ETV Bharat / sports

ময়দানের ‘মেঘে ঢাকা নীতা’ ! ফুটবল মাঠ থেকে মার্জার সরণিতে সুজাতার দৌড় - STORY OF SUJATA PALIT

লাইট-ক্যামেরার ঝলকানি ৷ ইস্পাত কঠিন মুখ, রোদে পোড়া চামড়া ৷ সম্পূর্ণ বিপরীত দুই সত্ত্বাকে সঙ্গে করেই জীবনের রাজপথে এগিয়ে চলেছেন সুজাতা ৷

Sujata Palit
জীবনের রাজপথে এগিয়ে চলেছেন সুজাতা (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Sports Team

Published : Dec 1, 2024, 12:56 PM IST

কলকাতা, 1 ডিসেম্বর: এটি নিম্নবিত্ত পরিবারের এক তরুণীর উত্তরণের গল্প । যে কলকাতা ময়দানের জল-কাদায়, রোদে পুড়ে ম্যাচ পরিচালনা করে ৷ আবার একই সঙ্গে মার্জার সরণিতে হেঁটে বেড়িয়ে স্টাইল স্টেটমেন্টের সংজ্ঞাও মেলে ধরে । শহরের হাজার পরিশ্রমী মুখের ভিড়ে লুকিয়ে থাকা একটি সাধারণ মুখ । যে ভিড়ের মাঝে নিজের স্বপ্ন ছুঁতে চায় ।

সুজাতা পালিত, কলকাতা ময়দানের মেঘে ঢাকা নীতা, সমাজের বারান্দায় সুবর্ণলতা । আধুনিক আর্ক লাইটে ‘ওম্যান অব সাবস্টেন্স ।’ লাইট-ক্যামেরার ঝলকানি ৷ ইস্পাত কঠিন মুখ, রোদে পোড়া চামড়া ৷ সম্পূর্ণ বিপরীত দুই সত্ত্বাকে সঙ্গে করেই জীবনের রাজপথে এগিয়ে চলেছেন সুজাতা ৷

ফুটবল মাঠ থেকে মার্জার সরণিতে সুজাতার দৌড় (ইটিভি ভারত)

বেলুড়ের রবীন্দ্রপল্লীর পালিত পরিবারে বাংলার আর পাঁচটা নিম্নবিত্ত সংসারের চিরাচরিত ছবি । সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে স্বপ্ন ছোঁয়ার নিরন্তর লড়াই । যে লড়াইয়ে সকলেই অংশীদার । সেই লড়াইয়েই নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুজাতা ৷ সব খেলার সেরা ‘বাঙালির ফুটবলকে’ আশ্রয় করে জীবনের রাজপথে দৌড়তে চাওয়া সুজাতা নিরাশ করেননি ।

জুনিয়র ইন্ডিয়ার, রাজ্য এবং ক্লাবস্তরে খেলার মধ্যেই রেফারিদের ব্যক্তিত্বপূর্ণ উপস্থিতিতে বিস্মিত হয়েছিলেন । অনামিকা সেন, চৈতালী পালদের কড়া হাতে এবং সুষ্ঠভাবে ম্যাচ পরিচালনায় পেয়েছিলেন স্বাতন্ত্রতা । ফুটবলের বাইরে ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ । সেই সুযোগ হাতছাড়া করেননি ৷

Sujata Palit
লাইট-ক্যামেরার ঝলকানি (ইটিভি ভারত)

জোড়াহাতে দুই দায়িত্ব সামলানো সুজাতা বলেন, “রেফারি অ্যাসোসিয়েশনে এসে রেফারি হওয়ার জন্য কী করতে হয় তা জেনেছিলাম । সেই সময় কর্নেল গৌতম কর রেফারিদের গ্রিন প্রজেক্ট চালু করেছিলেন । আমাদের ক্লাস নিতেন প্রদীপ নাগ, জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রাক্তন রেফারিরা । উজ্জ্বল হালদার, আমি, প্রতীক মণ্ডল, দীপু রায় সবাই একসঙ্গে উঠে এসেছি । উজ্জ্বল ফিফা রেফারি হয়েছে । আমিও পরীক্ষা দিচ্ছি । এমনিতে ন্যাশনাল রেফারি আমি । মহিলাদের জাতীয় লিগ, কন্যাশ্রী কাপ-সহ বিভিন্ন টুর্নামেন্ট এমনকী কলকাতা লিগে ছেলেদের ম্যাচও খেলাচ্ছি । মহমেডান বনাম সুরুচি সংঘ ম্যাচ খেলিয়েছি ।’’

রেফারিং মানেই তো ফুটবলার, কোচ, কর্তা, দর্শকদের চোখের বালি । যে মেয়েটি স্বাতন্ত্র হতে চায় তাঁর গায়ে কি কটাক্ষ, কটুক্তি দাগ কাটে ? “রেফারিও মানুষ । ভুলভ্রান্তি হতেই পারে । এটা খেলারই অঙ্গ । আমি খেলোয়াড় ছিলাম তাই খেলার মাঠের পরিবেশ জানি । ফুটবলার হিসেবে দেখেছি, ডাগ-আউটে বসেও রেফারিকে দেখেছি । আবার রেফারি হয়েও দেখছি । তাই কোনও আলাদা অনুভূতি নেই,” বলছিলেন সুজাতা ।

Sujata Palit
ইস্পাত কঠিন মুখ, রোদে পোড়া চামড়া (ইটিভি ভারত)

রোদে পোড়া চেহারায় যখন ক্যামেরা, লাইট পড়ে ? মার্জার সরণিতে হাঁটার সুযোগ আসে ? কিভাবে বদলে যায় জীবন ? লাইম লাইটে থাকতে ভালোবাসা সুজাতা প্রথম প্রস্তাবে অবাকই হয়েছিলেন । “আমাকে একজন বলেছিল মডেলিং করো না কেন ? আমি ভেবেছিলাম মস্করা করছে । গ্ল্যামার দুনিয়ায় উজ্জ্বল ত্বকের কদর । সেখানে ময়দানে রোদে পুড়ে আমাদের ত্বকে তো ট্যান পড়ে গিয়েছে । তবে গিয়ে দেখলাম ব্যাপারটা ভালোই । আমি লাইম লাইটে থাকতে ভালোবাসি । সকলের নজরে পড়তে চাই । তাই রেফারিংটা ভালো লেগেছিল । এবার গ্ল্যামারের জগতে পা দেওয়ার সুযোগ । অডিশন দিয়ে সুযোগটা পেয়ে গিয়েছিলাম । তারপর থেকে চলছে । বেশ কিছু বিজ্ঞাপন করেছি । মার্জার সরণিতে হাঁটছি ।” শ্যামলা চেহারায় ফুটে ওঠে স্বপ্ন ছোঁয়ার আনন্দ ।

আজও সমাজের ধারণা, মেয়ে মানেই বিয়ের পিঁড়ি আল্টিমেট ডেস্টিনেশন । কিন্তু নিজেকে কোনও বন্ধনে জড়াতে চান না সুজাতা । পেশাগত চাপকে পাশে নিয়ে দুটি সত্তা বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি । সুজাতা বলেন, “নিজেকে না-তৈরি করে কোনও বন্ধনে জড়াতে চাই না । আমার একটা পরিচয় গড়ে তুলতে চাই । তাই তো ফুটবল খেলা, রেফারিং এবং মডেলিং করছি । বাবা-মা, দুই বোন এবং ভাই নিয়ে সংসার । খুবই নিম্নবিত্ত পরিবার আমাদের । আমি প্রথমে ছিলাম প্রধান রোজগেরে । তারপর ভাই পাশে দাঁড়াল...” সুজাতার মুখে ‘মেঘে ঢাকা তারা’র নীতার কাঠিন্য ।

সামান্য চাকরির ঝক্কি সামলেও দুই সত্তা বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে সুজাতা । রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের তাঁবুতে মধ্য দুপুরে নিজের কিট গুছিয়ে ফুটবল ম্যাচের পরিচালকের মহড়ায় । একই সঙ্গে কানে ফোন, ফাইলে চোখ বুলিয়ে কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততায় সঁপে দেয় নিজেকে ৷ সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠা সুজাতার দিনলিপি আধুনিক সমাজের ‘ওয়ার্কিং ওম্যানে’র স্বপ্নপূরণের ছবি । যেখানে কোনও খিদ্দা নেই ৷ সুজাতা নিজেই নিজেকে বলে ওঠে, “ফাইট কোনি ফাইট ।”

আরও পড়ুন

কলকাতা, 1 ডিসেম্বর: এটি নিম্নবিত্ত পরিবারের এক তরুণীর উত্তরণের গল্প । যে কলকাতা ময়দানের জল-কাদায়, রোদে পুড়ে ম্যাচ পরিচালনা করে ৷ আবার একই সঙ্গে মার্জার সরণিতে হেঁটে বেড়িয়ে স্টাইল স্টেটমেন্টের সংজ্ঞাও মেলে ধরে । শহরের হাজার পরিশ্রমী মুখের ভিড়ে লুকিয়ে থাকা একটি সাধারণ মুখ । যে ভিড়ের মাঝে নিজের স্বপ্ন ছুঁতে চায় ।

সুজাতা পালিত, কলকাতা ময়দানের মেঘে ঢাকা নীতা, সমাজের বারান্দায় সুবর্ণলতা । আধুনিক আর্ক লাইটে ‘ওম্যান অব সাবস্টেন্স ।’ লাইট-ক্যামেরার ঝলকানি ৷ ইস্পাত কঠিন মুখ, রোদে পোড়া চামড়া ৷ সম্পূর্ণ বিপরীত দুই সত্ত্বাকে সঙ্গে করেই জীবনের রাজপথে এগিয়ে চলেছেন সুজাতা ৷

ফুটবল মাঠ থেকে মার্জার সরণিতে সুজাতার দৌড় (ইটিভি ভারত)

বেলুড়ের রবীন্দ্রপল্লীর পালিত পরিবারে বাংলার আর পাঁচটা নিম্নবিত্ত সংসারের চিরাচরিত ছবি । সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে স্বপ্ন ছোঁয়ার নিরন্তর লড়াই । যে লড়াইয়ে সকলেই অংশীদার । সেই লড়াইয়েই নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুজাতা ৷ সব খেলার সেরা ‘বাঙালির ফুটবলকে’ আশ্রয় করে জীবনের রাজপথে দৌড়তে চাওয়া সুজাতা নিরাশ করেননি ।

জুনিয়র ইন্ডিয়ার, রাজ্য এবং ক্লাবস্তরে খেলার মধ্যেই রেফারিদের ব্যক্তিত্বপূর্ণ উপস্থিতিতে বিস্মিত হয়েছিলেন । অনামিকা সেন, চৈতালী পালদের কড়া হাতে এবং সুষ্ঠভাবে ম্যাচ পরিচালনায় পেয়েছিলেন স্বাতন্ত্রতা । ফুটবলের বাইরে ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ । সেই সুযোগ হাতছাড়া করেননি ৷

Sujata Palit
লাইট-ক্যামেরার ঝলকানি (ইটিভি ভারত)

জোড়াহাতে দুই দায়িত্ব সামলানো সুজাতা বলেন, “রেফারি অ্যাসোসিয়েশনে এসে রেফারি হওয়ার জন্য কী করতে হয় তা জেনেছিলাম । সেই সময় কর্নেল গৌতম কর রেফারিদের গ্রিন প্রজেক্ট চালু করেছিলেন । আমাদের ক্লাস নিতেন প্রদীপ নাগ, জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রাক্তন রেফারিরা । উজ্জ্বল হালদার, আমি, প্রতীক মণ্ডল, দীপু রায় সবাই একসঙ্গে উঠে এসেছি । উজ্জ্বল ফিফা রেফারি হয়েছে । আমিও পরীক্ষা দিচ্ছি । এমনিতে ন্যাশনাল রেফারি আমি । মহিলাদের জাতীয় লিগ, কন্যাশ্রী কাপ-সহ বিভিন্ন টুর্নামেন্ট এমনকী কলকাতা লিগে ছেলেদের ম্যাচও খেলাচ্ছি । মহমেডান বনাম সুরুচি সংঘ ম্যাচ খেলিয়েছি ।’’

রেফারিং মানেই তো ফুটবলার, কোচ, কর্তা, দর্শকদের চোখের বালি । যে মেয়েটি স্বাতন্ত্র হতে চায় তাঁর গায়ে কি কটাক্ষ, কটুক্তি দাগ কাটে ? “রেফারিও মানুষ । ভুলভ্রান্তি হতেই পারে । এটা খেলারই অঙ্গ । আমি খেলোয়াড় ছিলাম তাই খেলার মাঠের পরিবেশ জানি । ফুটবলার হিসেবে দেখেছি, ডাগ-আউটে বসেও রেফারিকে দেখেছি । আবার রেফারি হয়েও দেখছি । তাই কোনও আলাদা অনুভূতি নেই,” বলছিলেন সুজাতা ।

Sujata Palit
ইস্পাত কঠিন মুখ, রোদে পোড়া চামড়া (ইটিভি ভারত)

রোদে পোড়া চেহারায় যখন ক্যামেরা, লাইট পড়ে ? মার্জার সরণিতে হাঁটার সুযোগ আসে ? কিভাবে বদলে যায় জীবন ? লাইম লাইটে থাকতে ভালোবাসা সুজাতা প্রথম প্রস্তাবে অবাকই হয়েছিলেন । “আমাকে একজন বলেছিল মডেলিং করো না কেন ? আমি ভেবেছিলাম মস্করা করছে । গ্ল্যামার দুনিয়ায় উজ্জ্বল ত্বকের কদর । সেখানে ময়দানে রোদে পুড়ে আমাদের ত্বকে তো ট্যান পড়ে গিয়েছে । তবে গিয়ে দেখলাম ব্যাপারটা ভালোই । আমি লাইম লাইটে থাকতে ভালোবাসি । সকলের নজরে পড়তে চাই । তাই রেফারিংটা ভালো লেগেছিল । এবার গ্ল্যামারের জগতে পা দেওয়ার সুযোগ । অডিশন দিয়ে সুযোগটা পেয়ে গিয়েছিলাম । তারপর থেকে চলছে । বেশ কিছু বিজ্ঞাপন করেছি । মার্জার সরণিতে হাঁটছি ।” শ্যামলা চেহারায় ফুটে ওঠে স্বপ্ন ছোঁয়ার আনন্দ ।

আজও সমাজের ধারণা, মেয়ে মানেই বিয়ের পিঁড়ি আল্টিমেট ডেস্টিনেশন । কিন্তু নিজেকে কোনও বন্ধনে জড়াতে চান না সুজাতা । পেশাগত চাপকে পাশে নিয়ে দুটি সত্তা বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে নেমেছেন তিনি । সুজাতা বলেন, “নিজেকে না-তৈরি করে কোনও বন্ধনে জড়াতে চাই না । আমার একটা পরিচয় গড়ে তুলতে চাই । তাই তো ফুটবল খেলা, রেফারিং এবং মডেলিং করছি । বাবা-মা, দুই বোন এবং ভাই নিয়ে সংসার । খুবই নিম্নবিত্ত পরিবার আমাদের । আমি প্রথমে ছিলাম প্রধান রোজগেরে । তারপর ভাই পাশে দাঁড়াল...” সুজাতার মুখে ‘মেঘে ঢাকা তারা’র নীতার কাঠিন্য ।

সামান্য চাকরির ঝক্কি সামলেও দুই সত্তা বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে সুজাতা । রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের তাঁবুতে মধ্য দুপুরে নিজের কিট গুছিয়ে ফুটবল ম্যাচের পরিচালকের মহড়ায় । একই সঙ্গে কানে ফোন, ফাইলে চোখ বুলিয়ে কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততায় সঁপে দেয় নিজেকে ৷ সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠা সুজাতার দিনলিপি আধুনিক সমাজের ‘ওয়ার্কিং ওম্যানে’র স্বপ্নপূরণের ছবি । যেখানে কোনও খিদ্দা নেই ৷ সুজাতা নিজেই নিজেকে বলে ওঠে, “ফাইট কোনি ফাইট ।”

আরও পড়ুন

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.