বেনোনি (দক্ষিণ আফ্রিকা), 7 ফেব্রুয়ারি: নবমবার অনূর্ধ্ব-19 ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রবেশ করল ভারত ৷ তবে, মঙ্গলবারের সেমিফাইনাল ম্যাচে জয় অত সহজে আসেনি, যতটা সহজে গ্রুপ ও সুপার সিক্সের সব ম্যাচ ভারত জিতেছিল ৷ দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া 245 রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ভারতের মাত্র 32 রানে 4 উইকেট পড়ে গিয়েছিল ৷ সেখান থেকে অধিনায়ক উদয় সাহারান (81) এবং সচিন ধাসের (96) 171 রানের পার্টনারশিপ ভারতকে জয় এনে দিয়েছে ৷
কিন্তু, এতটাও সহজ কি ছিল বেনোনির পিচে ব্যাটিং করা ও 171 রানের ওই পার্টনারশিপ ? কী চলছিল মাথার মধ্যে এই দুই ব্যাটারের ? ম্যাচের সেরা পুরস্কার নিতে এসে সেই পরিস্থিতির কথা ব্যাখ্যা করেছেন খোদ অধিনায়ক উদয় সাহারান ৷ তিনি বলেন, "ওই সময় আমার মাথায় কিছুই চলছিল না ৷ আমি শুধু নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছি ৷ আমার একটা কথায় মাথায় ছিল, আমাকে একদম শেষ পর্যন্ত খেলতে হবে ৷ আমি জানতাম এখানে একটা ভালো পার্টনারশিপ গড়তে হত ৷ আর তাহলেই ম্যাচ আমাদের হয়ে যাবে ৷"
কিন্তু, পরিস্থিতি তো অতটাও সহজ ছিল না ৷ কারণ স্কোরবোর্ড বলছে ভারতের 4 উইকেট পড়ে গিয়েছে ৷ আর সেখান থেকে আরও 213 রান করতে হবে ৷ ভারতের পক্ষে যা ছিল, তা স্বয়ং অধিনায়ক উদয় সাহারান এবং সুপার সিক্সে নেপালের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করে আসা সচিন ধাসের উপস্থিতি ৷ তাই 4 উইকেট পড়ে গেলেও, আত্মবিশ্বাসী ছিলেন উদয় ৷ তিনি বলেন, "আমি সবসময় নিজেকে একটাই কথা বলছিলাম, আমাকে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে ৷"
কিন্তু, উলটোদিকেও তো একজনকে ভরসা যোগাতে হবে ! সেই কাজটা অসাধারণভাবে করেছেন সচিন ধাস ৷ তাঁর 95 বলে 96 রানের ইনিংস স্কোরবোর্ডের চাপ বাড়তে দেয়নি ৷ ফলে উদয় সাহারান একদিক থেকে উইকেট সামলে খেলে গিয়েছেন ৷ তিনি 124 বলে 81 রানের ইনিংস খেলে রান-আউট হন ৷ তবে, উদয় যখন আউট হন, ততক্ষণে ভারত জয়ের দোরগোড়ায় ৷ ক্লোজ কলে উইনিং রান নিতে গিয়ে দলের 244 রানের মাথায় আউট হন তিনি ৷ তবে, হাতে তখনও 8 বল বাকি ছিল ৷ পরের বলেই রাজ লিম্বানি এক্সট্রা কভারে বাউন্ডারি মেরে ভারতের ফাইনাল নিশ্চিত করেন ৷
উদয় সাহারানের আদর্শ তাঁর বাবা ৷ জানালেন, বাবার থেকেই শিখেছেন কীভাবে ইনিংস গড়ে ম্যাচ ডিপ নিয়ে যেতে হয় ৷ তাঁর কথায়, "আমার বাবাও একইভাবে ক্রিকেট খেলতেন ৷ উনিও এভাবেই ক্রিকেটটা খেলতেন ৷ ম্যাচ শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতেন ৷ তাই আমিও সেই জিনিসটাই চেষ্টা করি ৷ কারণ, আমি জানি প্রয়োজন পড়লে শেষের দিকে আমি বড় শট খেলতে পারব ৷ জানতাম যতক্ষণ আমি ক্রিজে আছি, ম্যাচ আমাদের হাতে রয়েছে ৷"
তবে, স্কোরবোর্ডের চাপের পাশাপাশি, পিচ থেকেও প্রোটিয়াস পেসাররা সাহায্য পাচ্ছিলেন ৷ উদয় বলেন, "আমি যখন ক্রিজে আসি, তখন বল কাট হচ্ছিল, সিম করছিল ৷ পিচে বাউন্সও ছিল ৷ তাই আমাকে প্রথমদিকে সতর্ক থাকতে হচ্ছিল, স্বাভাবিকভাবে নিজের শট খেলতে পারছিলাম না ৷ কিন্তু, বল একবার পুরনো হতেই, সহজে ব্যাটে আসছিল ৷ শট খেলতে পারছিলাম ৷ কয়েকটা বল বাউন্স করছিল ৷ কিন্তু, ততক্ষণে আমি ক্রিজে সেট হয়ে গেছিলাম ৷ ফলে সেটা মানিয়ে নিতে পেরেছি ৷"
আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তান একে অপরের মুখোমুখি হবে ৷ এই ম্যাচে জয়ী দল 11 ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ, আগামী রবিবার ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালে খেলবে ৷ ভারত এখনও পর্যন্ত আটবার আইসিসি অনূর্ধ্ব-19 বিশ্বকাপ খেলেছে ৷ যার মধ্যে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন মেন ইন-ব্লু ৷ এবার ছ’নম্বর খেতাব জয়ের সুযোগ ৷ আর সেই ফাইনাল আরও টানটান হতে পারে, যদি পাকিস্তান আজকের সেমিফাইনাল জেতে ৷
আরও পড়ুন: