কলকাতা, 28 নভেম্বর: উত্তেজনা বাড়ছে বিওএ’র নির্বাচনকে ঘিরে । হেমন্তের ময়দানে হিমের আমেজি আবহাওয়া নয় । গনগনে উত্তাপ এখন ময়দান জুড়ে ।
শুক্রবার বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে । সকাল দশটা থেকে প্রস্তুতি শুরু । সাড়ে এগারোটা থেকে ভোট পর্ব শুরু হবে । চার বছর আগে এই নির্বাচনকে ঘিরে যথেষ্টই উন্মাদনা ছিল । বিশেষ করে সভাপতি পদের লড়াইকে ঘিরে । সেই পদে মুখ্যমন্ত্রীর দাদা ও ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখেছিল গোটা ময়দান । দাদা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই নির্বাচনে হারিয়ে বিওএ সভাপতি হয়েছিলেন ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ।
এবারের নির্বাচনে অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় না-থাকলেও সভাপতির পদ নিয়ে লড়াইটা একইভাবে অব্যহত । ভাবা গিয়েছিল, এবারে যেহেতু অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় নেই, সেক্ষেত্রে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় সহজ হবে । কিন্তু এবারে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন ওয়েট লিফটিং কর্তা চন্দন রায়চৌধুরী । শোনা যাচ্ছে, জয়ের বিষয়ে স্বপনের মতোই তিনিও আত্মবিশ্বাসী । যা ভাবাচ্ছে গতবারের বিজয়ী সভাপতিকেও । স্বপন বলছেন, তিনি জিতবেন । চন্দন রায়চৌধুরী শিবির বলছে, অন্তত চল্লিশটি ভোট তাঁদের দিকে নিশ্চিত । গতবারে যিনি সভাপতির পদে লড়াই করেছিলেন সেই অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবার নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের ভূমিকায় ।
শুধু লড়াই সভাপতির পদেই নয়, সাধারণ সচিব পদে খোখো কর্তা কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন বাস্কেটবলের জহর দাস । গতবছর স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় শিবিরে থাকলেও জহর দাস এবার চন্দন রায়চৌধুরীর শিবিরে । জহর দাস বলেন, “আমি শিবির বদল করেছি । গত চারবছর আমি কাজ করতে পারিনি । আয়কর দিতে হয়েছে ন’লক্ষ টাকা । অথচ এই টাকাগুলো অনুমোদিত সংস্থার মধ্যে দেওয়া যেত । ছোট ছোট খেলার সংস্থা । অর্থ কষ্টে থাকে । ওদের অর্থের সংস্থান যদি বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন না করে, কে করবে ? যে সরকারে থাকে তার সঙ্গে সখ্যতা না থাকলে চালানো যায় না ৷”
লড়াই একেবারেই নেই কোষাধ্যক্ষ পদে । মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল শনিবার । সময়সীমার মধ্যে কোষাধ্যক্ষ পদে একমাত্র অ্যাথলেটিক্স কর্তা কমল মৈত্রই মনোনয়ন জমা করেছিলেন । সেই মতো তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন । যদিও সভাপতির পদের মতোই লড়াই হবে সহ-সভাপতি পদেও । এবার আইএফএ থেকে ভোট দিতে যাচ্ছেন না সচিব অনির্বাণ দত্ত । রাজ্য ফুটবল সংস্থার তরফ থেকে ভোট দেবেন সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সহ-সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস । মোট 14টি পদের জন্য 36টি অ্যাসোসিয়েশনের 68 জন প্রতিনিধি ভোট দেবেন বিওএ নির্বাচনে । এরমধ্যে একটি পদ সভাপতির, সহ-সভাপতির জন্য সাতটি পদ, সচিব 1টি, কোষাধ্যক্ষ 1টি, যুগ্ম সচিব চারটি ।
সহ-সভাপতি পদের লড়াইতেও টানটান উত্তেজনা । ক্রিকেট প্রশাসক বিশ্বরূপ দেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই পদের জন্য । সাতজন সহ-সভাপতির পদের জন্য মনোনয়ন জমা পড়েছে 11 জনের । মঙ্গলবার মনোনয়ন প্রত্যাহার করার শেষ দিন ছিল । আশা করা গিয়েছিল, বেশ কয়েকজন কর্তাই প্রত্যাহার করে নেবেন মনোনয়ন । কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে কোনও পদ থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়নি । স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজনা বাড়ছে এই নির্বাচনকে ঘিরে । চাপা টেনশন রয়েছে দু’পক্ষেরই ।
অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে জমে উঠেছে ময়দান । দু’পক্ষের প্যানেলে রয়েছেন রামানুজ মুখোপাধ্যায় । আড়ালে বলা হচ্ছে, রামানুজ প্রবীণ হলেও জল মাপছেন । যে শিবির জিতবে সেদিকে ঢলে পড়বেন । রামানুজ স্বয়ং বলছেন, তিনি রাজনৈতিক টানাপোড়েনে নেই । সাঁতারের উন্নতি একমাত্র লক্ষ্য । সেইজন্য সবার কাছেই সমর্থন চাইছেন । তবে একই সঙ্গে মানছেন সরকারের সঙ্গে সক্ষতা জরুরি সুষ্ঠ সংগঠন চালানোর স্বার্থে । সাঁতারের দু’টি সংস্থা । অন্যটির মাথায় মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার এবং স্বপন আদক রয়েছেন । রাজ্য সাঁতার সংস্থার কোন কমিটি বৈধ তা নিয়ে মামলা চলছে । রামানুজ মুখোপাধ্যায় বলছেন, বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সমর্থন তাঁর দিকে । মান্যতাও রয়েছে । একই অবস্থান তপন বক্সীর । তবে তাঁকে নিয়ন্ত্রন করার বিষয়টি দেখছেন রাজ্য মন্ত্রীসভার এক ওজনদার মন্ত্রী । যিনি কয়েকমাস আগে একটি রাজ্য ক্রীড়া সংস্থার শীর্ষে বসেছেন ।
অভিযোগ উঠেছে ভোট কেনার । বলা হচ্ছে ভোট পাওয়ার জন্য টাকা ছড়ানো হচ্ছে । এমনকী লোক পাঠিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করছেন অনেক কর্তা । যদিও এই ধরনের অভিযোগ বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ভোটে নতুন নয় । চারবছর আগেও এই অভিযোগ ছিল । সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী বিশ্বরূপ দে আগেই বলেছিলেন. বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনের অংশ নেওয়ার ব্যাপারে দলের নির্দেশ রয়েছে। এবং তা শীর্ষস্থান থেকে ।
ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস পর্দার আড়াল থেকে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন । শোনা যাচ্ছে, বুধবার এই বিষয়ে চন্দন রায়চৌধুরীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং শেষ মিনিটের নির্দেশ দিয়েছেন । ক্রীড়ামন্ত্রী যা করছেন তা সুপ্রিমোর অঙ্গুলিহেলনে । জল মাপতে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও হকি অ্যাসোসিয়েশনে বৈঠকে বসেছিলেন । তারাও দাবি করছেন, জিতবেন ।
চন্দন রায়চৌধুরীরা বলছেন, ক্ষমতায় আসলে স্পোর্টস কোড মেনে সাতদিনের মধ্যে এক ব্যক্তির একাধিক সংস্থার পদাধিকারী হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন । একইভাবে মা এবং ছেলে’কে নিয়ে একটি রাজ্য সংস্থা বা মামা-ভাগ্নে নিয়ে একটি রাজ্য সংস্থা চালানো বন্ধ করবেন । সব মিলিয়ে বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন ঘিরে চারবছর পরে ফের উত্তাল ময়দান । যা হয়তো আগের সব নজির ভাঙতে চলেছে ।