জয়রামবাটী (বাঁকুড়া), 9 নভেম্বর: 148তম বর্ষে পদার্পণ করল মা সারদার জন্মভিটে জয়রামবাটী মাতৃ মন্দিরের জগদ্ধাত্রী পুজো ৷ ঠিক ভোর সাড়ে পাঁচটায় পুজো শুরু হয় ৷ বেলা সাড়ে 3টের সময় হোম হয়েছে ৷
1877 সালে দেবীর আদেশে মা সারদার মা শ্যামাসুন্দরী দেবী বাঁকুড়ার জয়রামবাটী গ্রামে নিজের বাড়িতে শুরু করেছিলেন জগদ্ধাত্রী পুজো ৷ পরে মা সারদা সেই পুজো করেন ৷ দীর্ঘ 148 বছর পেরিয়েও স্বয়ং মা সারদার বাড়ির সেই জগদ্ধাত্রী পুজো আজও অমলিন জয়রামবাটিতে ৷ মায়ের বাড়ির এই পুজো দেখতে রাজ্যের তো বটেই, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু ভক্ত এসেছেন জয়রামবাটীতে ৷
কথিত আছে, দেড়শো বছর আগে বাঁকুড়ার জয়রামবাটী গ্রামে মহা ধুমধাম করে কালী পুজো হত ৷ পুজোর পুরোহিত নব মুখুজ্জ্যে (মুখোপাধ্যায়ের শব্দের আঞ্চলিক রূপ ) গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকে কালী পুজোর জন্য নৈবেদ্য সংগ্রহ করতেন ৷ কালী পুজোর জন্য এই নৈবেদ্য সারা বছর ধরে জমিয়ে রাখতেন পরিবারের মহিলারা ৷ 1877 সালে কোনও এক কারণে নব মুখুজ্যে, মা সারদার মাতৃদেবী শ্যামাসুন্দরী দেবীর জমিয়ে রাখা নৈবেদ্য গ্রহণ করেননি ৷
একরাশ গ্লানিতে কালী পুজোর রাতে সাজানো নৈবেদ্যর ডালার সামনে অঝোরে কাঁদতে থাকেন শ্যামাসুন্দরী দেবী ৷ জনশ্রুতি, তখন রক্তবর্ণা এক নারীমূর্তি আবির্ভূতা হন তাঁর সামনে ৷ শ্যামাসুন্দরী দেবীকে সান্ত্বনা দিয়ে সেই রক্তবর্ণা নারীমূর্তি বলে ওঠেন, “কাঁদছ কেন মেয়ে ? তোমার নৈবেদ্য কালী পুজোর জন্য নেয়নি তো কী হয়েছে, আমি তোমার নৈবেদ্য গ্রহণ করব ৷" শ্যামাসুন্দরী দেবী বুঝতে পারেন তিনি স্বয়ং দেবী জগদ্ধাত্রী ৷ এরপরই নিজের বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করেন ৷
তাঁর পরে মা সারদা পুজো পরিচালনা করে এসেছেন ৷ এখন মাতৃমন্দিরের উদ্যোগে মা সারদার জন্মভিটেতে সেই পুজো হয় ৷ রীতি মেনে নবমী তিথিতেই সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী-এই তিন তিথির পুজো হয় এখানে ৷ মাতৃ মন্দিরের ভক্ত সন্ন্যাসীরা এই পুজো করেন ৷ চলতি বছরও মহাসমারোহে চলছে মাতৃ আরাধনা ৷ মা সারদার পবিত্র জন্মভিটের এই পুজো দেখতে দেশ-বিদেশের বহু ভক্ত ও পুণ্যার্থী ভিড় জমিয়েছেন জয়রামবাটীতে ৷ ভক্ত সমাগমে উপচে পড়ছে জয়রামবাটী মাতৃ মন্দির ৷