ETV Bharat / opinion

রাশিয়ান প্যান্টসির ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা: প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগে নয়া সাফল্য

সোমবার ভারতে রাশিয়ান প্যান্টসির বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার যৌথ উৎপাদনের জন্য একটি যুগান্তকারী চুক্তি হয়েছে।

Russian Pantsir Missile System
প্যান্টসির-এস1 (এসএ-22), স্ব-চালিত, মাঝারি-পাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম বার্ষিক আর্মি প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রদর্শনীর সময় রাশিয়ার জাতীয় পতাকার নিচে প্রদর্শিত হয়। (গেটি ইমেজেস)
author img

By Aroonim Bhuyan

Published : Nov 12, 2024, 7:55 PM IST

নয়াদিল্লি: ভারত যখন রাশিয়ায় নির্মিত গাইডেড-মিসাইল সমৃদ্ধ যুদ্ধজাহাজ এবং এস-400 এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেমের বাকি দু’টি স্কোয়াড্রন পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, সেই সময় দুই দেশ সোমবার যৌথভাবে প্যান্টসির এয়ার ডিফেন্স মিসাইল-গান সিস্টেম তৈরির জন্য একটি চুক্তি করল ৷ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগের একটি বড় সাফল্য হিসাবে এটাকে দেখা যেতে পারে ।

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ভারত-রাশিয়া আন্তঃসরকারি কমিশনের (আইআরআইজিসি) বৈঠক ৷ তার আগে রাশিয়ার রোসোবোরোনএক্সপোর্টের (আরওই) সঙ্গে একটি মউ করেছে ভারতের ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড (বিডিএল) ।

বিডিএল সোমবার তার এক্স হ্যান্ডেলে এই নিয়ে পোস্ট করেছে ৷ সেখানে তারা লিখেছে, "ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড এবং রাশিয়ার রোসোবোরোনএক্সপোর্ট (আরওই) প্যান্টসির ভেরিয়েন্ট, এয়ার ডিফেন্স মিসাইল-গান সিস্টেমে সহযোগিতার জন্য মউ স্বাক্ষর করে ৷ মউ স্বাক্ষর করেছেন বিডিএলের সিএমডি সিএমডিই এ মাধবরাও (অবসরপ্রাপ্ত) ও আরওই-র ডিডিজি-র ন্যাভাল ডিপার্টমেন্টের কোভালেঙ্কা জারমেন ৷ গোয়ায় পঞ্চম আইআরআইজিসি-র সাবগ্রুপের মাঝে এই মউ স্বাক্ষরিত হয় ৷"

আইআরআইজিসি-র দু’টি বিভাগ রয়েছে ৷ একটি হল বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা (আইআরআইজিসি-টেক) ৷ এর সভাপতিত্ব করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং রাশিয়ার প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্টুরভ ৷ দ্বিতীয়টি হল সামরিক ও সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা (আইআরআইজিসি-এম অ্য়ান্ড এমটিসি) ৷ বিভাগ রয়েছে দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের নেতৃত্বে ।

প্যান্টসির মিসাইল সিস্টেম যৌথভাবে তৈরির চুক্তিকে এই বছরের জুলাই মাসে মস্কোতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বার্ষিক ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্মেলনের ফলাফল হিসাবে দেখা যেতে পারে । শীর্ষ সম্মেলনের পরে জারি করা একটি যৌথ বিবৃতিতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অধীনে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামগুলির যৌথ উৎপাদনের আহ্বান জানানো হয়েছে ।

ভারত ও রাশিয়া একটি বিশেষ ও বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারিত্বের মধ্যে রয়েছে ৷ রাশিয়া মাত্র দু’টি দেশের সঙ্গে বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলন করে ৷ একটি ভারত ও অন্যটি জাপান ।

জুলাইয়ের শীর্ষ সম্মেলনের পরে জারি করা যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে উভয় পক্ষ ভারতে যৌথভাবে খুচরো যন্ত্রাংশ, উপাদান, সমষ্টি এবং অন্যান্য পণ্যের উৎপাদনে সম্মত হয়েছে ৷ এর মাধ্যমে 'মেক ইন ইন্ডিয়া' প্রোগ্রামের অধীনে রাশিয়ান-অরিজিন অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে ৷ এক্ষেত্রে প্রযুক্তির হস্তান্তর করা হবে ৷ এই যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদা পূরণ হবে এবং দুই পক্ষের সম্মতিতে বন্ধুদেশগুলিতে রফতানিও করা যাবে ৷

প্যান্টসির মিসাইল সিস্টেমের যৌথ উৎপাদনের বিষয়ে সোমবারের চুক্তি বিষয়টি এমন সময় সামনে এসেছে, যার আগেই জয়শঙ্কর বলেছিলেন, "ব্যবসাকে আরও গভীর করার একটি প্রোগ্রাম হিসাবে মেক ইন ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান রাশিয়ান সমর্থন অবশ্যই অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে ৷" সোমবার জয়শঙ্কর একথা বলেন মুম্বইয়ে আয়োজিত ভারত-রাশিয়া বিজনেস ফোরামে ৷ তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী মানতুরভ ৷

প্যান্টসির এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম কী ?

প্যান্টসির মিসাইল সিস্টেম হল স্ব-চালিত, মাঝারি-পাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল এবং অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট আর্টিলারি সিস্টেমের একটি অংশ । তিন ধরনের যানবাহন এই সিস্টেম তৈরি করে: একটি ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার, একটি রাডার ট্রাক এবং একটি কমান্ড পোস্ট । প্যান্টসির-এস1 দিয়ে শুরু করে ন্যাটোর কোড-নামযুক্ত এসএ-22 গ্রেহাউন্ড, এটি টুলার কেবিপি ইন্সট্রুমেন্ট ডিজাইন ব্যুরো দ্বারা উৎপাদিত হয় এবং এটি একটি সারফেস টু এয়ার বন্দুক এবং মিসাইল সিস্টেম-সহ সোভিয়েত যুগের ট্র্যাক করা স্ব-চালিত অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট বন্দুকের টুঙ্গুস্কা এম1-এর উত্তরসূরি ।

প্যান্টসির-এস1 বিমান, হেলিকপ্টার, নির্ভুল যুদ্ধাস্ত্র, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং নিরস্ত্র বিমান যান (ইউএভি)-এর বিরুদ্ধে সামরিক, শিল্প ও প্রশাসনিক স্থাপনাগুলির পয়েন্ট এয়ার ডিফেন্স প্রদান করার জন্য তৈরি করা হয়েছে ৷ তাছাড়া নির্ভুলভাবে প্রয়োগ করে শত্রুর বিমান হামলার বিরুদ্ধে বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটকে অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রদানের জন্যও ডিজাইন করা হয়েছে এটি । বিশেষ করে নিম্ন থেকে অত্যন্ত নিম্ন উচ্চতায়, তা করার জন্য এর ব্যবহার করা হয় ৷

রিপোর্টে যদি বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে পুতিনকে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা থেকে রক্ষা করতে প্যান্টসির মিসাইল সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ।

প্যান্টসির-এস1 12টি স্বল্প-পাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল বহন করে, যেগুলো ক্যানিস্টার থেকে উল্লম্বভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় । এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি 20 কিলোমিটার পর্যন্ত এবং 15 কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় লক্ষ্যবস্তুতে জড়িত হতে সক্ষম । তারা রেডিও-কমান্ড নির্দেশিকা ব্যবহার করে এবং তাদের সর্বোচ্চ গতি প্রায় 1300 মিটার প্রতি সেকেন্ডে থাকে, যার ফলে তারা দ্রুত গতিশীল লক্ষ্যগুলিকে আটকাতে পারে ।

ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও, প্যান্টসির-এস 1 দু’টি 30 মিমি স্বনিয়ন্ত্রিত-কামান দিয়ে সজ্জিত । এই বন্দুকগুলির একটি কার্যকর পরিসীমা চার কিমি ও এটি উচ্চ হারে আগুন দিতে পারে, যা কম উচ্চতায়, ধীর গতিতে চলমান ভাসমান ছোট ড্রোনের মতো বস্তুকে নিশানা করার জন্য আদর্শ, যা ক্ষেপণাস্ত্রগুলি কার্যকর হতে বাধা দিতে পারে ৷

প্যান্টসির-এস1 স্বল্প থেকে মাঝারি পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষায় উৎকৃষ্টমানের কাজ করে । এর সম্মিলিত ক্ষেপণাস্ত্র ও বন্দুক ব্যবস্থা একটি স্তরযুক্ত প্রতিরক্ষা প্রদান করে, যা বিভিন্ন ধরনের হুমকিকে বাধা দিতে সক্ষম । আলজেরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, ইরাক ও সিরিয়া, অন্যান্যদের মধ্যে বিক্রি করা সিস্টেমগুলির সঙ্গে এই বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । সিস্টেমটির তুলনামূলকভাবে কম খরচ, মডুলার ডিজাইন ও বহুমুখীতা এটিকে একটি আধুনিক, স্বল্প-পরিসরের বিমান প্রতিরক্ষা সমাধানের সন্ধানকারী দেশগুলির জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প করে তুলেছে ।

ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতার জন্য এর অর্থ কী ?

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের এবং বিস্তৃত সহযোগিতা রয়েছে । সহযোগিতা উভয় দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের নেতৃত্বে আইআরআইজিসি-এম অ্য়ান্ড এমটিসি প্রক্রিয়া দ্বারা পরিচালিত হয় । উভয় দেশই তিনটি সার্ভিস জুড়ে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করে । দ্বিপাক্ষিক মহড়া ইন্দরা (আইনডিআরএ) শেষবার 2021 সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল । রাশিয়ায় 2022 সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ভোস্টক 2022-এর মতো বহুপাক্ষিক অনুশীলনেও অংশগ্রহণ করেছে দুই দেশ ।

দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে এস-400 ট্রিম্ফের মতো দূরপাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম সরবরাহ করা ৷ টি-90 ট্যাঙ্ক এবং সুখোই-30 এমকেআই এর লাইসেন্সড উৎপাদন করা ৷ মিগ-29 এবং কামভ হেলিকপ্টার সরবরাহ করা ৷ আইএনএস বিক্রমাদিত্য (পূর্বে অ্যাডমিরাল গোর্শকভ), একটি পরিবর্তিত কিয়েভ-শ্রেণীর বিমানবাহী রণতরী এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগশিপ প্রজেক্ট ৷ ভারতে একে-203 রাইফেল এবং ব্রহ্মোস মিসাইল উৎপাদন । ভারত-রাশিয়া সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি ক্রেতা-বিক্রেতার কাঠামো থেকে উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এবং সিস্টেমের যৌথ গবেষণা, উন্নয়ন ও উৎপাদন জড়িত ।

5.5 বিলিয়ন ডলারের এস-400 ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তিতে এরকম পাঁচটি স্কোয়াড্রন সরবরাহ করা হবে । যদিও এই স্কোয়াড্রনের মধ্যে তিনটি সরবরাহ করা হয়েছে ৷ বাকি দুটির ডেলিভারি 2026 পর্যন্ত বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । এদিকে, ভারত নভেম্বরের শেষের দিকে রাশিয়ায় নির্মিত দুটি গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র জাহাজের প্রথমটি হাতে পাওয়ার আশা করছে । তুশিল এবং তমাল নামের দু’টি যুদ্ধজাহাজ মূলত 2022 সালের শেষের দিকে সরবরাহ করার কথা ছিল ৷ কিন্তু কোভিড-19 অতিমারী, দুই দেশের মধ্যে অর্থপ্রদানের সমস্যা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এটি বিলম্বিত হয়েছিল ।

আজকের বহুমুখী বিশ্বে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কীভাবে তৈরি হয় ?

রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উভয়ের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিস্তৃত কৌশলগত এবং সামরিক ল্যান্ডস্কেপে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । তবে, প্রতিটি সম্পর্ক ভারতের প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বে বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রযুক্তিগত ও ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতা নিয়ে আসে ।

রাশিয়ার (পূর্ববর্তী সোভিয়েত ইউনিয়ন) সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব দীর্ঘকাল ধরে ও কোল্ড ওয়ারের ভূ-রাজনীতিতে নিহিত রয়েছে । 1950 এর দশকের শুরুতে ভারত অস্ত্র ও সামরিক সহায়তার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি নির্ভর করেছিল, যা ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর মেরুদণ্ড তৈরি করেছিল । সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা ও প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রদান করে ৷ এর পরিসমাপ্তি ঘটে 1971 সালের শান্তি, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার চুক্তির মতো প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে । বর্তমানে, ভারতের সামরিক সরঞ্জামের প্রায় 60-70 শতাংশ রাশিয়ান বংশোদ্ভূত ।

তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক, শুধুমাত্র গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির দ্বারা চিহ্নিত । কোল্ড ওয়ারের সময়, ভারতের জোটনিরপেক্ষ নীতি এবং পাকিস্তানের প্রতি মার্কিন সমর্থন নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সীমিত করে রেখেছিল ।

2005 ইউএস-ভারত অসামরিক পারমাণবিক চুক্তির পর থেকে যদিও উভয় দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব শক্তিশালী হয়েছে । তার মধ্যেই রয়েছে - লজিস্টিক এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অফ এগ্রিমেন্ট (এলইএমওএ), কমিউনিকেশন কম্পাটিবিলিটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট (সিওএমসিএএসএ) এবং মৌলিক বিনিময় ও সহযোগিতা চুক্তি (বিইসিএ) । এই চুক্তিগুলি একটি ক্রমবর্ধমান কৌশলগত অংশীদারিত্ব উপর জোর দেয়, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় সাধারণ স্বার্থ দ্বারা চালিত হয় ৷ বিশেষ করে চিনকে মোকাবিলায় ৷

সোমবারের প্যান্টসির চুক্তিতে ফিরে আসা যাক ৷ রাশিয়া-ভারত অংশীদারিত্ব মজবুত রয়ে গিয়েছে ৷ ভারতকে বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম ও কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনে নির্ভরযোগ্য সুযোগ দেয় রাশিয়া ৷ এই চুক্তি ভারতের আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগকে আরও উৎসাহিত করবে ৷ গত মাসে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের ভারত সফরের সময় গুজরাতে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে মাঝারি কৌশলগত পরিবহনকারী বিমান এয়ারবাস C-295 উৎপাদনের কাজের উদ্বোধন হয়েছে ৷ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধন করেছিলেন । এটাও আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগকে আরও উৎসাহিত করবে ৷

নয়াদিল্লি: ভারত যখন রাশিয়ায় নির্মিত গাইডেড-মিসাইল সমৃদ্ধ যুদ্ধজাহাজ এবং এস-400 এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেমের বাকি দু’টি স্কোয়াড্রন পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, সেই সময় দুই দেশ সোমবার যৌথভাবে প্যান্টসির এয়ার ডিফেন্স মিসাইল-গান সিস্টেম তৈরির জন্য একটি চুক্তি করল ৷ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগের একটি বড় সাফল্য হিসাবে এটাকে দেখা যেতে পারে ।

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ভারত-রাশিয়া আন্তঃসরকারি কমিশনের (আইআরআইজিসি) বৈঠক ৷ তার আগে রাশিয়ার রোসোবোরোনএক্সপোর্টের (আরওই) সঙ্গে একটি মউ করেছে ভারতের ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড (বিডিএল) ।

বিডিএল সোমবার তার এক্স হ্যান্ডেলে এই নিয়ে পোস্ট করেছে ৷ সেখানে তারা লিখেছে, "ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড এবং রাশিয়ার রোসোবোরোনএক্সপোর্ট (আরওই) প্যান্টসির ভেরিয়েন্ট, এয়ার ডিফেন্স মিসাইল-গান সিস্টেমে সহযোগিতার জন্য মউ স্বাক্ষর করে ৷ মউ স্বাক্ষর করেছেন বিডিএলের সিএমডি সিএমডিই এ মাধবরাও (অবসরপ্রাপ্ত) ও আরওই-র ডিডিজি-র ন্যাভাল ডিপার্টমেন্টের কোভালেঙ্কা জারমেন ৷ গোয়ায় পঞ্চম আইআরআইজিসি-র সাবগ্রুপের মাঝে এই মউ স্বাক্ষরিত হয় ৷"

আইআরআইজিসি-র দু’টি বিভাগ রয়েছে ৷ একটি হল বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা (আইআরআইজিসি-টেক) ৷ এর সভাপতিত্ব করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং রাশিয়ার প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্টুরভ ৷ দ্বিতীয়টি হল সামরিক ও সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা (আইআরআইজিসি-এম অ্য়ান্ড এমটিসি) ৷ বিভাগ রয়েছে দুই দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের নেতৃত্বে ।

প্যান্টসির মিসাইল সিস্টেম যৌথভাবে তৈরির চুক্তিকে এই বছরের জুলাই মাসে মস্কোতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বার্ষিক ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্মেলনের ফলাফল হিসাবে দেখা যেতে পারে । শীর্ষ সম্মেলনের পরে জারি করা একটি যৌথ বিবৃতিতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অধীনে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামগুলির যৌথ উৎপাদনের আহ্বান জানানো হয়েছে ।

ভারত ও রাশিয়া একটি বিশেষ ও বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারিত্বের মধ্যে রয়েছে ৷ রাশিয়া মাত্র দু’টি দেশের সঙ্গে বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলন করে ৷ একটি ভারত ও অন্যটি জাপান ।

জুলাইয়ের শীর্ষ সম্মেলনের পরে জারি করা যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে উভয় পক্ষ ভারতে যৌথভাবে খুচরো যন্ত্রাংশ, উপাদান, সমষ্টি এবং অন্যান্য পণ্যের উৎপাদনে সম্মত হয়েছে ৷ এর মাধ্যমে 'মেক ইন ইন্ডিয়া' প্রোগ্রামের অধীনে রাশিয়ান-অরিজিন অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে ৷ এক্ষেত্রে প্রযুক্তির হস্তান্তর করা হবে ৷ এই যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদা পূরণ হবে এবং দুই পক্ষের সম্মতিতে বন্ধুদেশগুলিতে রফতানিও করা যাবে ৷

প্যান্টসির মিসাইল সিস্টেমের যৌথ উৎপাদনের বিষয়ে সোমবারের চুক্তি বিষয়টি এমন সময় সামনে এসেছে, যার আগেই জয়শঙ্কর বলেছিলেন, "ব্যবসাকে আরও গভীর করার একটি প্রোগ্রাম হিসাবে মেক ইন ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান রাশিয়ান সমর্থন অবশ্যই অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে ৷" সোমবার জয়শঙ্কর একথা বলেন মুম্বইয়ে আয়োজিত ভারত-রাশিয়া বিজনেস ফোরামে ৷ তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী মানতুরভ ৷

প্যান্টসির এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম কী ?

প্যান্টসির মিসাইল সিস্টেম হল স্ব-চালিত, মাঝারি-পাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল এবং অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট আর্টিলারি সিস্টেমের একটি অংশ । তিন ধরনের যানবাহন এই সিস্টেম তৈরি করে: একটি ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার, একটি রাডার ট্রাক এবং একটি কমান্ড পোস্ট । প্যান্টসির-এস1 দিয়ে শুরু করে ন্যাটোর কোড-নামযুক্ত এসএ-22 গ্রেহাউন্ড, এটি টুলার কেবিপি ইন্সট্রুমেন্ট ডিজাইন ব্যুরো দ্বারা উৎপাদিত হয় এবং এটি একটি সারফেস টু এয়ার বন্দুক এবং মিসাইল সিস্টেম-সহ সোভিয়েত যুগের ট্র্যাক করা স্ব-চালিত অ্যান্টি-এয়ারক্রাফ্ট বন্দুকের টুঙ্গুস্কা এম1-এর উত্তরসূরি ।

প্যান্টসির-এস1 বিমান, হেলিকপ্টার, নির্ভুল যুদ্ধাস্ত্র, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং নিরস্ত্র বিমান যান (ইউএভি)-এর বিরুদ্ধে সামরিক, শিল্প ও প্রশাসনিক স্থাপনাগুলির পয়েন্ট এয়ার ডিফেন্স প্রদান করার জন্য তৈরি করা হয়েছে ৷ তাছাড়া নির্ভুলভাবে প্রয়োগ করে শত্রুর বিমান হামলার বিরুদ্ধে বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটকে অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রদানের জন্যও ডিজাইন করা হয়েছে এটি । বিশেষ করে নিম্ন থেকে অত্যন্ত নিম্ন উচ্চতায়, তা করার জন্য এর ব্যবহার করা হয় ৷

রিপোর্টে যদি বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে পুতিনকে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা থেকে রক্ষা করতে প্যান্টসির মিসাইল সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ।

প্যান্টসির-এস1 12টি স্বল্প-পাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল বহন করে, যেগুলো ক্যানিস্টার থেকে উল্লম্বভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় । এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি 20 কিলোমিটার পর্যন্ত এবং 15 কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় লক্ষ্যবস্তুতে জড়িত হতে সক্ষম । তারা রেডিও-কমান্ড নির্দেশিকা ব্যবহার করে এবং তাদের সর্বোচ্চ গতি প্রায় 1300 মিটার প্রতি সেকেন্ডে থাকে, যার ফলে তারা দ্রুত গতিশীল লক্ষ্যগুলিকে আটকাতে পারে ।

ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও, প্যান্টসির-এস 1 দু’টি 30 মিমি স্বনিয়ন্ত্রিত-কামান দিয়ে সজ্জিত । এই বন্দুকগুলির একটি কার্যকর পরিসীমা চার কিমি ও এটি উচ্চ হারে আগুন দিতে পারে, যা কম উচ্চতায়, ধীর গতিতে চলমান ভাসমান ছোট ড্রোনের মতো বস্তুকে নিশানা করার জন্য আদর্শ, যা ক্ষেপণাস্ত্রগুলি কার্যকর হতে বাধা দিতে পারে ৷

প্যান্টসির-এস1 স্বল্প থেকে মাঝারি পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষায় উৎকৃষ্টমানের কাজ করে । এর সম্মিলিত ক্ষেপণাস্ত্র ও বন্দুক ব্যবস্থা একটি স্তরযুক্ত প্রতিরক্ষা প্রদান করে, যা বিভিন্ন ধরনের হুমকিকে বাধা দিতে সক্ষম । আলজেরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, ইরাক ও সিরিয়া, অন্যান্যদের মধ্যে বিক্রি করা সিস্টেমগুলির সঙ্গে এই বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । সিস্টেমটির তুলনামূলকভাবে কম খরচ, মডুলার ডিজাইন ও বহুমুখীতা এটিকে একটি আধুনিক, স্বল্প-পরিসরের বিমান প্রতিরক্ষা সমাধানের সন্ধানকারী দেশগুলির জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প করে তুলেছে ।

ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতার জন্য এর অর্থ কী ?

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের এবং বিস্তৃত সহযোগিতা রয়েছে । সহযোগিতা উভয় দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের নেতৃত্বে আইআরআইজিসি-এম অ্য়ান্ড এমটিসি প্রক্রিয়া দ্বারা পরিচালিত হয় । উভয় দেশই তিনটি সার্ভিস জুড়ে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করে । দ্বিপাক্ষিক মহড়া ইন্দরা (আইনডিআরএ) শেষবার 2021 সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল । রাশিয়ায় 2022 সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ভোস্টক 2022-এর মতো বহুপাক্ষিক অনুশীলনেও অংশগ্রহণ করেছে দুই দেশ ।

দ্বিপাক্ষিক প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে এস-400 ট্রিম্ফের মতো দূরপাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম সরবরাহ করা ৷ টি-90 ট্যাঙ্ক এবং সুখোই-30 এমকেআই এর লাইসেন্সড উৎপাদন করা ৷ মিগ-29 এবং কামভ হেলিকপ্টার সরবরাহ করা ৷ আইএনএস বিক্রমাদিত্য (পূর্বে অ্যাডমিরাল গোর্শকভ), একটি পরিবর্তিত কিয়েভ-শ্রেণীর বিমানবাহী রণতরী এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর ফ্ল্যাগশিপ প্রজেক্ট ৷ ভারতে একে-203 রাইফেল এবং ব্রহ্মোস মিসাইল উৎপাদন । ভারত-রাশিয়া সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি ক্রেতা-বিক্রেতার কাঠামো থেকে উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এবং সিস্টেমের যৌথ গবেষণা, উন্নয়ন ও উৎপাদন জড়িত ।

5.5 বিলিয়ন ডলারের এস-400 ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তিতে এরকম পাঁচটি স্কোয়াড্রন সরবরাহ করা হবে । যদিও এই স্কোয়াড্রনের মধ্যে তিনটি সরবরাহ করা হয়েছে ৷ বাকি দুটির ডেলিভারি 2026 পর্যন্ত বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । এদিকে, ভারত নভেম্বরের শেষের দিকে রাশিয়ায় নির্মিত দুটি গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র জাহাজের প্রথমটি হাতে পাওয়ার আশা করছে । তুশিল এবং তমাল নামের দু’টি যুদ্ধজাহাজ মূলত 2022 সালের শেষের দিকে সরবরাহ করার কথা ছিল ৷ কিন্তু কোভিড-19 অতিমারী, দুই দেশের মধ্যে অর্থপ্রদানের সমস্যা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এটি বিলম্বিত হয়েছিল ।

আজকের বহুমুখী বিশ্বে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কীভাবে তৈরি হয় ?

রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, উভয়ের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিস্তৃত কৌশলগত এবং সামরিক ল্যান্ডস্কেপে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । তবে, প্রতিটি সম্পর্ক ভারতের প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বে বিভিন্ন ঐতিহাসিক, প্রযুক্তিগত ও ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতা নিয়ে আসে ।

রাশিয়ার (পূর্ববর্তী সোভিয়েত ইউনিয়ন) সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব দীর্ঘকাল ধরে ও কোল্ড ওয়ারের ভূ-রাজনীতিতে নিহিত রয়েছে । 1950 এর দশকের শুরুতে ভারত অস্ত্র ও সামরিক সহায়তার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি নির্ভর করেছিল, যা ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর মেরুদণ্ড তৈরি করেছিল । সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা ও প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রদান করে ৷ এর পরিসমাপ্তি ঘটে 1971 সালের শান্তি, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতার চুক্তির মতো প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে । বর্তমানে, ভারতের সামরিক সরঞ্জামের প্রায় 60-70 শতাংশ রাশিয়ান বংশোদ্ভূত ।

তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক, শুধুমাত্র গত দুই দশকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির দ্বারা চিহ্নিত । কোল্ড ওয়ারের সময়, ভারতের জোটনিরপেক্ষ নীতি এবং পাকিস্তানের প্রতি মার্কিন সমর্থন নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সীমিত করে রেখেছিল ।

2005 ইউএস-ভারত অসামরিক পারমাণবিক চুক্তির পর থেকে যদিও উভয় দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব শক্তিশালী হয়েছে । তার মধ্যেই রয়েছে - লজিস্টিক এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অফ এগ্রিমেন্ট (এলইএমওএ), কমিউনিকেশন কম্পাটিবিলিটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট (সিওএমসিএএসএ) এবং মৌলিক বিনিময় ও সহযোগিতা চুক্তি (বিইসিএ) । এই চুক্তিগুলি একটি ক্রমবর্ধমান কৌশলগত অংশীদারিত্ব উপর জোর দেয়, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায় সাধারণ স্বার্থ দ্বারা চালিত হয় ৷ বিশেষ করে চিনকে মোকাবিলায় ৷

সোমবারের প্যান্টসির চুক্তিতে ফিরে আসা যাক ৷ রাশিয়া-ভারত অংশীদারিত্ব মজবুত রয়ে গিয়েছে ৷ ভারতকে বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম ও কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনে নির্ভরযোগ্য সুযোগ দেয় রাশিয়া ৷ এই চুক্তি ভারতের আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগকে আরও উৎসাহিত করবে ৷ গত মাসে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের ভারত সফরের সময় গুজরাতে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে মাঝারি কৌশলগত পরিবহনকারী বিমান এয়ারবাস C-295 উৎপাদনের কাজের উদ্বোধন হয়েছে ৷ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধন করেছিলেন । এটাও আত্মনির্ভর ভারত উদ্যোগকে আরও উৎসাহিত করবে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.