মালদা, 19 ফেব্রুয়ারি: বাড়ি ভাড়া নিয়ে পার্টি অফিস করে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ৷ ঘটনাটি ঘটেছে মালদার কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লকের আলিনগর গ্রামে ৷ অভিযোগ, ভাড়া না পেয়ে বাড়ির মালিক পার্টি অফিসে তালা দিয়ে দেন ৷ পার্টি অফিস খুলতে গেলে তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে একপ্রস্থ ঝামেলা হয় রবিবার সন্ধ্যায় ৷ পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷ খোলা হয় পার্টি অফিস ৷
এই নিয়ে অবশ্য বাড়ির মালিক রবিউল ইসলাম কোনও মন্তব্য করেননি ৷ তবে তাঁর ভাই বাড়ি ভাড়া বকেয়া থাকার কথা স্বীকার করেছেন ৷ তৃণমূলের তরফে আবার কেউ বিষয়টি স্বীকার করছেন, তো কেউ এই ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ৷ কারও কারও অভিযোগ, পুলিশের ভয়ে শেষপর্যন্ত তালা খুলে দিতে বাধ্য হয়েছেন মালিক ৷ যদিও এই নিয়ে পুলিশের তরফে কারও কোনও বক্তব্যই পাওয়া যায়নি ৷
উল্লেখ্য়, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আলিনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অদূরে বাজার এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নেয় স্থানীয় অঞ্চল তৃণমূল ৷ ওই বাড়িটির মালিক এলাকারই বাসিন্দা রবিউল ইসলাম ৷ ঘরভাড়া নিয়ে বাড়ি মালিকের সঙ্গে লিখিত চুক্তিও হয় ৷ তৃণমূলের তরফে সেই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন আলিনগর অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি ওবায়েদুর রহমান ৷
চুক্তিপত্র অনুযায়ী, ঘরভাড়া বাবদ বাড়ি মালিককে প্রতিমাসে আড়াই হাজার টাকা দিতে হবে রাজ্যের শাসক দলকে ৷ প্রতি তিনমাস অন্তর সেই ভাড়া মেটাতে হবে ৷ তিনমাস ভাড়া না দিতে পারলে ঘর ছেড়ে দিতে হবে ৷ প্রথমদিকে চুক্তিমাফিকই ঘর ভাড়া পাচ্ছিলেন রবিউল সাহেব ৷ অভিযোগ, কিন্তু তারপরেই ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেয় তৃণমূল ৷ তিনি একাধিকবার অঞ্চল তৃণমূল নেতৃত্বকে বিষয়টি জানান ৷ কিন্তু ভাড়া জোটেনি ৷ এভাবে পেরিয়ে যায় ছ’মাস ৷ শেষ পর্যন্ত রবিউল সাহেব তাঁর ঘরে তালা মেরে দেন ৷ বন্ধ হয়ে যায় তৃণমূলের পার্টি অফিস ৷
রবিউল সাহেবের ভাই নাজিমুল হক বলছেন, “চার বছরের চুক্তিতে ঘরটা ভাড়া দেওয়া হয়েছিল ৷ প্রতি তিনমাস অন্তর ভাড়া দেওয়ার কথা ৷ মাসিক ভাড়ার পরিমাণ ছিল আড়াই হাজার টাকা ৷ চুক্তিপত্রেই লেখা ছিল, তিনমাস ভাড়া না দিলে ঘর থেকে তুলে দেওয়া হবে ৷ ছ’মাস ভাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তৃণমূলের প্রধান সাহেবকে ফোন করি ৷ তিনি প্রথমে ফোন ধরেননি ৷ পরে আজ দেব, কাল দেব বলে ঘোরাতে থাকেন ৷ দিনের পর দিন ভাড়া না পেয়েই দাদা ওই ঘরে তালা মেরে দেন ৷ খবর পেয়ে পুলিশ-প্রশাসনও চলে আসে ৷ পুলিশ ঘর খুলে দিতে বলে ৷ প্রশাসনের উপর আমরা কিছু বলতে পারি না ৷ তাই ঘরের তালা খুলে দিয়েছি ৷”
এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি ওবায়েদুর রহমান পুরো প্রসঙ্গই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ৷ তাঁর দাবি, অফিস খোলা রয়েছে ৷ কেউ ওই ঘরে তালা মারেনি ৷ পুলিশও আসেনি ৷ সংবাদমাধ্যমের কাছে ভুল তথ্য রয়েছে ৷ যদিও কালিয়াচক 1 নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সারিউল শেখ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন ৷
তিনি বলেন, “ঘটনাটি শুনেই আমি অঞ্চল সভাপতিকে ফোন করি ৷ তাঁর সঙ্গে কথাও হয়েছে ৷ তিনি জানিয়েছেন, বাড়ি মালিককে ভাড়া মিটিয়ে দেওয়ার কথা তিনি বলেছিলেন ৷ কিন্তু কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ির মালিক ওই ঘরে তালা মেরে দেন ৷ আজ সকালে অফিস খুলতে গিয়ে তালা দেখা যায় ৷ তবে খুব বেশি টাকার মামলা নয় ৷ অঞ্চল সভাপতিকে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেছি ৷ বাড়ির মালিক আজ অশ্লীল কথাবার্তা বলছিলেন ৷ তাঁকে শান্ত করতেই পুলিশ ডাকা হয়েছিল ৷ অন্য কোনও বিষয় নেই ৷”
আরও পড়ুন: