ETV Bharat / opinion

আধুনিকীকরণ ও স্বনির্ভরতার দিশারী প্রতিরক্ষা বাজেট

Defence Budget 2024: সাম্প্রতিক অন্তর্বর্তী বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ তবে চিনের প্রতিরক্ষা বাজেটের সঙ্গে পাল্লা দিতে ভবিষ্যতে আরও কিছু তহবিল তৈরি হতে পারে । লিখেছেন ড. রাভেল্লা ভানু কৃষ্ণ কিরণ ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 13, 2024, 6:36 PM IST

সাম্প্রতিক অন্তর্বর্তী বাজেটে 2024-25 আর্থিক বছরের জন্য প্রতিরক্ষা খাতে 6,21,540.85 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । যা গত বছরের বরাদ্দের থেকে সামান্য বেশি, অর্থাৎ বরাদ্দ বেড়েছে 5.93 লক্ষ কোটি টাকা । মোট বাজেটের 13.04% হল এই বরাদ্দ, যা চিন থেকে ক্রমবর্ধমান হুমকির মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা এবং স্বনির্ভরতা ও রফতানি প্রচারের মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত দেয় । 2024-25 এর জন্য প্রতিরক্ষায় এই বরাদ্দ 2022-23 সালের বরাদ্দের তুলনায় 18.35% বেশি এবং 2023-24 এর বরাদ্দের থেকে 4.72% বেশি ৷

প্রতিরক্ষা বাজেট চারটি বিভাগে বিভক্ত - প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের (মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স বা এমওডি) বেসামরিক ব্যয়, প্রতিরক্ষা পরিষেবা রাজস্ব ব্যয়, মূলধন ব্যয়, বেতন-ভাতা ও প্রতিরক্ষা পেনশন । প্রতিরক্ষা বাজেটের 4.11% খরচ হয় এমওডি-এর অধীনে থাকা বেসামরিক সংস্থাগুলির জন্য, ভরণপোষণের জন্য রাজস্ব ব্যয় এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদের অপারেশনাল প্রস্তুতির জন্য খরচ 14.82%, 27.67% যায় নতুন অস্ত্র এবং সামরিক ব্যবস্থা কেনার জন্য, বেতনের জন্য 30.68% এবং প্রতিরক্ষা কর্মীদের ভাতা ও প্রতিরক্ষা পেনশনের জন্য খরচ হয় 22.72%।

সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য মূলধন ব্যয় ভারত সরকার 2023-24 বাজেটের তুলনায় বাড়িয়েছে । এ বছরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট 2024-25 সামরিক খাতে মূলধন ব্যয়ের জন্য 1.72 লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ৷ যা 2023-24 সালে বরাদ্দ 1.62 লক্ষ কোটি টাকা থেকে 6.2% বেশি । প্রতিরক্ষা পরিষেবা বিমান এবং এরো ইঞ্জিনের জন্য মূলধন ব্যয় 40,777 কোটি টাকা করা হয়েছে, যখন মোট 'অন্যান্য সরঞ্জামের' জন্য 62,343 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয় । নৌ বহরের জন্য 23,800 কোটি টাকা ও নৌ ডকইয়ার্ড প্রকল্পের জন্য 6,830 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ।

2024-25 সালে বরাদ্দটি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর লং টার্ম ইন্টিগ্রেটেড পারস্পেকটিভ প্ল্যান (এলটিআইপিপি)-এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতার শূন্যস্থান পূরণ করার উদ্দেশ্যে, নতুন অস্ত্র, বিমান, যুদ্ধজাহাজ ক্রয়ের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং অন্যান্য সামরিক হার্ডওয়্যার কেনার জন্য রাখা আছে । এর মধ্যে রয়েছে প্রচলিত সাবমেরিন বোর্ডে এয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রপালশন সিস্টেম সহ, 4.5 জেনারেশন কমব্যাট জেট এবং শিকারী ড্রোন ।

মোট রাজস্ব ব্যয় 4,39,300 কোটি টাকায় নামানো হয়েছে ৷ যার মধ্যে 1,41,205 কোটি টাকা প্রতিরক্ষা পেনশনের জন্য আলাদা করা হবে, 2, 82,772 কোটি টাকা প্রতিরক্ষা পরিষেবার জন্য, 15,322 কোটি টাকা এমওডি-এর অধীনে বেসামরিক সংস্থাগুলির জন্য আলাদা রাখা হয়েছে । 2024-25 সালের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর রাজস্ব ব্যয় 1,92,680 কোটি টাকা, যেখানে নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীকে যথাক্রমে 32,778 কোটি এবং 46,223 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । রাজস্ব ব্যয় 2023-24 বাজেটের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দোকান, খুচরো, মেরামত, এবং অন্যান্য পরিষেবার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি নির্দেশ করে । উদ্দেশ্য হল, সর্বোত্তম রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা এবং সহায়তা ব্যবস্থা প্রদান করা ৷

এটি বিমান এবং জাহাজ-সহ সমস্ত প্ল্যাটফর্ম এবং সেই সঙ্গে গোলাবারুদ সংগ্রহ ও সম্পদের গতিশীলতায় সশস্ত্র বাহিনীর দৈনিক ব্যয়ও সহজতর করে ৷

ভারত-চিন সীমান্তে অব্যাহত মুখোমুখি সংঘর্ষের মধ্যেই 2024-25 বছরের জন্য সরকার বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনের বরাদ্দ 6,500 কোটি (2023-24-এর থেকে 30% বেশি এবং 2021-22-এর থেকে 160% বেশি) বাড়িয়েছে, যার ফলে কৌশলগত প্রচারের জন্য সীমান্ত এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ উন্নতির লক্ষ্যে এটি করা হয়েছে ৷ 13,700 ফুট উচ্চতায় লাদাখের নিওমা এয়ারফিল্ড সেতু সংযোগ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপে ভারতের দক্ষিণতম পঞ্চায়েত এবং কৌশলগত হিমাচলপ্রদেশের শিঙ্কু লা টানেল এবং অরুণাচল প্রদেশের নেচিফু টানেলও এই আওতায় রয়েছে ৷

2024-25 এর জন্য ভারতীয় কোস্ট গার্ডের জন্য বরাদ্দ হল 7.651.80 কোটি টাকা, যা 2023-24 সালের বরাদ্দের তুলনায় 6.31% বেশি ৷ এর মধ্যে 3,500 কোটি টাকা হতে হবে দ্রুত চলমান অধিগ্রহণের সুবিধার্থে ৷ এর ফলে সমুদ্রের সম্মুখীন উদীয়মান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উৎসাহ মিলবে এবং অন্যান্য দেশের জন্য মানবিক সহায়তাও সরবরাহ করতে পারবে ।

প্রতিরক্ষা মূলধন ব্যয় বরাদ্দের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আত্মনির্ভরতার প্রচারে 'আত্মনির্ভর ভারত অভিযান'-এর অংশ হিসেবে 2020 সাল থেকেই সংস্কার পদক্ষেপগুলি চলছে । 'ডিপ-টেক'প্রযুক্তি (যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশ, রসায়ন ইত্যাদি)-কে আরও শক্তিশালী করতে এক লক্ষ কোটি টাকার কর্পাস প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে ৷ প্রযুক্তি-কোম্পানিগুলিকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং স্টার্ট-আপগুলিকে ট্যাক্স সুবিধা প্রদান করে প্রতিরক্ষা খাতে আধুনিকীকরণকে আরও গতি আনা হবে । প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সদ্য ঘোষিত এই পরিকল্পনার উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড, অশোক লেল্যান্ড লিমিটেড, জেন, টেকনোলজি লিমিটেড ম্যাগাজোন ডক শিপইয়ার্ড লিমিটেডের মতো সংস্থাগুলির উপর ৷

ডিআরডিও-র জন্য বাজেট বরাদ্দ 2023-24 সালের 23,263.89 কোটি থেকে 2024-25 সালে 23,855 কোটি টাকা করা হয়েছে ৷ এই বরাদ্দের একটি বড় অংশ 13,208 কোটি টাকা মূলধন ব্যায়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৷ যাতে নতুন প্রযুক্তির বিকাশে ডিআরডিওকে শক্তিশালী করা, মৌলিক গবেষণায় জোর দেওয়া যায় 'ডেভেলপমেন্ট-কাম-প্রোডাকশন পার্টনার' মডেলে। ডেভলপমেন্ট ফান্ড স্কিম 60 কোটি টাকা হয়েছে, যা বিশেষ করে নতুন স্টার্ট-আপ, এমএসএমই এবং একাডেমিয়ায় আগ্রহী তরুণদের আকৃষ্ট করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ৷

2020 সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের পর ভারত তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক ব্যয়কারী ৷ ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাজেট 2018 সাল থেকে ধীরে ধীরে বাড়ছে ৷ স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, 2018 এর জন্য প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল 66.26বি মার্কিন ডলার, যা 2017 থেকে 2.63% বেশি; 2019 এর জন্য ছিল 71.47বি মার্কিন ডলার, এটি 2018 সালের থেকে 7.86% বেশি; 2020-এর জন্য বরাদ্দ ছিল 72.94বি মার্কিন ডলার, যা 2019 সালের থেকে 2.05% বেশি; 2021 এর জন্য ছিল 76.60বি মার্কিন ডলার, যা 2020 থেকে 5.02% বৃদ্ধি পেয়েছে । দ্য লোই ইনস্টিটিটিউট এশিয়া পাওয়ার ইনডেক্স তার 2023 সংস্করণে 'আনুমানিক সামরিক ব্যয়ের পূর্বাভাস'-এ 2030 সাল নাগাদ ভারতের সামরিক ব্যয় 183 বিলিয়ন ডলার হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ৷ সেই সময় ভারতের আগে থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (977 বিলিয়ন ডলার) এবং চিন (531 বিলিয়ন ডলার)। চিনের প্রতিরক্ষা বাজেট ভারতের তুলনায় উচ্চতর হতে চলেছে । 2023-24 ভারত এর জন্য ব্যয় করেছে 72.6 বিলিয়ন ৷ আর চিনের সামরিক বাহিনীর বরাদ্দ 225 বিলিয়ন ডলার ৷

প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি যুক্তিসঙ্গত কিন্তু বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সামরিক আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রাখসে এই বৃদ্ধি যথেষ্ট নয় ৷ ভারত ও চিনের সামরিক ব্যয়ের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে ৷ চিনের প্রতিরক্ষা বাজেটের সঙ্গে ভারতের কোনও মিল নেই । তবে প্রযুক্তি চালিত আধুনিকীকরণে জোর দিয়ে এবং আত্মনির্ভরতার জোরে চিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে দিল্লি ৷ প্রকৃতপক্ষে, বর্ধিত বাজেটে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে বরাদ্দ থাকবে বিশেষ প্রযুক্তির প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে সজ্জিত করা, বিমান, যুদ্ধজাহাজ এবং অন্যান্য সামরিক হার্ডওয়্যারের উপর। এ দিকে, গার্হস্থ্য দ্রব্য ক্রয়ে বর্ধিত শেয়ার দেশীয় শিল্প এবং চাহিদাকে উত্সাহিত করতে পারে ৷ বিদেশি নির্মাতারা মেক ইন ইন্ডিয়ার অংশ হবে । ভবিষ্যতে, পেনশন ব্যয় কমিয়ে স্বল্পমেয়াদি ডিউটি স্কিম 'অগ্নিপথ'-এর জন্য তহবিল উত্পন্ন করা হতে পারে ৷

আরও পড়ুন:

  1. দরিদ্র, কৃষক, মহিলা ও যুব-অন্তর্বর্তী বাজেটে চার শ্রেণির উপর বাড়তি গুরুত্ব নির্মলার
  2. শিক্ষাকে 'গৈরিকীকরণ' করার চেষ্টা, বাজেট নিয়ে মত শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যর
  3. অন্তর্বর্তী বাজেট নিয়ে কী বলছে কলকাতা? শুনল ইটিভি ভারত

সাম্প্রতিক অন্তর্বর্তী বাজেটে 2024-25 আর্থিক বছরের জন্য প্রতিরক্ষা খাতে 6,21,540.85 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । যা গত বছরের বরাদ্দের থেকে সামান্য বেশি, অর্থাৎ বরাদ্দ বেড়েছে 5.93 লক্ষ কোটি টাকা । মোট বাজেটের 13.04% হল এই বরাদ্দ, যা চিন থেকে ক্রমবর্ধমান হুমকির মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা এবং স্বনির্ভরতা ও রফতানি প্রচারের মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত দেয় । 2024-25 এর জন্য প্রতিরক্ষায় এই বরাদ্দ 2022-23 সালের বরাদ্দের তুলনায় 18.35% বেশি এবং 2023-24 এর বরাদ্দের থেকে 4.72% বেশি ৷

প্রতিরক্ষা বাজেট চারটি বিভাগে বিভক্ত - প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের (মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স বা এমওডি) বেসামরিক ব্যয়, প্রতিরক্ষা পরিষেবা রাজস্ব ব্যয়, মূলধন ব্যয়, বেতন-ভাতা ও প্রতিরক্ষা পেনশন । প্রতিরক্ষা বাজেটের 4.11% খরচ হয় এমওডি-এর অধীনে থাকা বেসামরিক সংস্থাগুলির জন্য, ভরণপোষণের জন্য রাজস্ব ব্যয় এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদের অপারেশনাল প্রস্তুতির জন্য খরচ 14.82%, 27.67% যায় নতুন অস্ত্র এবং সামরিক ব্যবস্থা কেনার জন্য, বেতনের জন্য 30.68% এবং প্রতিরক্ষা কর্মীদের ভাতা ও প্রতিরক্ষা পেনশনের জন্য খরচ হয় 22.72%।

সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য মূলধন ব্যয় ভারত সরকার 2023-24 বাজেটের তুলনায় বাড়িয়েছে । এ বছরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট 2024-25 সামরিক খাতে মূলধন ব্যয়ের জন্য 1.72 লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ৷ যা 2023-24 সালে বরাদ্দ 1.62 লক্ষ কোটি টাকা থেকে 6.2% বেশি । প্রতিরক্ষা পরিষেবা বিমান এবং এরো ইঞ্জিনের জন্য মূলধন ব্যয় 40,777 কোটি টাকা করা হয়েছে, যখন মোট 'অন্যান্য সরঞ্জামের' জন্য 62,343 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয় । নৌ বহরের জন্য 23,800 কোটি টাকা ও নৌ ডকইয়ার্ড প্রকল্পের জন্য 6,830 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ।

2024-25 সালে বরাদ্দটি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর লং টার্ম ইন্টিগ্রেটেড পারস্পেকটিভ প্ল্যান (এলটিআইপিপি)-এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ সক্ষমতার শূন্যস্থান পূরণ করার উদ্দেশ্যে, নতুন অস্ত্র, বিমান, যুদ্ধজাহাজ ক্রয়ের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং অন্যান্য সামরিক হার্ডওয়্যার কেনার জন্য রাখা আছে । এর মধ্যে রয়েছে প্রচলিত সাবমেরিন বোর্ডে এয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রপালশন সিস্টেম সহ, 4.5 জেনারেশন কমব্যাট জেট এবং শিকারী ড্রোন ।

মোট রাজস্ব ব্যয় 4,39,300 কোটি টাকায় নামানো হয়েছে ৷ যার মধ্যে 1,41,205 কোটি টাকা প্রতিরক্ষা পেনশনের জন্য আলাদা করা হবে, 2, 82,772 কোটি টাকা প্রতিরক্ষা পরিষেবার জন্য, 15,322 কোটি টাকা এমওডি-এর অধীনে বেসামরিক সংস্থাগুলির জন্য আলাদা রাখা হয়েছে । 2024-25 সালের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর রাজস্ব ব্যয় 1,92,680 কোটি টাকা, যেখানে নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীকে যথাক্রমে 32,778 কোটি এবং 46,223 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । রাজস্ব ব্যয় 2023-24 বাজেটের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দোকান, খুচরো, মেরামত, এবং অন্যান্য পরিষেবার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি নির্দেশ করে । উদ্দেশ্য হল, সর্বোত্তম রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা এবং সহায়তা ব্যবস্থা প্রদান করা ৷

এটি বিমান এবং জাহাজ-সহ সমস্ত প্ল্যাটফর্ম এবং সেই সঙ্গে গোলাবারুদ সংগ্রহ ও সম্পদের গতিশীলতায় সশস্ত্র বাহিনীর দৈনিক ব্যয়ও সহজতর করে ৷

ভারত-চিন সীমান্তে অব্যাহত মুখোমুখি সংঘর্ষের মধ্যেই 2024-25 বছরের জন্য সরকার বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনের বরাদ্দ 6,500 কোটি (2023-24-এর থেকে 30% বেশি এবং 2021-22-এর থেকে 160% বেশি) বাড়িয়েছে, যার ফলে কৌশলগত প্রচারের জন্য সীমান্ত এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ উন্নতির লক্ষ্যে এটি করা হয়েছে ৷ 13,700 ফুট উচ্চতায় লাদাখের নিওমা এয়ারফিল্ড সেতু সংযোগ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপে ভারতের দক্ষিণতম পঞ্চায়েত এবং কৌশলগত হিমাচলপ্রদেশের শিঙ্কু লা টানেল এবং অরুণাচল প্রদেশের নেচিফু টানেলও এই আওতায় রয়েছে ৷

2024-25 এর জন্য ভারতীয় কোস্ট গার্ডের জন্য বরাদ্দ হল 7.651.80 কোটি টাকা, যা 2023-24 সালের বরাদ্দের তুলনায় 6.31% বেশি ৷ এর মধ্যে 3,500 কোটি টাকা হতে হবে দ্রুত চলমান অধিগ্রহণের সুবিধার্থে ৷ এর ফলে সমুদ্রের সম্মুখীন উদীয়মান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উৎসাহ মিলবে এবং অন্যান্য দেশের জন্য মানবিক সহায়তাও সরবরাহ করতে পারবে ।

প্রতিরক্ষা মূলধন ব্যয় বরাদ্দের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আত্মনির্ভরতার প্রচারে 'আত্মনির্ভর ভারত অভিযান'-এর অংশ হিসেবে 2020 সাল থেকেই সংস্কার পদক্ষেপগুলি চলছে । 'ডিপ-টেক'প্রযুক্তি (যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশ, রসায়ন ইত্যাদি)-কে আরও শক্তিশালী করতে এক লক্ষ কোটি টাকার কর্পাস প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে ৷ প্রযুক্তি-কোম্পানিগুলিকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং স্টার্ট-আপগুলিকে ট্যাক্স সুবিধা প্রদান করে প্রতিরক্ষা খাতে আধুনিকীকরণকে আরও গতি আনা হবে । প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সদ্য ঘোষিত এই পরিকল্পনার উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড, অশোক লেল্যান্ড লিমিটেড, জেন, টেকনোলজি লিমিটেড ম্যাগাজোন ডক শিপইয়ার্ড লিমিটেডের মতো সংস্থাগুলির উপর ৷

ডিআরডিও-র জন্য বাজেট বরাদ্দ 2023-24 সালের 23,263.89 কোটি থেকে 2024-25 সালে 23,855 কোটি টাকা করা হয়েছে ৷ এই বরাদ্দের একটি বড় অংশ 13,208 কোটি টাকা মূলধন ব্যায়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৷ যাতে নতুন প্রযুক্তির বিকাশে ডিআরডিওকে শক্তিশালী করা, মৌলিক গবেষণায় জোর দেওয়া যায় 'ডেভেলপমেন্ট-কাম-প্রোডাকশন পার্টনার' মডেলে। ডেভলপমেন্ট ফান্ড স্কিম 60 কোটি টাকা হয়েছে, যা বিশেষ করে নতুন স্টার্ট-আপ, এমএসএমই এবং একাডেমিয়ায় আগ্রহী তরুণদের আকৃষ্ট করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ৷

2020 সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের পর ভারত তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক ব্যয়কারী ৷ ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাজেট 2018 সাল থেকে ধীরে ধীরে বাড়ছে ৷ স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, 2018 এর জন্য প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল 66.26বি মার্কিন ডলার, যা 2017 থেকে 2.63% বেশি; 2019 এর জন্য ছিল 71.47বি মার্কিন ডলার, এটি 2018 সালের থেকে 7.86% বেশি; 2020-এর জন্য বরাদ্দ ছিল 72.94বি মার্কিন ডলার, যা 2019 সালের থেকে 2.05% বেশি; 2021 এর জন্য ছিল 76.60বি মার্কিন ডলার, যা 2020 থেকে 5.02% বৃদ্ধি পেয়েছে । দ্য লোই ইনস্টিটিটিউট এশিয়া পাওয়ার ইনডেক্স তার 2023 সংস্করণে 'আনুমানিক সামরিক ব্যয়ের পূর্বাভাস'-এ 2030 সাল নাগাদ ভারতের সামরিক ব্যয় 183 বিলিয়ন ডলার হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ৷ সেই সময় ভারতের আগে থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (977 বিলিয়ন ডলার) এবং চিন (531 বিলিয়ন ডলার)। চিনের প্রতিরক্ষা বাজেট ভারতের তুলনায় উচ্চতর হতে চলেছে । 2023-24 ভারত এর জন্য ব্যয় করেছে 72.6 বিলিয়ন ৷ আর চিনের সামরিক বাহিনীর বরাদ্দ 225 বিলিয়ন ডলার ৷

প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি যুক্তিসঙ্গত কিন্তু বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সামরিক আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রাখসে এই বৃদ্ধি যথেষ্ট নয় ৷ ভারত ও চিনের সামরিক ব্যয়ের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে ৷ চিনের প্রতিরক্ষা বাজেটের সঙ্গে ভারতের কোনও মিল নেই । তবে প্রযুক্তি চালিত আধুনিকীকরণে জোর দিয়ে এবং আত্মনির্ভরতার জোরে চিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে দিল্লি ৷ প্রকৃতপক্ষে, বর্ধিত বাজেটে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে বরাদ্দ থাকবে বিশেষ প্রযুক্তির প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে সজ্জিত করা, বিমান, যুদ্ধজাহাজ এবং অন্যান্য সামরিক হার্ডওয়্যারের উপর। এ দিকে, গার্হস্থ্য দ্রব্য ক্রয়ে বর্ধিত শেয়ার দেশীয় শিল্প এবং চাহিদাকে উত্সাহিত করতে পারে ৷ বিদেশি নির্মাতারা মেক ইন ইন্ডিয়ার অংশ হবে । ভবিষ্যতে, পেনশন ব্যয় কমিয়ে স্বল্পমেয়াদি ডিউটি স্কিম 'অগ্নিপথ'-এর জন্য তহবিল উত্পন্ন করা হতে পারে ৷

আরও পড়ুন:

  1. দরিদ্র, কৃষক, মহিলা ও যুব-অন্তর্বর্তী বাজেটে চার শ্রেণির উপর বাড়তি গুরুত্ব নির্মলার
  2. শিক্ষাকে 'গৈরিকীকরণ' করার চেষ্টা, বাজেট নিয়ে মত শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যর
  3. অন্তর্বর্তী বাজেট নিয়ে কী বলছে কলকাতা? শুনল ইটিভি ভারত
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.