজিয়াম গড়া হয়েছে । মোহনবাগানে লাইব্রেরি রয়েছে, মিউজিয়াম গড়া হচ্ছে । মহমেডান স্পোর্টিংও একই উদ্যোগ নিয়েছে ।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “স্বাধীনতার আগে এবং পরে এই তিন ক্লাবের কী অবদান রয়েছে সে সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের জানা প্রয়োজন । এই কারণেই আমরা এই তিন ক্লাবের ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে নিয়ে এসেছি ৷”
রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রাক্তন সচিব এবং বর্তমান সহ-সভাপতি কল্যাণ মজুমদার । তিনি বলেন, “সাধু উদ্যোগ । এই তিন ক্লাব কালের নিয়মে শতবর্ষ অতিক্রান্ত । সামাজিক জীবনে অবদান অসীম । শুধুমাত্র ফুটবল খেলেই দায়িত্ব শেষ করেনি । ফুটবল মাঠ থেকে বার্তা দিয়েছে সমাজকে । যার অভিঘাত যথেষ্ট গভীর । এই তিনটি ক্লাবের সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে যা বঙ্গ সমাজের অভিজ্ঞানও বটে । নতুন প্রজন্ম তা জানলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গী বদলে যাবে ।’’
1911 সালে মোহনবাগান ক্লাবের আইএফএ শিল্ড জয়ের সঙ্গে যুক্ত খেলোয়ারদের নাম ছবি-সহ বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে পাঠ্যবইতে । বিস্তারিত ইতিহাস রয়েছে ইস্টবেঙ্গল এবং মহামেডানেরও । তিন ক্লাবেরই স্বাধীনতা আন্দোলনে বড় অবদান ছিল । সেই কথাই তুলে ধরা হবে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে ।
মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সচিব ইস্তেয়াক রাজু আহমেদ বলেন, “এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় । তিন প্রধান একশো বছর পার করেছে । মোহনবাগান প্রথম শিল্ড জিতেছিল । মহমেডান স্পোর্টিং প্রথম ভারতীয় ক্লাব হিসেবে লিগ জিতেছিল । এখনও এই তিন ক্লাবকে ঘিরে মানুষের আবেগ আন্দোলিত হয় । ফুটবল মানে বিদেশের ক্লাবগুলি নয় । আমাদের দেশের ক্লাবগুলি বিশেষ করে বাংলার তিন প্রধানের সোনালী অতীত রয়েছে তা পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে নতুনদের জানানো জরুরি ।’’