নয়াদিল্লি, 24 ফেব্রুয়ারি: লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই বিভিন্ন রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করছে কংগ্রেস ৷ চলতি সপ্তাহে উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে এবং দিল্লি, গুজরাত ও হরিয়ানায় আম আদমি পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করেছে কংগ্রেস ৷ আগামী কয়েকদিনের মধ্য়ে আরও বেশ কয়েকটি রাজ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করে ফেলবে রাহুল গান্ধির দল ৷ এমনটাই জানিয়েছেন এআইসিসি-র একজন সিনিয়র সদস্য ৷
কিন্তু সেই তালিকায় কি থাকবে পশ্চিমবঙ্গ ? কারণ, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি বাংলায় একাই লড়াই করবেন ৷ 42টি আসনের মধ্যে কংগ্রেসকে দু’টি আসন ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ৷ কংগ্রেস রাজি না হওয়ায় সব আসনে তৃণমূল একাই লড়বে বলে তিনি জানান ৷ যদিও কংগ্রেস এখনও আশা ছাড়তে নারাজ ৷ অন্তত এআইসিসি-র ওই সিনিয়র সদস্যর কথাতেই তা স্পষ্ট হয়েছে ৷
তিনি বলেন, “উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লির পরে, বিহার, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু ও মহারাষ্ট্র আলোচনা চলছে । আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই চার রাজ্যে জোট ঘোষণা করা হবে । পশ্চিমবঙ্গ এবং জম্মু ও কাশ্মীরে আলোচনা চলছে ৷ সেখানে এই চারটি রাজ্যের পরে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হতে পারে ।”
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক পাঁচ রাজ্য়ের ভোটের সময় থেকেই সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেসের মধ্যে টানাপোড়েন স্পষ্ট হচ্ছিল ৷ রাহুল গান্ধির ভারত জোড়ো ন্য়ায় যাত্রাতেও দেখা যায়নি সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবকে ৷ সেই সময় মনে হচ্ছিল যে লোকসভায় কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টিকে আলাদাভাবে লড়াই করতে দেখা যাবে ৷ কিন্তু গত 21 ফেব্রুয়ারি সপা ও কংগ্রেসের মধ্যে উত্তরপ্রদেশে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয় ৷
তার পরই শোনা যায় যে আপের সঙ্গেও আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে কংগ্রেস নেতাদের ৷ শনিবার আপের সঙ্গেও আসন সমঝোতা ঘোষণা হয়েছে ৷ উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ইনচার্জ অবিনাশ পান্ডের মতে, আসন সমঝোতা করার বিষয়টি গতি পেয়েছে উত্তরপ্রদেশে সপার সঙ্গে জোট চূড়ান্ত হওয়ার পর ৷ তাই তাঁর অন্য রাজ্যগুলিতেও শরিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব মিটে যাবে ৷
এক সময় অবশ্য অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি দিল্লিতে একাই লড়াই করবেন ৷ তার পরও দিল্লিতে 4-3 ফর্মুলায় জোট সম্পন্ন হয়েছে ৷ তাছাড়া গুজরাতে কংগ্রেস তাদের জন্য দু’টি আসন ছাড়ছে ৷ সেই দু’টি আসনের মধ্যে অন্যতম ভারুচ ৷ সেখানে ভোটে লড়ার অপেক্ষায় ছিলেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেলের মেয়ে মুমতাজ প্যাটেল ৷ এই নিয়ে দিল্লি কংগ্রেসের এক নেতা বললেন, “আমরা জোটের স্বার্থে স্থানীয় নেতাদের চাহিদা সত্ত্বেও আপ-কে ভারুচ আসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আপও আমাদের চণ্ডীগড় আসন দিতে রাজি হয়েছে এবং দক্ষিণ গোয়া আসনের দাবি ছেড়ে দিয়েছে ।”
নারাজ অরবিন্দ কেজরিওয়াল যখন রাজি হয়েছেন, তখন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের ‘মান’ও ভাঙানো যাবে বলেই আশাবাদী কংগ্রেস ৷ আর তা যদি সম্ভব হয়, সেটা চলতি মাসের মধ্যেই হবে ৷ কারণ, কংগ্রেসের অন্দরের খবর এ মাসের মধ্যেই আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করে ফেলতে আগ্রহী কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ৷ মহারাষ্ট্রে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে ইতিমধ্যে উদ্ধব ঠাকরে ও শরদ পাওয়ারের সঙ্গে রাহুল গান্ধি কথা বলেছেন ৷ কংগ্রেস সূত্রে খবর, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস 38টির মধ্য়ে 18টি আসনে লড়াই করতে পারে ৷ বাকিগুলিতে লড়বে শিবসেনা (ইউবিটি) ও এনসিপি (শরদচন্দ্র পাওয়ার) ৷
মহারাষ্ট্রের মতো ঝাড়খণ্ড ও বিহারেও রাজ্যস্তরে জোটে রয়েছে কংগ্রেস ৷ সেখানেও আসন সমঝোতা নিয়ে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে কংগ্রেস ৷ সূত্রের খবর, বিহারে 11টি আসনে (মোট আসন 40) ও ঝাড়খণ্ডে 9টি আসনে (মোট আসন 14) লড়তে পারে কংগ্রেস ৷ তামিলনাড়ুতে তারা 9টি (মোট আসন 39) আসনে প্রার্থী দেবে বলে জোট শরিক ডিএমকের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে ৷
শরিকরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই নীতিকেই মান্যতা দিয়েই কংগ্রেস আসন সমঝোতার পথে এগোচ্ছে বলে এক নেতা জানালেন ৷ তিনি আবার কংগ্রেসের প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ার মধ্যেও রয়েছেন ৷ জোটের পাশাপাশি তাই প্রার্থী ঠিক করার কাজও চলছে ৷ ওই নেতা বললেন, “দেখুন, সব আসনে একসঙ্গে নজর দেওয়ার কোনও মানে হয় না । আমরা একটি রাজ্যে একটি জোট চূড়ান্ত করার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে সমীক্ষা শুরু হবে । স্ক্রিনিং প্যানেল নামগুলিকে বাছাই করবে এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি বা সিইসি-র কাছে পাঠাবে । সিইসি-র কাছে সাধারণত প্রতি আসনে দু’জনের বেশি নাম পাঠানো হবে না ।’’
আর কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক যেকোনও সময় ডাকা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ওই কমিটির সদস্য ছত্তিশগড়ের কংগ্রেস নেতা টিএস সিং দেও ৷ তিনি জানিয়েছেন, সেটা ফেব্রুয়ারির শেষেও হতে পারে ৷ আবার মার্চের শুরুতেও হতে পারে ৷ কংগ্রেসের একটি সূত্রের দাবি, যে আসনগুলিতে কোনও শরিকের সঙ্গে কোনও বিবাদ নেই ৷ সেই আসনগুলিতে প্রার্থীদের নাম আগে ঘোষণা হতে পারে ৷
2019 সালে লোকসভায় 543টি আসনের মধ্য়ে কংগ্রেস জিতেছিল 52 আসনে ৷ সেই আসনগুলির প্রার্থীদের নামই প্রথম তালিকায় থাকবে ৷ তার ভোট ঘোষণা হওয়ার ধাপে বাকি প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে ৷ এখন প্রশ্ন হল, 2019 সালে বাংলা থেকে দু’টি আসন জিতেছিল কংগ্রেস ৷ একটি ছিল মালদা দক্ষিণ ৷ আর দ্বিতীয়টি ছিল বহরমপুর ৷ তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ার আগেই কি ওই দুই আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দেবে কংগ্রেস ? নাকি আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হওয়া বা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে ? উত্তর জানতে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতেই হবে ৷
আরও পড়ুন: