সিমলা, 2 মার্চ: রাজ্যসভার নির্বাচনে হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেস হেরে যাওয়ার পর থেকেই ওই রাজ্য়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে সকলের নজর এখন বিক্রমাদিত্য সিংয়ের উপর ৷ তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় রহস্য ৷ তিনি এখন নয়াদিল্লিতে রয়েছেন ৷
সূত্রের খবর, সেখানে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করতে পারেন ৷ সরকারিভাবে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠকের জন্য দিল্লি গিয়েছেন বিক্রমাদিত্য সিং ৷ কিন্তু তিনি যদি অমিত শাহ বা জেপি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করেন, তাহলে পুরো চিত্রটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে ৷
প্রসঙ্গত, রাজ্যসভার নির্বাচনে ছ’জন কংগ্রেস বিধায়ক ক্রস ভোটিং করায় অভিষেক মনু সিংভি হারতে হয় ৷ তখন থেকেই হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখদেব সিং সুখুর সরকার সংকটে রয়েছে ৷ পরিস্থিতি সামলাতে ছয় বিদ্রোহী বিধায়কের পদ খারিজ করা হয়েছে ৷ গত 28 ফেব্রুয়ারি বিক্রমাদিত্য সিং পদত্য়াগ করার কথা ঘোষণা করা হলেও, তাঁকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে ৷
বিক্রমাদিত্যর মন্ত্রিত্ব ছাড়ার ঘোষণার পর তাঁর সঙ্গে দু’জন বিধায়ক ছিলেন ৷ তাঁদের একজন নন্দলাল ও দ্বিতীয়জন মোহন লাল ভক্তা ৷ পরিস্থিতি সামলাতে রামপুরের বিধায়ক নন্দলালকে সপ্তম অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান (ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমতুল পদ) করা হয়েছে ৷ তাঁকে এবং রোহরুর বিধায়ক মোহন লাল ভক্তার নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে ৷ তাঁরা এখন থেকে পুলিশের পাইলট কার পাবেন কনভয়ে ৷
ফলে এটা স্পষ্ট যে এখনও বিধায়কদের দল ছাড়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কংগ্রেস ৷ তাদের সেই শঙ্কা আরও বাড়িয়েছেন পদ চলে যাওয়া বিধায়ক রাজিন্দর রানা ৷ চাঁদনিগড়ের এই বিধায়ক দাবি করেছেন, হিমাচলে কংগ্রেস সরকার বাঁচাতে পারবে না ৷ কারণ, অনেক বিধায়কই তাঁর সঙ্গে যোগাযাগ রাখছেন ৷ তবে কতজন বিধায়ক আসবেন, সেটা নির্ভর করছে বিক্রমাদিত্য সিংয়ের পরবর্তী পদক্ষেপের উপর ৷
উল্লেখ্য, জানুয়ারি থেকেই বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন হিমাচলের এই কংগ্রেস নেতা ৷ সুখবিন্দর সিং সুখু সরকারের মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তিনি গত 22 জানুয়ারি রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যোগ দেন ৷ তাঁর এই পদক্ষেপ কংগ্রেসের হাইকমান্ডকে অমান্য করার সামিল ছিল ৷ কারণ, কংগ্রেসের তরফে ওই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করা হয়েছিল ৷ সেই সময় তিনি ও তাঁর মা তথা কংগ্রেস সাংসদ প্রতিভা সিং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন ৷
এছাড়া একাধিকবার তাঁকে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গড়করি প্রশংসা করতে দেখা গিয়েছে ৷ গত শুক্রবারও তিনি জানান যে বিজেপি কংগ্রেসের চেয়ে ভালো ৷ ফলে প্রশ্ন উঠছে, যে এগুলো কি তাঁর বিজেপিতে যোগদানের ইঙ্গিত ? সেইদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল ৷ আর এই জল্পনা যদি সত্যি হয়, তাহলে তা হিমাচলের রাজনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চমক হবে ৷
কারণ, হিমাচলে কংগ্রেস ও বিক্রমাদিত্যার বাবা বীরভদ্র সিং ছিলেন কার্যত সমার্থক ৷ তাঁকে সেখানে জননেতা হিসেবে মানা হয় ৷ তিনি বহুবার কংগ্রেসের হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্য করেছেন ৷ জনসমর্থন থাকায় কখনোই তাঁকে বিপাকে ফেলেনি কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ হিমাচল প্রদেশে ছ’বার মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি ৷ কেন্দ্রও মন্ত্রী হয়েছেন ৷ হিমাচলে কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন ৷ লাল বাহাদুর শাস্ত্রীকে দেখে তিনি রাজনীতিতে আসেন ৷ কাজ করেছেন ইন্দিরা গান্ধি থেকে মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ৷
আরও পড়ুন: