মালদা, 31 জানুয়ারি: ঢিল মেরে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধির গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকারকে নিশানা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী ৷ তাঁর অভিযোগ, রাহুলের ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা নিয়ে যাতে মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়, সেটাই তৈরি করতে চাইছে প্রশাসন ও সরকার ৷
বুধবার অধীর চৌধুরী বলেন, “বিহারে কোনও সমস্যা হয়নি ৷ কিন্তু এখানে রাহুল গান্ধির সঙ্গে পদে পদে অসহযোগিতা করা হচ্ছে ৷ অথচ মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রা কিংবা বক্তব্য রাখায় কোনও অসুবিধে নেই ৷ এখানে পুলিশেরও দেখা নেই ৷ আসলে প্রশাসন আর সরকার চাইছে, এমন কিছু হোক যাতে রাহুল গান্ধির যাত্রা নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় ৷ রাহুল গান্ধির মতো ব্যক্তিত্ব থাকলে মানুষের ভিড় হবেই ৷ কিন্তু এখানে পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়েই ব্যস্ত ৷ এসব নিয়ে পুলিশকে অভিযোগ জানিয়ে কোনও কাজ নেই ৷ এখানকার পুলিশ অন্ধ৷ এরা সব দেখেও কিছু দেখে না ৷”
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা নিয়ে কোচবিহারে প্রবেশ করেছিলেন রাহুল গান্ধি ৷ সেদিন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ৷ ফলে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতা রাহুল গান্ধির নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল ৷ এরপরেই দলীয় নেতার নিরাপত্তার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ৷ এর পরবর্তী সময়ে রাহুলের কর্মসূচিতে যথেষ্ট ভালো পুলিশি নিরাপত্তা লক্ষ্য করা গিয়েছে ৷ জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়িতে নির্বিঘ্নেই হয়েছে তাঁর ভারতজোড়ো ন্যায় যাত্রা ৷ তাল ফের কাটল মালদায় ৷
বুধবার বিহারের কাটিহার থেকে হরিশ্চন্দ্রপুরে প্রবেশ করে রাহুলের যাত্রা ৷ সকাল থেকেই তাঁকে একবার দেখতে রাস্তার দু’ধারে ছিল মানুষের ভিড় ছিল ৷ তবে তিনি কোনও বক্তব্য না রাখায় হরিশ্চন্দ্রপুরের কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয় ৷ প্রবল ভিড় ঠেলে রাহুলের গাড়ি দিল্লি দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় যেতেই ভিড়ের মধ্যে থেকে ঢিল উড়ে আসে ৷ ভেঙে যায় রাহুলের ছোট গাড়ির পিছনের কাচ ৷ তখন সেই গাড়িতেই ছিলেন তিনি ৷ এই নিয়ে আলোড়ন পড়ে যায় গোটা এলাকায় ৷ ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতৃত্ব গোটা ঘটনার দায় প্রশাসনের কাঁধে চাপিয়েছে ৷ তাঁদের নিশানায় রয়েছে তৃণমূলও ৷
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, “রাহুলজির ন্যায় যাত্রা নিয়ে প্রথম থেকেই অসহযোগিতা করছে মালদা জেলা প্রশাসন ৷ আমরা ভালুকায় সেচ দফতরের বাংলোয় তাঁর মধ্যাহ্নভোজনের ব্যবস্থা করার কথা ভেবেছিলাম ৷ কিন্তু একজন সর্বভারতীয় নেতাকে সেই বাংলো ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি প্রশাসন ৷ অনেক খুঁজে শেষ পর্যন্ত দেবীপুর লাইব্রেরি মাঠে তাঁর লাঞ্চের ব্যবস্থা করেছি ৷ রাহুলজির ন্যায় যাত্রা উপলক্ষ্যে এখানে অনেক পতাকা, ব্যানার, ফ্লেক্স লাগানো হয়েছিল ৷ তার উপর পালটা ছবি লাগানো হয়েছে ৷ এসব শুধু অসহযোগিতা নয়, বিরোধিতা ও সংকীর্ণতাও বটে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আজ রাহুলজির গাড়ির কাচ ভেঙেছে ৷ এই বাংলার সংস্কৃতি অতিথি দেব ভব ৷ শত্রুতা থাকলেও আমরা অতিথিদের অবজ্ঞা করি না ৷ সেখানে রাহুল গান্ধিকে কোচবিহার থেকে প্রতিপদে অপমান করা হচ্ছে ৷ তাঁকে বাধা দেওয়া হচ্ছে, বক্তব্য রাখতে দেওয়াও হচ্ছে না ৷ আজ ঘটনার সময় আমি গাড়িতে ছিলাম ৷ কেউ পিছন থেকে ঢিল ছুড়ে রাহুলজির গাড়ির কাচ ভেঙেছে ৷ এসব পুলিশ বলতে পারবে ৷ প্রশাসন এই ঘটনার দায় এড়াতে পারে না ৷ তবে প্রশাসনও তো কারও নির্দেশে পরিচালিত হয় !”
আরও পড়ুন: