কলকাতা, 19 জানুয়ারি: মুর্শিদাবাদের রাজনীতিতে কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীকে বরাবরই বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করা হয়৷ কিন্তু সেই মতের শরিক নন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শনিবার কালীঘাটে মুর্শিদাবাদ জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠকে সেই বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, ‘‘আপনারা ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করুন। অধীর কোনও ফ্যাক্টর নয়।’’
এ দিনের বৈঠকে মুর্শিদাবাদ জেলার তৃণমূল বিধায়ক, সাংসদ থেকে শুরু করে সমস্তস্তরের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ জেলায় অধীর বড় ফ্যাক্টর।’’ সেই সময় তাঁকে একরকম থামিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অধীর ফ্যাক্টর নয়। আপনারা ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করুন।’’
গত লোকসভা নির্বাচনে এই মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে দু’টি লোকসভা আসন পেয়েছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস৷ এর মধ্যে ছিল জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ আসন। তবে বহরমপুরে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। অধীররঞ্জন চৌধুরী এই বহরমপুরের সাংসদ। পাশাপাশি তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা৷ কিন্তু এবার তাঁকে হারাতে মরিয়া তৃণমূল৷ কারণ, এ দিন দলের বৈঠকে মুর্শিদাবাদ জেলার তিনটি লোকসভা জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দলীয় কর্মীদের জন্য বেঁধে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
এ দিন একই সঙ্গে ওই জেলায় বিধায়ক ও জেলা নেতৃত্বের মধ্যে বিবাদ নিয়েও কড়াবার্তা দিয়েছেন মমতা। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘‘বিরোধ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে। একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন।’’ এ দিন আলাদা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাবধান করে দিয়েছেন বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি যাতে মুখ না খোলেন, তার জন্য সতর্ক করা হয়েছে তাঁকে। একই সঙ্গে তৃণমূলের স্পষ্ট বার্তা, দল যাঁকে যে দায়িত্ব দেওয়া দেবে, সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। আপত্তি থাকলে দলকে বলা যেতে পারে। কিন্তু প্রকাশ্যে বা সংবাদ মাধ্যমে ক্ষোভ কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
এ দিন মুর্শিদাবাদ নিয়ে বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। প্রত্যেকেই এ দিন বক্তব্য রাখেন। একই সঙ্গে জেলা থেকে সাতজনকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়। এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খলিলুর রহমান ও আবু তাহেরের প্রশংসা করেছেন। সেক্ষেত্রে মনে করা হচ্ছে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে তাদের উপর ভরসা রাখতে পারে তৃণমূল।
তবে প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। বরং নির্বাচনের আগে ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার বার্তাই এ দিন দিয়েছেন মমতা ও অভিষেক। তবে এ দিন তৃণমূল নেত্রীর কথা থেকে স্পষ্ট, এই মুহূর্তে শাসক দলের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মুর্শিদাবাদের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করা।