ETV Bharat / opinion

ভোটারদের পরিবর্তনশীল মানসিকতায় কোনও অনুমানই এখন বিশ্বাসযোগ্য নয় - LOK SABHA ELECTION RESULTS 2024 - LOK SABHA ELECTION RESULTS 2024

Challenges of NDA Coalition Government: রবিবার তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠনের আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি ৷ সেখানে তাঁর এনডিএ-র অন্যান্য শরিক দলের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন ৷ যাঁদের সাহায্যে সরকার গঠনের ম্যাজিক নম্বর পার করতে পেরেছেন মোদি ৷ তাঁর তৃতীয়বারের সরকার প্রথম দু’বারের থেকে পুরোপুরি আলাদা ৷ কারণ, প্রথম দু’বারে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি ৷ কিন্তু, এবার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা জোটের শরিকদের উপর নির্ভর করে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে মোদিকে ৷ যা তাঁকে প্রতিপদে পরীক্ষার মুখে ফেলবে ৷ সেই নিয়েও বিশেষ প্রতিবেদন লিখছেন, ইটিভি ভারতের নেটওয়ার্ক এডিটর বিলাল ভাট ৷

ETV BHARAT
2024 লোকসভা নির্বাচনে বদলেছে ভোটারদের মানসিকতা ৷ (ফাইল চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jun 8, 2024, 6:34 PM IST

ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্য ভারতের রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে চলে আসা একদলীয় শাসনের রীতিকে ভেঙে দিয়েছে ৷ যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক শাসন ব্যবস্থার পথ প্রশস্ত করেছে ৷ যেখানে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৷ সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচন ভারতের ইতিহাসে দীর্ঘতম নির্বাচনী প্রক্রিয়া, যা আশি দিন ধরে চলেছে ৷ যেখানে সামগ্রিক আসন ভাগের কারণে বিজেপি অনেক বেশি দুর্বল হয়েছে ৷

ঐক্যমত্য গঠন:

400 এবং তার উপরে আসনের স্বপ্ন (আব কি বার 400 পার) অনেকটাই পিছনে রয়ে গেল ৷ বিজেপিকে সরকার গঠনের জন্য নির্ভর করতে হল তার এনডিএ শরিকদের উপর এবং ভবিষ্যতে যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মিত্র দলগুলির সম্মতির প্রয়োজন হবে ৷ মোদি নিঃসন্দেহে তৃতীয়বারের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৷ কিন্তু, তিনি এবার আর বিরোধীদের উপর জবরদস্তি করতে পারবেন না ৷ যার জন্য তাঁর শরিক দলগুলির কাছে অনুমতির প্রয়োজন হবে ৷ সবমিলিয়ে বিজেপি'কে প্রতিনিয়ত কঠিন আলোচনার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে ৷ যা সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে মোদির কাছে একেবারে অজানা একটি পথ ৷ 2016 সালে 500 এবং 1000 টাকার নোট বাতিল করার সিদ্ধান্তটি তৎকালীন অর্থমন্ত্রকের অনেকের পরামর্শ ছাড়াই নেওয়া হয়েছিল এবং বিজেপির কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তা রূপায়ণে সমস্যা হয়নি ৷ কিন্তু সেক্ষেত্রে এমন জোটের সরকার হলে, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ মোটেই হতো না ৷ কারণ, সেক্ষেত্রে জোটের শরিকদের সম্মতি প্রয়োজন হতো ৷

বিজেপির মূল মতাদর্শ পিছনের আসনে চলে গেল:

বিজেপি দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘুদের অপমানজনক বিবৃতি দিয়ে তাদের আদর্শগত সমর্থনের ভিতকে শক্তিশালী করেছে ৷ কখনও কখনও তা সূক্ষ্ম ছিল ৷ কিন্তু, পরবর্তী সময়ে তা আরও প্রকট হয়েছে ৷ এর কারণ, আরও বেশি আসন পেয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি সমাবেশে সমগ্র সম্প্রদায়কে 'অনুপ্রবেশকারী' বলে অভিহিত করেছিলেন ৷ এবার সেই নীতি পিছনের সারিতে চলে যেতে পারে ৷ যতক্ষণ এই নতুন জোট সরকার টিকে থাকবে ৷ আর এই দলটি যে নীতি নিয়ে আসবে, তা চন্দ্রবাবু নাইডুর মতো শরিকের সঙ্গে মিলতে হবে ৷ কারণ, ইনি একজন ধর্মনিরপেক্ষ প্রবীণ রাজনীতিবিদ ৷ অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে একপেশে জয়ের পর, বিজয়ওয়াড়ায় চন্দ্রবাবু নাইডু একটি বিবৃতি দেন ৷ সেখানে তিনি বলেন, "গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার হল বাক স্বাধীনতা থাকা ৷" তিনি এবং তাঁর দল যা বিশ্বাস করেন, সেই নীতিকে জোরদার করেছিলেন বিবৃতিতে ৷

অন্তর্ভুক্তিমূলক, ধর্মনিরপেক্ষ নীতিতে পরিণত সরকার:

চন্দ্রবাবুর বিবৃতি ভারতের সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে স্বস্তি দিতে পারে ৷ জোটের সমস্ত শরিক দলগুলির মধ্যে, নাইডুর নেতৃত্বে টিডিপি (তেলেগু দেশম পার্টি) তার সংখ্যা এবং ভৌগলিক অবস্থানের কারণে একটি নির্ধারক অবস্থানে রয়েছে ৷ কর্নাটক এবং তেলেঙ্গানার পরে, অন্ধ্রপ্রদেশ তৃতীয় রাজ্য যারা দক্ষিণে বিজেপির জন্য দরজা খুলে দিয়েছে ৷ তাই বিজেপিকে এবার সাবধানে চলতে হবে ৷ চন্দ্রবাবুর মতো মানুষেরা ধর্মান্ধতা, সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং অসহিষ্ণুতাকে প্রশ্রয় দেন না ৷ তাই আশা করা যায়, নয়া সরকারের নীতিগুলো আবারও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ধর্মনিরপেক্ষ হবে ৷ গত দশ বছরে সমালোচনামূলক কণ্ঠকে তিরস্কার করা হয়েছে এবং যারা বিজেপিকে সমর্থন করেছে, তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে ৷ প্রফুল প্যাটেল এবং অজিত পাওয়ারের মতো নেতারা বিজেপিতে যোগদানের আগে যে দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৷ প্যাটেলের বিরুদ্ধে এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্নীতি বিরোধী মামলা ছিল ৷ অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে 25,000 কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল ৷

কংগ্রেস বনাম মোদি:

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, যারা একটি শক্তিশালী শক্তি হিসাবে উঠে এল, তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ করা এবং তাদের দুই জোট সঙ্গী ও মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে পাঠানো হয়েছে ৷ যাইহোক, বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের জোরালো প্রচার বিরোধী জোটের জন্য অনেকাংশে কাজ করেছে ৷ বিজেপি একা এগিয়ে যেতে পারবে না ৷ সরকার গঠনের জন্য তাদের শরিক দলগুলিকে প্রয়োজন, কারণ তাদের সংখ্যা নেই ৷ কংগ্রেস আরও জোরদার ইস্যু তুলে ধরেছিল ৷ যেগুলির সঙ্গে একজন সাধারণ মানুষ সহজেই নিজেদের যোগ করতে পারে এবং যা আমজনতার উপকার করতে পারে ৷ যেমন, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব এবং সংবিধানের উপর বিপদ, যা মোদির নির্বাচনী হাতিয়ারগুলিকে অকার্যকর করে তুলেছিল ৷

  • একটি সিএসডিএস সমীক্ষা অনুযায়ী, 24 শতাংশ মানুষ মূল্যবৃদ্ধি / মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন ৷
  • 23 শতাংশ মানুষ বেকারত্ব ও কাজের সুযোগ না-থাকা নিয়ে অসন্তুষ্ট ৷

মোদি বিশ্বাস করেছিলেন যে সবচেয়ে বড় অস্ত্র রামমন্দির তাঁকে অজেয় করে তুলেছে ৷ কিন্তু, বিজেপির প্রত্যাশা অনুযায়ী সেই কাজ হয়নি ৷ তিনি অযোধ্যা থেকে তাঁর প্রচার শুরু করেছিলেন, জানুয়ারিতে ৷ তিনি ভোটারদের কাছে স্মৃতি তরতাজা রাখতে রামমন্দির পরিদর্শন করেছিলেন ৷ একটি আশ্চর্য রায়ে, অযোধ্যার মানুষ তাঁর মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে সমাজবাদী পার্টির প্রতিনিধিকে বেছে নিয়েছে ৷

বিজেপির অনুচ্ছেদ 370 বাতিলের দাবি:

আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা যা মোদি তার বেশিরভাগ নির্বাচনী সভার বক্তৃতায় উল্লেখ করেছিলেন, তা হল 370 ধারা বাতিল করা ৷ এমনকী নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর মোদি দাবি করেছেন, 370 ধারা প্রত্যাহারের কারণেই জম্মু ও কাশ্মীরে বেশি সংখ্যক ভোটার ভোটদান করেছে ৷ বারামুলার মানুষ সাজাদ লোনকে ভোট দেয়নি, যিনি পিডিপি-বিজেপি জোটের সময় বিজেপির মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছিলেন ৷ জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহও বারামুলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ৷ আবদুল্লাহ এবং লোনকে বাদ দিয়ে ভোটাররা এমন একজন নেতাকে বেছে নিয়েছেন যিনি 2019 সালে অনুচ্ছেদ 370 বাতিলের পর থেকে, বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন করার অভিযোগে তিহাড় জেলে বন্দি রয়েছেন ৷

হিন্দু দলিত ভোট সামগ্রিকভাবে হ্রাস পেয়েছে ৷ যারা ভেবেছিল সংবিধান পরিবর্তন করলে, তাদের সুবিধাগুলিকে করতে পারে ৷ অন্যদিকে, কংগ্রেস অনুচ্ছেদ 370-এর মতো সংবেদনশীল ইস্যু নিয়ে কাঁটাছেড়া করেনি ৷ বিজেপির 400-র বেশি আসন লাভের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রচার চালিয়েছে হাত শিবির ৷ একটি ধারণা তৈরি করেছিল যে, বিজেপির বেশি সংখ্যক আসন জয় সংবিধান পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করবে ৷

ব্যর্থ বুথ ফেরত সমীক্ষা:

বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল কংগ্রেসের দাবিকে আরও জোরদার করেছে ৷ যেখানে কংগ্রেস শাসকদলের বিরুদ্ধে সকল সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ তুলেছিল ৷ যা নিয়ে কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, বুথ ফেরত সমীক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রভাবিত ও চাপ দেওয়া হয়েছিল ৷ টিভি চ্যানেলগুলি ফলাফলগুলি নিয়ে মুখর ছিল ৷ যা মনস্তত্ত্ববিদদের দিয়ে নিশ্চিত করা হয়েছিল ৷ এমনই সমীক্ষাকে নির্ভুল এবং বৈজ্ঞানিক হওয়ার বৈধতার শংসাপত্র দিয়েছিল ৷ যেখানে একটি সমীক্ষাতেও বলা হয়নি যে, বিজেপি সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় 272-এর থেকে কম আসন পাবে ৷

প্রতিশ্রুতি পালনছ

এখন যেহেতু এনডিএ তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করছে, সেখানে এটা দেখার বিষয় যে, জোটের শরিক দলগুলি নিজেদের দাবিগুলি নিয়ে বিজেপির সঙ্গে কীভাবে দর কষাকষি করে ! আর তখন জোটের পরিস্থিতি কী হয়, সেটাই এখন আলোচনার বিষয় ৷ এমন কিছু বিষয় থাকবে, যা জোটের শরিকরা নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি প্রথমেই দাবি করবে ৷ 'অগ্নিপথ' প্রকল্পটি ইতিমধ্যে আলোচনায় আসতে শুরু করেছে ৷ যা নিয়ে জোটের দুই শরিকের মধ্যে তর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ জেডিইউ এটিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি করেছে ৷ অন্যদিকে, এলজেপি (রামবিলাস)-এর তরফে বলা হয়েছে, 'অগ্নিপথ' প্রকল্প লাগু করার এখনও সঠিক সময় আসেনি ৷ যদিও, এখনও অনেক কিছু দেখা বাকি আছে ৷ তবে, এটা স্পষ্ট যে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল এবং একটি জোটের সরকার দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে ৷

ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্য ভারতের রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে চলে আসা একদলীয় শাসনের রীতিকে ভেঙে দিয়েছে ৷ যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক শাসন ব্যবস্থার পথ প্রশস্ত করেছে ৷ যেখানে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৷ সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচন ভারতের ইতিহাসে দীর্ঘতম নির্বাচনী প্রক্রিয়া, যা আশি দিন ধরে চলেছে ৷ যেখানে সামগ্রিক আসন ভাগের কারণে বিজেপি অনেক বেশি দুর্বল হয়েছে ৷

ঐক্যমত্য গঠন:

400 এবং তার উপরে আসনের স্বপ্ন (আব কি বার 400 পার) অনেকটাই পিছনে রয়ে গেল ৷ বিজেপিকে সরকার গঠনের জন্য নির্ভর করতে হল তার এনডিএ শরিকদের উপর এবং ভবিষ্যতে যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মিত্র দলগুলির সম্মতির প্রয়োজন হবে ৷ মোদি নিঃসন্দেহে তৃতীয়বারের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৷ কিন্তু, তিনি এবার আর বিরোধীদের উপর জবরদস্তি করতে পারবেন না ৷ যার জন্য তাঁর শরিক দলগুলির কাছে অনুমতির প্রয়োজন হবে ৷ সবমিলিয়ে বিজেপি'কে প্রতিনিয়ত কঠিন আলোচনার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে ৷ যা সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে মোদির কাছে একেবারে অজানা একটি পথ ৷ 2016 সালে 500 এবং 1000 টাকার নোট বাতিল করার সিদ্ধান্তটি তৎকালীন অর্থমন্ত্রকের অনেকের পরামর্শ ছাড়াই নেওয়া হয়েছিল এবং বিজেপির কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তা রূপায়ণে সমস্যা হয়নি ৷ কিন্তু সেক্ষেত্রে এমন জোটের সরকার হলে, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ মোটেই হতো না ৷ কারণ, সেক্ষেত্রে জোটের শরিকদের সম্মতি প্রয়োজন হতো ৷

বিজেপির মূল মতাদর্শ পিছনের আসনে চলে গেল:

বিজেপি দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘুদের অপমানজনক বিবৃতি দিয়ে তাদের আদর্শগত সমর্থনের ভিতকে শক্তিশালী করেছে ৷ কখনও কখনও তা সূক্ষ্ম ছিল ৷ কিন্তু, পরবর্তী সময়ে তা আরও প্রকট হয়েছে ৷ এর কারণ, আরও বেশি আসন পেয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি সমাবেশে সমগ্র সম্প্রদায়কে 'অনুপ্রবেশকারী' বলে অভিহিত করেছিলেন ৷ এবার সেই নীতি পিছনের সারিতে চলে যেতে পারে ৷ যতক্ষণ এই নতুন জোট সরকার টিকে থাকবে ৷ আর এই দলটি যে নীতি নিয়ে আসবে, তা চন্দ্রবাবু নাইডুর মতো শরিকের সঙ্গে মিলতে হবে ৷ কারণ, ইনি একজন ধর্মনিরপেক্ষ প্রবীণ রাজনীতিবিদ ৷ অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে একপেশে জয়ের পর, বিজয়ওয়াড়ায় চন্দ্রবাবু নাইডু একটি বিবৃতি দেন ৷ সেখানে তিনি বলেন, "গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার হল বাক স্বাধীনতা থাকা ৷" তিনি এবং তাঁর দল যা বিশ্বাস করেন, সেই নীতিকে জোরদার করেছিলেন বিবৃতিতে ৷

অন্তর্ভুক্তিমূলক, ধর্মনিরপেক্ষ নীতিতে পরিণত সরকার:

চন্দ্রবাবুর বিবৃতি ভারতের সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে স্বস্তি দিতে পারে ৷ জোটের সমস্ত শরিক দলগুলির মধ্যে, নাইডুর নেতৃত্বে টিডিপি (তেলেগু দেশম পার্টি) তার সংখ্যা এবং ভৌগলিক অবস্থানের কারণে একটি নির্ধারক অবস্থানে রয়েছে ৷ কর্নাটক এবং তেলেঙ্গানার পরে, অন্ধ্রপ্রদেশ তৃতীয় রাজ্য যারা দক্ষিণে বিজেপির জন্য দরজা খুলে দিয়েছে ৷ তাই বিজেপিকে এবার সাবধানে চলতে হবে ৷ চন্দ্রবাবুর মতো মানুষেরা ধর্মান্ধতা, সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং অসহিষ্ণুতাকে প্রশ্রয় দেন না ৷ তাই আশা করা যায়, নয়া সরকারের নীতিগুলো আবারও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ধর্মনিরপেক্ষ হবে ৷ গত দশ বছরে সমালোচনামূলক কণ্ঠকে তিরস্কার করা হয়েছে এবং যারা বিজেপিকে সমর্থন করেছে, তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে ৷ প্রফুল প্যাটেল এবং অজিত পাওয়ারের মতো নেতারা বিজেপিতে যোগদানের আগে যে দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৷ প্যাটেলের বিরুদ্ধে এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্নীতি বিরোধী মামলা ছিল ৷ অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে 25,000 কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল ৷

কংগ্রেস বনাম মোদি:

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস, যারা একটি শক্তিশালী শক্তি হিসাবে উঠে এল, তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি ফ্রিজ করা এবং তাদের দুই জোট সঙ্গী ও মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে পাঠানো হয়েছে ৷ যাইহোক, বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের জোরালো প্রচার বিরোধী জোটের জন্য অনেকাংশে কাজ করেছে ৷ বিজেপি একা এগিয়ে যেতে পারবে না ৷ সরকার গঠনের জন্য তাদের শরিক দলগুলিকে প্রয়োজন, কারণ তাদের সংখ্যা নেই ৷ কংগ্রেস আরও জোরদার ইস্যু তুলে ধরেছিল ৷ যেগুলির সঙ্গে একজন সাধারণ মানুষ সহজেই নিজেদের যোগ করতে পারে এবং যা আমজনতার উপকার করতে পারে ৷ যেমন, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব এবং সংবিধানের উপর বিপদ, যা মোদির নির্বাচনী হাতিয়ারগুলিকে অকার্যকর করে তুলেছিল ৷

  • একটি সিএসডিএস সমীক্ষা অনুযায়ী, 24 শতাংশ মানুষ মূল্যবৃদ্ধি / মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন ৷
  • 23 শতাংশ মানুষ বেকারত্ব ও কাজের সুযোগ না-থাকা নিয়ে অসন্তুষ্ট ৷

মোদি বিশ্বাস করেছিলেন যে সবচেয়ে বড় অস্ত্র রামমন্দির তাঁকে অজেয় করে তুলেছে ৷ কিন্তু, বিজেপির প্রত্যাশা অনুযায়ী সেই কাজ হয়নি ৷ তিনি অযোধ্যা থেকে তাঁর প্রচার শুরু করেছিলেন, জানুয়ারিতে ৷ তিনি ভোটারদের কাছে স্মৃতি তরতাজা রাখতে রামমন্দির পরিদর্শন করেছিলেন ৷ একটি আশ্চর্য রায়ে, অযোধ্যার মানুষ তাঁর মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে সমাজবাদী পার্টির প্রতিনিধিকে বেছে নিয়েছে ৷

বিজেপির অনুচ্ছেদ 370 বাতিলের দাবি:

আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা যা মোদি তার বেশিরভাগ নির্বাচনী সভার বক্তৃতায় উল্লেখ করেছিলেন, তা হল 370 ধারা বাতিল করা ৷ এমনকী নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর মোদি দাবি করেছেন, 370 ধারা প্রত্যাহারের কারণেই জম্মু ও কাশ্মীরে বেশি সংখ্যক ভোটার ভোটদান করেছে ৷ বারামুলার মানুষ সাজাদ লোনকে ভোট দেয়নি, যিনি পিডিপি-বিজেপি জোটের সময় বিজেপির মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছিলেন ৷ জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহও বারামুলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ৷ আবদুল্লাহ এবং লোনকে বাদ দিয়ে ভোটাররা এমন একজন নেতাকে বেছে নিয়েছেন যিনি 2019 সালে অনুচ্ছেদ 370 বাতিলের পর থেকে, বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন করার অভিযোগে তিহাড় জেলে বন্দি রয়েছেন ৷

হিন্দু দলিত ভোট সামগ্রিকভাবে হ্রাস পেয়েছে ৷ যারা ভেবেছিল সংবিধান পরিবর্তন করলে, তাদের সুবিধাগুলিকে করতে পারে ৷ অন্যদিকে, কংগ্রেস অনুচ্ছেদ 370-এর মতো সংবেদনশীল ইস্যু নিয়ে কাঁটাছেড়া করেনি ৷ বিজেপির 400-র বেশি আসন লাভের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রচার চালিয়েছে হাত শিবির ৷ একটি ধারণা তৈরি করেছিল যে, বিজেপির বেশি সংখ্যক আসন জয় সংবিধান পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করবে ৷

ব্যর্থ বুথ ফেরত সমীক্ষা:

বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল কংগ্রেসের দাবিকে আরও জোরদার করেছে ৷ যেখানে কংগ্রেস শাসকদলের বিরুদ্ধে সকল সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ তুলেছিল ৷ যা নিয়ে কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, বুথ ফেরত সমীক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রভাবিত ও চাপ দেওয়া হয়েছিল ৷ টিভি চ্যানেলগুলি ফলাফলগুলি নিয়ে মুখর ছিল ৷ যা মনস্তত্ত্ববিদদের দিয়ে নিশ্চিত করা হয়েছিল ৷ এমনই সমীক্ষাকে নির্ভুল এবং বৈজ্ঞানিক হওয়ার বৈধতার শংসাপত্র দিয়েছিল ৷ যেখানে একটি সমীক্ষাতেও বলা হয়নি যে, বিজেপি সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় 272-এর থেকে কম আসন পাবে ৷

প্রতিশ্রুতি পালনছ

এখন যেহেতু এনডিএ তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করছে, সেখানে এটা দেখার বিষয় যে, জোটের শরিক দলগুলি নিজেদের দাবিগুলি নিয়ে বিজেপির সঙ্গে কীভাবে দর কষাকষি করে ! আর তখন জোটের পরিস্থিতি কী হয়, সেটাই এখন আলোচনার বিষয় ৷ এমন কিছু বিষয় থাকবে, যা জোটের শরিকরা নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া প্রতিশ্রুতি প্রথমেই দাবি করবে ৷ 'অগ্নিপথ' প্রকল্পটি ইতিমধ্যে আলোচনায় আসতে শুরু করেছে ৷ যা নিয়ে জোটের দুই শরিকের মধ্যে তর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ জেডিইউ এটিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি করেছে ৷ অন্যদিকে, এলজেপি (রামবিলাস)-এর তরফে বলা হয়েছে, 'অগ্নিপথ' প্রকল্প লাগু করার এখনও সঠিক সময় আসেনি ৷ যদিও, এখনও অনেক কিছু দেখা বাকি আছে ৷ তবে, এটা স্পষ্ট যে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল এবং একটি জোটের সরকার দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.