জলপাইগুড়ি, 28 মার্চ: লোকসভা নির্বাচনে জলপাইগুড়িতে বিজেপির ভোট প্রচারের ইস্যু ‘বাংলাদেশ’ । গতবার বিজেপির প্রচারের ইস্যু ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেলপথ । এবারের ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর ।
2019 সালে লোকসভা নির্বাচনের বিজেপি প্রার্থী জয়ন্তকুমার রায়ের ভোট প্রচারের ইস্যু ছিল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য়ে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রুটে রেলপথ চালু করা । সাংসদ হয়ে সেটা বাস্তবায়িত করেছেন তিনি । নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা পর্যন্ত চলছে মিতালি এক্সপ্রেস । এবার বিজেপি প্রার্থী মূল ইস্যু করছেন ভারত থেকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে তেঁতুলিয়া করিডর চালু করা । বিজেপি প্রার্থী জয়ন্তকুমার রায়ের দাবি, তেঁতুলিয়া করিডর হয়ে গেলে জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতার দূরত্ব অনেক কমে যাবে ।
উল্লেখ্য, 1965 সাল থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া ভারত-বাংলাদেশের হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেলপথটি চালুর দাবি ছিল দীর্ঘদিনের ।2019 সালে বিজেপি প্রার্থী হয়ে জয়ন্ত রায় ওই রেলপথ চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৷ ভোটে জিতে প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন তিনি ৷ স্থানীয় মানুষের আশা তিনি এবারও ভোটে জিতলে কথা রাখবেন ৷ চালু করবেন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে তেঁতুলিয়া করিডর ৷
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের চাউলহাটি বর্ডার থেকে শুরু তেঁতুলিয়া করিডরের । এই করিডর ভারতের উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়াতে গিয়ে জুড়বে । মাঝে থাকবে বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে 4.2 কিলোমিটার রাস্তা ৷ এর করিডর বাস্তবায়িত হলেই উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে কলকাতার দূরত্ব কমবে ৷ জলপাইগুড়ি থেকে এখন কলকাতার দূরত্ব 576 কিলোমিটার ৷ এই করিডর চালু হলে, তা হবে 388 কিলোমিটার হয়ে যাবে ।
এর অর্থ 188 কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে । ফলে কয়েক ঘণ্টা সময় বাঁচবে । গাড়ির জ্বালানি কমবে । পরিবহণ খরচও কমে যাবে । জলপাইগুড়ি-সহ পাশ্ববর্তী এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন যেমন হবে, তেমনই সুবিধাও হবে । বর্তমানে শিলিগুড়ি ভৌগলিক কারণে উন্নত হয়েছে । এই করিডর চালু হলে ভারতের হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে । তাছাড়া এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের টাকায় বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও ভারতের মধ্যে একটি করিডর হচ্ছে । তেঁতুলিয়ার অংশ এতে যুক্ত হলে, তা আরও কার্যকরী হবে ৷
প্রসঙ্গত, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের দহগ্রাম পাটগ্রামের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করার জন্য ভারতের তিনবিঘা করিডর বাংলাদেশের মানুষকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে । 2011 সালে ভারতের তিনবিঘা করিডর বাংলাদেশের মানুষকে 24 ঘণ্টার ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে । তিনবিঘা করিডর দিয়েই দুই অংশের মানুষের যাতায়াত করছেন । তিনবিঘা করিডর ভারত না দিলে বাংলাদেশের এই অংশের মানুষের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যেত ।
এর প্রেক্ষিতেই এই তেঁতুলিয়া করিডর চালুর দাবি 1980 সাল থেকে উঠছে ৷ সেটা জানেন বলেই ভোট প্রচারে এই ইস্যুটিকে বারবার তুলে ধরছেন জয়ন্ত রায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘তেঁতুলিয়া করিডর নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা চলছে । এবার বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর দিয়ে রেলপথ যদি একটা করা যায়, তার কথাও চলছে । কলকাতা থেকে জলপাইগুড়ির রাস্তা যেমন কমে যাবে, তেমন সময়ও বাঁচবে । উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ আরও সহজ হবে । শিলিগুড়ির উপর আর ভরসা করতে হবে না । বিকল্প একটা পথ তৈরি হবে ।’’
এই নিয়ে স্থানীয় গাড়ি চালক অবিনাশ দাস বলেন, ‘‘তেঁতুলিয়া করিডোর চালু হলে আমাদের রোজগার বাড়বে । ভাড়া বেশি হবে। ট্রেনের স্টপেজ বাড়বে ।’’ আর এই কাজ সাংসদ জয়ন্ত রায়ের হাত ধরেই সম্ভব বলে মনে করছেন জলপাইগুড়ির প্রবীণ নাগরিক প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তাঁর কথায়, ‘‘এর আগে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রেলপথ জয়ন্ত রায়ের আমলেই হয়েছে ।তেঁতুলিয়া করিডর হলে উত্তর দিনাজপুরের লাভ হবে ৷ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে এলাকায় উন্নতি হবে । রানিনগর থেকে এই রেলপথটি ঘুরিয়ে দিলে অসম ও ত্রিপুরার সঙ্গে যোগাযোগ আরও সহজ হবে ।’’
আরও পড়ুন: