ETV Bharat / politics

পশ্চিম বর্ধমানে মলয়ের একাধিপত্যের অবসান ঘটাতেই কি ভোটের আগে অরূপকে দায়িত্ব? - পশ্চিম বর্ধমান

Trinamool Congress: লোকসভা ভোটের মুখে পশ্চিম বর্ধমানে সংগঠন সাজানোর দায়িত্ব অরূপ বিশ্বাসকে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ প্রশ্ন উঠছে, মলয় ঘটকের একাধিপত্য শেষ করতেই কি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল ?

Trinamool Congress
Trinamool Congress
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 3, 2024, 3:49 PM IST

দুর্গাপুর, 3 ফেব্রুয়ারি: লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দলের সংগঠন মজবুত করার দায়িত্ব অরূপ বিশ্বাসকে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ আর তার পর থেকে শিল্পাঞ্চলের রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে ৷ প্রশ্ন উঠেছে, শিল্পাঞ্চলের ‘সবচেয়ে প্রভাবশালী’ নেতা মলয় ঘটকের একাধিপত্য শেষ করতেই কি এই সিদ্ধান্ত নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো ?

লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণা হতে আর বেশি সময় বাকি নেই ৷ ফলে তৃণমূল কংগ্রেস ভোটের আগে প্রতিটি জেলার সংগঠনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে ৷ কলকাতায় জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি ৷ সেই বৈঠকেই দুই জেলার সংগঠন দেখার দায়িত্ব অরূপ বিশ্বাসকে দেন তৃণমূল নেত্রী ৷

তাঁর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পশ্চিম বর্ধমানে তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অরূপদাকে সামনে রেখে এই জেলায় আরও শক্তিশালী হবে সংগঠন । বিরোধী বিজেপি এবং সিপিএমকে আমরা নিশ্চিহ্ন করে দেব এই জেলা থেকে ।"

এর আগেও পশ্চিম বর্ধমানের দায়িত্বে ছিলেন অরূপ বিশ্বাস৷ সেই সময় রাজ্যস্তরের নেতাদের বিভিন্ন জেলায় পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দিত তৃণমূল ৷ তখনই শিল্পাঞ্চলের এই জেলায় পর্যবেক্ষক ছিলেন অরূপ ৷ সেই সময় কখনও জিতেন্দ্র তিওয়ারি (বর্তমানে বিজেপিতে), কখনও উত্তম মুখোপাধ্যায় ঘাসফুল শিবিরে জেলা সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন ৷ আবার বিধান উপাধ্য়ায় (এখন আসানসোলের মেয়র), ভি শিবদাসন দাশুকেও একই পদে বসানো হয় ৷

পরে তৃণমূলের তরফে পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়া হয় ৷ তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, এর পর শিল্পাঞ্চলে আবার মলয় ঘটকের একাধিপত্য ফিরে আসে ৷ দলের বিভিন্ন পদে তাঁর অনুগামীদের ভিড় বাড়তে থাকে ৷ মলয় ‘ঘনিষ্ঠ’ নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে করা হয় পশ্চিম বর্ধমান জেলার সাংগঠনিক সভাপতি । মলয় ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিশ্বনাথ বাউরি জেলা পরিষদের সভাধিপতি হন ৷ মলয় ঘটকের ভাই অভিজিৎ ঘটক আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি ও আসানসোল পৌরনিগমের ডেপুটি মেয়র হন । শুধু তাই নয়, দলীয় কোন্দল ঠেকাতে নজিরবিহীন ভাবে আসানসোল পৌরনিগমে দু’জন ডেপুটি মেয়র নিয়োগ নিয়োগ করতে হয় । উলটোদিকে ক্রমশ ব্রাত্য হতে থাকেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় (আড্ডার চেয়ারম্যান), ভি শিবদাসন দাশু-র মতো নেতারা ৷

এই নিয়ে ক্ষোভ জমা হচ্ছিল তৃণমূলের অন্দরে ৷ তৃণমূলের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, সেই ক্ষোভই কার্যত আছড়ে শুক্রবারের বৈঠকে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই মলয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন অনেক নেতাই ৷ প্রথমেই প্রতিবাদ করেন দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতা বিশ্বনাথ পাড়িয়াল । তিনি বলেন, ‘‘মোটা অর্থের বিনিময়ে কলকারখানায় শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে । দুর্গাপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা বলতে কেউ নেই । তাই দুর্গাপুরের সংগঠন একেবারে ভেঙে পড়ছে ।’’ তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, ভি শিবদাসন দাশু-ও সরব হন ৷

তৃণমূল সূত্রে খবর, এত অভিযোগ শুনে ক্ষুব্ধ হন তৃণমূল নেত্রী ৷ কিছুটা বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘‘অরূপ বিশ্বাসকে সামনে রেখে দুই বর্ধমান জেলার কোর কমিটি গঠন করা হবে ।’’ দলনেত্রী অরূপ বিশ্বাসকে নির্দেশ দেন আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নরেন চক্রবর্তী, দাশু, তাপস, বিশ্বনাথ পাড়িয়ালদের নিয়ে কোর কমিটি গঠনের জন্য ।

অরূপ বিশ্বাসকে সামনে রেখে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় সাংগঠনিক কাজকর্ম আরও শক্তিশালী হবে বলে জানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য কমিটির নেতা তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্যতম মুখ ভি শিবদাসান দাশু । আসানসোলের মেয়র তথা পশ্চিম বর্ধমানে তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাংগঠনিকভাবে যা বলার দল বলবে । তবে দলনেত্রী যে কথা বলেছেন যে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে সেই কথাকে সবাইকে মান্যতা দিতে হবে ।’’ যদিও এই নিয়ে মলয় ঘটকের কোনও বক্তব্য মেলেনি ৷

কিন্তু অরূপ বিশ্বাস দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে, তাহলে কি মলয় ঘটকের একাধিপত্যের অবসান ঘটল ? এখন দেখার অরূপ বিশ্বাস পর্যবেক্ষক হিসাবে এই জেলায় সাংগঠনিকভাবে কাদের কাদের দায়িত্ব দেন ।

আরও পড়ুন:

  1. জন্মলগ্ন থেকেই পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাধিপতির আসনে একই দম্পতি
  2. ধরনামঞ্চ থেকেই হেমন্ত সোরেনের 'পাশে দাঁড়ানোর শপথ' মমতার
  3. মমতার একা লড়ার ঘোষণার পরও তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় আশাবাদী কংগ্রেস

দুর্গাপুর, 3 ফেব্রুয়ারি: লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দলের সংগঠন মজবুত করার দায়িত্ব অরূপ বিশ্বাসকে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ আর তার পর থেকে শিল্পাঞ্চলের রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে ৷ প্রশ্ন উঠেছে, শিল্পাঞ্চলের ‘সবচেয়ে প্রভাবশালী’ নেতা মলয় ঘটকের একাধিপত্য শেষ করতেই কি এই সিদ্ধান্ত নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো ?

লোকসভা নির্বাচনের ঘোষণা হতে আর বেশি সময় বাকি নেই ৷ ফলে তৃণমূল কংগ্রেস ভোটের আগে প্রতিটি জেলার সংগঠনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে ৷ কলকাতায় জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি ৷ সেই বৈঠকেই দুই জেলার সংগঠন দেখার দায়িত্ব অরূপ বিশ্বাসকে দেন তৃণমূল নেত্রী ৷

তাঁর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পশ্চিম বর্ধমানে তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অরূপদাকে সামনে রেখে এই জেলায় আরও শক্তিশালী হবে সংগঠন । বিরোধী বিজেপি এবং সিপিএমকে আমরা নিশ্চিহ্ন করে দেব এই জেলা থেকে ।"

এর আগেও পশ্চিম বর্ধমানের দায়িত্বে ছিলেন অরূপ বিশ্বাস৷ সেই সময় রাজ্যস্তরের নেতাদের বিভিন্ন জেলায় পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দিত তৃণমূল ৷ তখনই শিল্পাঞ্চলের এই জেলায় পর্যবেক্ষক ছিলেন অরূপ ৷ সেই সময় কখনও জিতেন্দ্র তিওয়ারি (বর্তমানে বিজেপিতে), কখনও উত্তম মুখোপাধ্যায় ঘাসফুল শিবিরে জেলা সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন ৷ আবার বিধান উপাধ্য়ায় (এখন আসানসোলের মেয়র), ভি শিবদাসন দাশুকেও একই পদে বসানো হয় ৷

পরে তৃণমূলের তরফে পর্যবেক্ষক পদ তুলে দেওয়া হয় ৷ তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, এর পর শিল্পাঞ্চলে আবার মলয় ঘটকের একাধিপত্য ফিরে আসে ৷ দলের বিভিন্ন পদে তাঁর অনুগামীদের ভিড় বাড়তে থাকে ৷ মলয় ‘ঘনিষ্ঠ’ নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে করা হয় পশ্চিম বর্ধমান জেলার সাংগঠনিক সভাপতি । মলয় ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিশ্বনাথ বাউরি জেলা পরিষদের সভাধিপতি হন ৷ মলয় ঘটকের ভাই অভিজিৎ ঘটক আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি ও আসানসোল পৌরনিগমের ডেপুটি মেয়র হন । শুধু তাই নয়, দলীয় কোন্দল ঠেকাতে নজিরবিহীন ভাবে আসানসোল পৌরনিগমে দু’জন ডেপুটি মেয়র নিয়োগ নিয়োগ করতে হয় । উলটোদিকে ক্রমশ ব্রাত্য হতে থাকেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় (আড্ডার চেয়ারম্যান), ভি শিবদাসন দাশু-র মতো নেতারা ৷

এই নিয়ে ক্ষোভ জমা হচ্ছিল তৃণমূলের অন্দরে ৷ তৃণমূলের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, সেই ক্ষোভই কার্যত আছড়ে শুক্রবারের বৈঠকে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই মলয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন অনেক নেতাই ৷ প্রথমেই প্রতিবাদ করেন দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতা বিশ্বনাথ পাড়িয়াল । তিনি বলেন, ‘‘মোটা অর্থের বিনিময়ে কলকারখানায় শ্রমিক নিয়োগ করা হচ্ছে । দুর্গাপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা বলতে কেউ নেই । তাই দুর্গাপুরের সংগঠন একেবারে ভেঙে পড়ছে ।’’ তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, ভি শিবদাসন দাশু-ও সরব হন ৷

তৃণমূল সূত্রে খবর, এত অভিযোগ শুনে ক্ষুব্ধ হন তৃণমূল নেত্রী ৷ কিছুটা বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘‘অরূপ বিশ্বাসকে সামনে রেখে দুই বর্ধমান জেলার কোর কমিটি গঠন করা হবে ।’’ দলনেত্রী অরূপ বিশ্বাসকে নির্দেশ দেন আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নরেন চক্রবর্তী, দাশু, তাপস, বিশ্বনাথ পাড়িয়ালদের নিয়ে কোর কমিটি গঠনের জন্য ।

অরূপ বিশ্বাসকে সামনে রেখে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় সাংগঠনিক কাজকর্ম আরও শক্তিশালী হবে বলে জানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য কমিটির নেতা তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্যতম মুখ ভি শিবদাসান দাশু । আসানসোলের মেয়র তথা পশ্চিম বর্ধমানে তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাংগঠনিকভাবে যা বলার দল বলবে । তবে দলনেত্রী যে কথা বলেছেন যে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে সেই কথাকে সবাইকে মান্যতা দিতে হবে ।’’ যদিও এই নিয়ে মলয় ঘটকের কোনও বক্তব্য মেলেনি ৷

কিন্তু অরূপ বিশ্বাস দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে, তাহলে কি মলয় ঘটকের একাধিপত্যের অবসান ঘটল ? এখন দেখার অরূপ বিশ্বাস পর্যবেক্ষক হিসাবে এই জেলায় সাংগঠনিকভাবে কাদের কাদের দায়িত্ব দেন ।

আরও পড়ুন:

  1. জন্মলগ্ন থেকেই পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাধিপতির আসনে একই দম্পতি
  2. ধরনামঞ্চ থেকেই হেমন্ত সোরেনের 'পাশে দাঁড়ানোর শপথ' মমতার
  3. মমতার একা লড়ার ঘোষণার পরও তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় আশাবাদী কংগ্রেস
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.