ETV Bharat / opinion

জম্মু-কাশ্মীরে বাড়ছে জঙ্গি-কার্যকলাপ, কীভাবে মোকাবিলা করবে ভারত ? - Surge In Terror Attacks - SURGE IN TERROR ATTACKS

Surge In Terror Attacks: জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ ভারতকে এর মোকাবিলা করতে হবে ৷ জবাব দিতে হবে ৷ সেক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত হানা একটা বিকল্প হতে পারে ৷ তখন চিন কী অবস্থান নেয়, সেটাও দেখার ৷ এই নিয়েই লিখেছেন মেজর জেনারেল হর্ষ কাকর ৷

Representative Image
প্রতীকী ছবি (এএনআই)
author img

By Major General Harsha Kakar

Published : Jul 24, 2024, 6:12 PM IST

Updated : Jul 24, 2024, 8:22 PM IST

গত কয়েক মাসে জম্মু অঞ্চলে জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর অনেকে শহিদ হয়েছেন ৷ এর ফলে রাজনৈতিক মহলে ও সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে সরকার ও পরোক্ষভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর জবাব দেওয়ার চাপ তৈরি হয়েছে ৷ একই সঙ্গে উপত্যকায় সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ অনেকটাই কমেছে । তবে এর মানে এই নয় যে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ তবে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে ৷

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর যে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের শিকর হয়, তা বন্ধ করতে হলে আগে মদতদাতার (পাকিস্তান) খরচের ক্ষমতাকে খর্ব করতে হবে ৷ দুই দেশের মধ্যে কোনও অভিন্ন ভিত্তি না থাকায় আলোচনার মাধ্য়মে কখনোই সমাধান হবে না । যে অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি বেশি, সেই সব অঞ্চলে সন্ত্রাস সরে যাবে যেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে ৷ এটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ৷ এটাই জম্মু অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ।

সন্ত্রাসবাদীরা এমন ভূখণ্ডও বেছে নেবে, যা তাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেয় । এক্ষেত্রে ঘন জঙ্গল, আস্তানা করার জন্য গুহা ও নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) কাছাকাছি থাকা জঙ্গিদের জন্য সুবিধাজনক ৷ এই ধরনের ভূখণ্ডে ড্রোনের মতো ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার, যা লাইভ ইনপুট সরবরাহ করে, তাদের উপযোগিতা সীমিত । দৃশ্যমানতাও সীমাবদ্ধ থাকে । তার সঙ্গে রয়েছে জঙ্গিদের সমর্থকদের উপস্থিতিও ৷ এরা মূলত আর্থিক লাভ ও কখনও কখনও মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জঙ্গিদের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর যাতায়াত ও রসদ সংক্রান্ত আগাম তথ্য দেওয়ার কাজ করে । এটা তাদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হতে বাধা দেয় এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযানকে চ্যালেঞ্জিং করে তোলে ।

সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের সময় এমন কিছু রাজনৈতিক বিবৃতি সামনে এসেছিল, যেখানে বলা হয়েছিল যে পরিস্থিতি এমন স্তরে উন্নত হয়েছে, যেখানে সরকার কয়েকটি অঞ্চলে আফস্পা (আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট) তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে । একটি গুজবও ছড়ায় যে রাষ্ট্রীয় রাইফেল ব্যাটালিয়নের কয়েকটি কোম্পানিকে সরিয়ে নেওয়া হবে ৷ এগুলি ছিল তাড়াহুড়ো করে করা মূল্যায়ন ৷

লাদাখে অনুপ্রবেশের পরে, জম্মু সেক্টর থেকে কিছু সৈন্যকে এই অনুমানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল যে সন্ত্রাসবাদ কমে গিয়েছে ও পুনর্বিন্যাস সম্ভব । স্বল্পমেয়াদী মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা হয়েছিল । এর ফলে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেটাকেই ব্যবহার করা হয়েছে ৷ তবে যাদের সরানো হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনা হবে না ৷ তাই এখন অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে ।

জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদকে আরও বিস্তৃত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে । পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তা ঠিক করা হয়েছে । যদিও এর জন্য ধৈর্য লাগে৷ কারণ, অপারেশনগুলি তাড়াহুড়ো করা যায় না ও করা উচিত নয় । তাড়াহুড়ো করলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যাঁরা লড়াই করেন, তাঁদের হতাহতের আশঙ্কা বৃদ্ধি হয়৷ কারণ, পরিস্থিতি তখন সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষে চলে যায় । শুধুমাত্র শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সমাধান করা যাবে না । একটি ইন্টেলিজেন্স গ্রিড স্থাপন, ভূখণ্ডের আধিপত্য ও নিরলস সাধনা শেষ পর্যন্ত এই বিষয়টি পরিবর্তন করতে পারে ৷

নিযুক্ত সৈন্যদের প্রশিক্ষিত ও পরিচিত হতে সময় লাগবে, যাতে হতাহতের সংখ্যা ন্যূনতম নিশ্চিত করা যায় । ইন্টেলিজেন্স গ্রিডগুলোকে পুনরায় সক্রিয় করতে হবে । একটি রিপোর্টে বিশেষ বাহিনী মোতায়েনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যা ভূখণ্ডের সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত ও অপারেশনের প্রত্যাশিত প্রকৃতি জানবে । তাহলে বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি হবে ।

স্থানীয় গ্রামরক্ষী, যাঁরা সম্ভাব্য আস্তানা-সহ ভূখণ্ডের সঙ্গে তাল মেলাতে পারদর্শী, তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে । ইলেকট্রনিক মনিটরিং বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করবে, যদিও জঙ্গিদের কাছে থাকা নতুন প্রযুক্তির সরঞ্জামে তা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে । এটা ভাঙতে সময় লাগবে ৷ সম্ভাব্য অনুপ্রবেশের চেষ্টা কমাতে সন্ত্রাসবিরোধী গ্রিড শক্তিশালী করা হবে । ওভারগ্রাউন্ড কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হবে ৷ ফলে জঙ্গিরা তাদের সমর্থকদের থেকে বিচ্ছিন্ন হবে । এটা বোঝায় যে অভিযান চালানো হবে এবং রাষ্ট্রের সমস্ত উপাদান নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে ।

একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে যে নিজেদের অসামরিক ব্যক্তিরা যাতে হতাহতের শিকার না হন । 2003-04 সালে এই সেক্টরে পূর্বের অপারেশনগুলিতে স্থানীয় পশুপালকদের পাহাড়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছিল । এতে জঙ্গিদের আরও বিচ্ছিন্ন করতে সহায়তা করেছে । বর্তমানে একই পদ্ধতি কি অবলম্বন করা যেতে পারে ! সরকার স্থানীয়দের জন্য ন্যূনতমও অসুবিধা তৈরি করতে চায় না ৷

একই সঙ্গে চলছে অমরনাথ যাত্রা । এর নিরাপত্তার উপর জোর দেওয়া একটি অতিরিক্ত উদ্বেগের বিষয় । যদিও এই যাত্রাপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিযুক্ত সৈন্যরা একই নন ৷ তবে উদ্দেশ্য হল এই যাত্রার সময় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে । এই যাত্রা এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সেই সমস্ত মানুষের জন্য একটি জীবনরেখা, যাঁরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সমস্ত অংশ থেকে আগত তীর্থযাত্রীদের সহায়তা করে । তাঁদের বার্ষিক জীবিকাও নির্ভর করে এই যাত্রা নিরাপদে শেষ করার উপর ৷

জঙ্গিদের হাতে নিরাপত্তা বাহিনীর হতাহতের ঘটনা দেশকে কষ্ট দেয় । এটা প্রত্যাশিত৷ তবে এটা বাহিনীর সমালোচনা অথবা তাদের উপর চাপ তৈরি করার সময় নয় ৷ দেশের কোনও অলৌকিক ঘটনার আশা করাও উচিত নয় । এই অপারেশনের জন্য ধৈর্য ও বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রয়োজন ৷ এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে অভিযুক্ত জঙ্গিদের পাকিস্তানে ফেরার কোনও উপায় নেই । তারা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এখানে রয়েছে । তাদের কাছে একমুখী টিকিটই রয়েছে ।

জাতীয় পর্যায়ে আমাদের বিপজ্জনক দিকগুলি স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে । আন্তঃসীমান্ত হানা ও বালাকোটে হানা দেশের সংকল্পকে তুলে ধরেছিল ৷ কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রভাব শেষ হয়ে যায় ৷ আবার একটি পরিষ্কার বার্তা পাঠানোর প্রয়োজন আছে । নির্বাচনী প্রচারের সময় পালটা আঘাতের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি অতীতের অভিযান থেকে রাজনৈতিক লাভ করা সমাধান নয় । যতক্ষণ না এই ধরনের অভিযান বারবার হয়, ততক্ষণ এগুলো শুধুই রাজনৈতিক স্লোগান থেকে যায় ।

আমাদের পাকিস্তানের উদ্দেশ্য বুঝতে হবে ও এর মোকাবিলা করতে হবে । বর্তমানে পাকিস্তান সিপিইসি-তে জঙ্গিদের হুমকি নির্মূলের চিনা দাবি পূরণের জন্য তার পশ্চিম অঞ্চলের প্রদেশগুলির উপর মনোনিবেশ করতে বাধ্য হচ্ছে । অন্যদিকে অবশিষ্ট বাহিনী খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে মোতায়েন করা হচ্ছে । সেখানে অপারেশন পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে না ৷ ফলে পাক বাহিনীর হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে । আফগানিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ছে এবং যুদ্ধ আসন্ন ।

জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের বৃদ্ধির উদ্দেশ্য ভারতকে অভ্যন্তরীণভাবে ব্যস্ত রাখা, যাতে পাকিস্তান কোনও হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে । প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর চিনের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনার ওপরও নজর রাখছে পাকিস্তান । তারা মনে করছে যে এর ফলে ভারত তাদের দিকে পালটা আক্রমণ থেকে বিরত থাকবে ৷ চিন ও পাকিস্তান ঐক্যবদ্ধভাবে যে কাজ করছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই । ভারতকে এরই মোকাবিলা করতে হবে ।

সরকারের সামনে বিকল্প আছে । নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করা ও পাকিস্তানের পোস্ট, গ্রাম থাকলেও জঙ্গি শিবিরগুলিকে আক্রমণ করা একটি বিকল্প হতে পারে । কিন্তু এক্ষেত্রেও প্রশ্নও রয়েছে ৷ তা হল, চিন কি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সক্রিয় হয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন করার চেষ্টা করবে ? এই নিয়ে মূল্যায়ন সরকারকে করতে হবে । পরবর্তী বিকল্প আন্তঃসীমান্ত হানা । এখানে আবার সরকারকে হামলা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে ।

পরিশেষে বলা যায়, বার্তা পৌঁছাতে হবে ৷ কিভাবে তা পৌঁছানো হবে, তা সরকারের সিদ্ধান্ত ৷

গত কয়েক মাসে জম্মু অঞ্চলে জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর অনেকে শহিদ হয়েছেন ৷ এর ফলে রাজনৈতিক মহলে ও সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে সরকার ও পরোক্ষভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর জবাব দেওয়ার চাপ তৈরি হয়েছে ৷ একই সঙ্গে উপত্যকায় সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ অনেকটাই কমেছে । তবে এর মানে এই নয় যে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ তবে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে ৷

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর যে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের শিকর হয়, তা বন্ধ করতে হলে আগে মদতদাতার (পাকিস্তান) খরচের ক্ষমতাকে খর্ব করতে হবে ৷ দুই দেশের মধ্যে কোনও অভিন্ন ভিত্তি না থাকায় আলোচনার মাধ্য়মে কখনোই সমাধান হবে না । যে অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি বেশি, সেই সব অঞ্চলে সন্ত্রাস সরে যাবে যেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে ৷ এটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ৷ এটাই জম্মু অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ।

সন্ত্রাসবাদীরা এমন ভূখণ্ডও বেছে নেবে, যা তাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেয় । এক্ষেত্রে ঘন জঙ্গল, আস্তানা করার জন্য গুহা ও নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) কাছাকাছি থাকা জঙ্গিদের জন্য সুবিধাজনক ৷ এই ধরনের ভূখণ্ডে ড্রোনের মতো ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার, যা লাইভ ইনপুট সরবরাহ করে, তাদের উপযোগিতা সীমিত । দৃশ্যমানতাও সীমাবদ্ধ থাকে । তার সঙ্গে রয়েছে জঙ্গিদের সমর্থকদের উপস্থিতিও ৷ এরা মূলত আর্থিক লাভ ও কখনও কখনও মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জঙ্গিদের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর যাতায়াত ও রসদ সংক্রান্ত আগাম তথ্য দেওয়ার কাজ করে । এটা তাদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হতে বাধা দেয় এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযানকে চ্যালেঞ্জিং করে তোলে ।

সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের সময় এমন কিছু রাজনৈতিক বিবৃতি সামনে এসেছিল, যেখানে বলা হয়েছিল যে পরিস্থিতি এমন স্তরে উন্নত হয়েছে, যেখানে সরকার কয়েকটি অঞ্চলে আফস্পা (আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট) তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে । একটি গুজবও ছড়ায় যে রাষ্ট্রীয় রাইফেল ব্যাটালিয়নের কয়েকটি কোম্পানিকে সরিয়ে নেওয়া হবে ৷ এগুলি ছিল তাড়াহুড়ো করে করা মূল্যায়ন ৷

লাদাখে অনুপ্রবেশের পরে, জম্মু সেক্টর থেকে কিছু সৈন্যকে এই অনুমানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল যে সন্ত্রাসবাদ কমে গিয়েছে ও পুনর্বিন্যাস সম্ভব । স্বল্পমেয়াদী মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা হয়েছিল । এর ফলে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেটাকেই ব্যবহার করা হয়েছে ৷ তবে যাদের সরানো হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনা হবে না ৷ তাই এখন অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে ।

জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদকে আরও বিস্তৃত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে । পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তা ঠিক করা হয়েছে । যদিও এর জন্য ধৈর্য লাগে৷ কারণ, অপারেশনগুলি তাড়াহুড়ো করা যায় না ও করা উচিত নয় । তাড়াহুড়ো করলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যাঁরা লড়াই করেন, তাঁদের হতাহতের আশঙ্কা বৃদ্ধি হয়৷ কারণ, পরিস্থিতি তখন সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষে চলে যায় । শুধুমাত্র শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সমাধান করা যাবে না । একটি ইন্টেলিজেন্স গ্রিড স্থাপন, ভূখণ্ডের আধিপত্য ও নিরলস সাধনা শেষ পর্যন্ত এই বিষয়টি পরিবর্তন করতে পারে ৷

নিযুক্ত সৈন্যদের প্রশিক্ষিত ও পরিচিত হতে সময় লাগবে, যাতে হতাহতের সংখ্যা ন্যূনতম নিশ্চিত করা যায় । ইন্টেলিজেন্স গ্রিডগুলোকে পুনরায় সক্রিয় করতে হবে । একটি রিপোর্টে বিশেষ বাহিনী মোতায়েনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যা ভূখণ্ডের সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত ও অপারেশনের প্রত্যাশিত প্রকৃতি জানবে । তাহলে বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি হবে ।

স্থানীয় গ্রামরক্ষী, যাঁরা সম্ভাব্য আস্তানা-সহ ভূখণ্ডের সঙ্গে তাল মেলাতে পারদর্শী, তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে । ইলেকট্রনিক মনিটরিং বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করবে, যদিও জঙ্গিদের কাছে থাকা নতুন প্রযুক্তির সরঞ্জামে তা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে । এটা ভাঙতে সময় লাগবে ৷ সম্ভাব্য অনুপ্রবেশের চেষ্টা কমাতে সন্ত্রাসবিরোধী গ্রিড শক্তিশালী করা হবে । ওভারগ্রাউন্ড কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হবে ৷ ফলে জঙ্গিরা তাদের সমর্থকদের থেকে বিচ্ছিন্ন হবে । এটা বোঝায় যে অভিযান চালানো হবে এবং রাষ্ট্রের সমস্ত উপাদান নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে ।

একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে যে নিজেদের অসামরিক ব্যক্তিরা যাতে হতাহতের শিকার না হন । 2003-04 সালে এই সেক্টরে পূর্বের অপারেশনগুলিতে স্থানীয় পশুপালকদের পাহাড়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছিল । এতে জঙ্গিদের আরও বিচ্ছিন্ন করতে সহায়তা করেছে । বর্তমানে একই পদ্ধতি কি অবলম্বন করা যেতে পারে ! সরকার স্থানীয়দের জন্য ন্যূনতমও অসুবিধা তৈরি করতে চায় না ৷

একই সঙ্গে চলছে অমরনাথ যাত্রা । এর নিরাপত্তার উপর জোর দেওয়া একটি অতিরিক্ত উদ্বেগের বিষয় । যদিও এই যাত্রাপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিযুক্ত সৈন্যরা একই নন ৷ তবে উদ্দেশ্য হল এই যাত্রার সময় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে । এই যাত্রা এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সেই সমস্ত মানুষের জন্য একটি জীবনরেখা, যাঁরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সমস্ত অংশ থেকে আগত তীর্থযাত্রীদের সহায়তা করে । তাঁদের বার্ষিক জীবিকাও নির্ভর করে এই যাত্রা নিরাপদে শেষ করার উপর ৷

জঙ্গিদের হাতে নিরাপত্তা বাহিনীর হতাহতের ঘটনা দেশকে কষ্ট দেয় । এটা প্রত্যাশিত৷ তবে এটা বাহিনীর সমালোচনা অথবা তাদের উপর চাপ তৈরি করার সময় নয় ৷ দেশের কোনও অলৌকিক ঘটনার আশা করাও উচিত নয় । এই অপারেশনের জন্য ধৈর্য ও বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রয়োজন ৷ এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে অভিযুক্ত জঙ্গিদের পাকিস্তানে ফেরার কোনও উপায় নেই । তারা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য এখানে রয়েছে । তাদের কাছে একমুখী টিকিটই রয়েছে ।

জাতীয় পর্যায়ে আমাদের বিপজ্জনক দিকগুলি স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে । আন্তঃসীমান্ত হানা ও বালাকোটে হানা দেশের সংকল্পকে তুলে ধরেছিল ৷ কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রভাব শেষ হয়ে যায় ৷ আবার একটি পরিষ্কার বার্তা পাঠানোর প্রয়োজন আছে । নির্বাচনী প্রচারের সময় পালটা আঘাতের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি অতীতের অভিযান থেকে রাজনৈতিক লাভ করা সমাধান নয় । যতক্ষণ না এই ধরনের অভিযান বারবার হয়, ততক্ষণ এগুলো শুধুই রাজনৈতিক স্লোগান থেকে যায় ।

আমাদের পাকিস্তানের উদ্দেশ্য বুঝতে হবে ও এর মোকাবিলা করতে হবে । বর্তমানে পাকিস্তান সিপিইসি-তে জঙ্গিদের হুমকি নির্মূলের চিনা দাবি পূরণের জন্য তার পশ্চিম অঞ্চলের প্রদেশগুলির উপর মনোনিবেশ করতে বাধ্য হচ্ছে । অন্যদিকে অবশিষ্ট বাহিনী খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে মোতায়েন করা হচ্ছে । সেখানে অপারেশন পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে না ৷ ফলে পাক বাহিনীর হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে । আফগানিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ছে এবং যুদ্ধ আসন্ন ।

জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের বৃদ্ধির উদ্দেশ্য ভারতকে অভ্যন্তরীণভাবে ব্যস্ত রাখা, যাতে পাকিস্তান কোনও হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে পারে । প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর চিনের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনার ওপরও নজর রাখছে পাকিস্তান । তারা মনে করছে যে এর ফলে ভারত তাদের দিকে পালটা আক্রমণ থেকে বিরত থাকবে ৷ চিন ও পাকিস্তান ঐক্যবদ্ধভাবে যে কাজ করছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই । ভারতকে এরই মোকাবিলা করতে হবে ।

সরকারের সামনে বিকল্প আছে । নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করা ও পাকিস্তানের পোস্ট, গ্রাম থাকলেও জঙ্গি শিবিরগুলিকে আক্রমণ করা একটি বিকল্প হতে পারে । কিন্তু এক্ষেত্রেও প্রশ্নও রয়েছে ৷ তা হল, চিন কি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সক্রিয় হয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন করার চেষ্টা করবে ? এই নিয়ে মূল্যায়ন সরকারকে করতে হবে । পরবর্তী বিকল্প আন্তঃসীমান্ত হানা । এখানে আবার সরকারকে হামলা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে ।

পরিশেষে বলা যায়, বার্তা পৌঁছাতে হবে ৷ কিভাবে তা পৌঁছানো হবে, তা সরকারের সিদ্ধান্ত ৷

Last Updated : Jul 24, 2024, 8:22 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.