ব্যারাকপুর, 5 মার্চ: নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে দ্বন্দ্ব যেন পিছু ছাড়ছে না তৃণমূলের। গত কয়েকদিন আলোচনায় ছিলেন কুনাল ঘোষ-তাপস রায়ের মতো প্রবীণ নেতৃত্ব। এবার আলোচনায় বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম এবং সাংসদ অর্জুন সিং এর দ্বন্দ্ব। বিধায়ক অর্জুন সিংকে যাতে টিকিট না দেওয়া হয় তার জন্য দলের কাছে দরবার করছেন সোমনাথ শ্যাম । এখানেই শেষ নয় দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে তিনি চিঠি লিখে অর্জুন সিংকে টিকিট না দেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছেন তিনি। আর এসবের মধ্যেই আজ আচমকাই নবান্নে পৌছলেন অর্জুন সিং।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের সফর শেষ করে নবান্নে আসার পরেই তিনি নবান্নে আসেন। বিকেল চারটের সময় তিনি নবান্নে আসেন । এক ঘন্টার কাছাকাছি তিনি নবান্নে ছিলেন। তবে সরাসরি সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেননি তিনি। মনে করা হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম তাঁর প্রতিনিধিত্ব আটকাতে যেভাবে উদ্যোগী হয়েছেন তা নিয়েই দলনেত্রীর সঙ্গে কথা বললেন তিনি।
যদিও দলের তরফ থেকে এই বিষয়টি নিয়ে সেভাবে কোন প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। নবান্ন থেকে বেরোনোর সময় অর্জুন সিং সংবাদ মাধ্যমকে এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে ব্যারাকপুরের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যে বিগত কয়েকদিন ধরে অর্জুন সিং এবং বিধায়ক সোমনাথ শ্যামে মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল তা এই ঘটনায় আরো একবার প্রকাশ্যে চলে এসেছে। আলোচনায় চলে এসেছে দলনেত্রী শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষের দিকে ঝুঁকবেন।
গত কয়েকদিন ধরেই জগদ্দলের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম অর্জুন সিং যাতে টিকিট না পাযন তার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছিলেন। এর মধ্যে জনগণের সই-সংগ্রহ থেকে একাধিক পদক্ষেপ রয়েছে। এই স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেবেন বলেও জানিয়েছেন। এদিন সকালেই সরব হন তিনি। বলেন, "নিজের ছেলেকে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বসিয়ে চক্রান্ত করছেন। আবার সেই তিনিই ব্যারাকপুর লোকসভায় টিকিট পাওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়–অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়র সঙ্গে বসছেন।"
আর এসবের মধ্যেই আজ অর্জুন সিং এর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গিয়ে সাক্ষাৎ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তবে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং এবং জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যামের এই দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয় । বিজেপি ছেড়ে যেদিন থেকে অর্জুন শাসক শিবির নাম লিখিয়েছেন, তারপর থেকেই সোমনাথের সঙ্গে সাংসদের সাপে-নেউলে সম্পর্কে পরিণত হয়েছে । কেউ কাউকে যেন একচুলও জায়গা ছাড়তে নারাজ । সোমনাথ মুখ খুললে তো পরক্ষণেই অর্জুন আবার পালটা নিশানা করেছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জগদ্দলের বিধায়ককে । বারবার তা প্রকাশ্যে এসেছে । সম্প্রতি দু'জনের সেই খেয়োখেয়ি আরও বেড়েছে বলেই অভিযোগ । বিশেষ করে তৃণমূল কর্মী ভিকি যাদব খুনের ঘটনার পর থেকেই ।
সাংসদ-বিধায়কের সেই দ্বন্দ্ব মেটাতে একসময় হস্তক্ষেপ করতে হয় তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বকসিকে । কিন্তু তাতেও মেটেনি দু'জনের দ্বন্দ্ব ! একমাস আগে রাজ্য বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে অর্জুনকে 'খুনি'র তকমা দিয়ে তাঁকে লোকসভায় যেন তৃণমূলের প্রার্থী না করা হয়, সেবিষয়ে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম । তখন তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বীজপুরের দলীয় বিধায়ক সুবোধ অধিকারীও । এক্ষেত্রেও বীজপুরের বিধায়ককে পাশে পেলেন সোমনাথ । তিনিও অর্জুনের প্রার্থী পদ ঠেকাতে মমতার কাছে দরবার করবেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন ।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম বলেন,"2019 সালের লোকসভা ভোটের পর যাঁরা তৃণমূল কর্মীদের ওপর হামলা,পার্টি অফিসে তাণ্ডব এবং কর্মীদের ঘরছাড়া করেছিল, তাঁরা তৃণমূল দলে যাতে কোনওভাবে স্থান না পান সেটাই চাইছেন ভাটপাড়া, বীজপুর-সহ সন্নিহিত এলাকার বাসিন্দারা । তাই তাঁরা সই সংগ্রহ করে সেই দাবিপত্র আমার হাতে তুলে দিয়েছেন । আমি সেটা মুখবন্ধ খামে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব । মানুষ চাইছে না তাঁদের । আমি তো মানুষের বাইরে যেতে পারব না । লোকসভা ভোটে জেতার পর সিংহ হয়ে মানুষের ওপর যে অত্যাচার তাঁরা করেছিল তা আজও সকলের স্মৃতিতে রয়েছে । এখন তাঁরাই ইঁদুর হয়ে তৃণমূল দলে ঢুকেছে ।"
অন্যদিকে লোকসভা ভোটে কে কোন কেন্দ্রে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে তৃণমূলের তরফে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও ঘোষণা হয়নি । তবে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে বেশকিছু নাম নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে । সেই আবহে অর্জুনের প্রার্থী পদ ঠেকাতে তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকেরা যে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তা এতেই স্পষ্ট ৷
আরও পড়ুন: