দার্জিলিং, 5 অক্টোবর: সারা বাংলা মেতে উঠেছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয়। সমতলের পাশাপাশি পাহাড়েও শুরু হয়েছে পুজোর প্রস্তুতি। কিন্তু পাহাড়ে মায়ের পুজো সমতলের থেকে একটু আলাদাভাবেই হয়ে থাকে। সেখানে পাহাড়ের বিভিন্ন জনজাতি একসঙ্গে মেতে ওঠে দুর্গাপুজোয়। পাহাড়ের এক শতাব্দী প্রাচীন রাজ রাজেশ্বরী হলের পুজোর কথা তুলে ধরল ইটিভি ভারত।
রাজ রাজেশ্বরী হলের দুর্গাপুজো বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা আয়োজিত । আগে এই পুজোয় মা আসতেন পাহাড়ের খেলনা গাড়ি টয়ট্রেনে চেপে। আর মাকে বিসর্জন দেওয়া হতো পাহাড়ি ঝরনায়। এবার বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের পুজো 108তম বর্ষে পদার্পণ করল।
পুজো শুরু কীভাবে?
1916 সালে পাহাড়ে সেইসময় বসবাসকারী কিছু বাঙালিরা দুর্গাপুজো শুরু করেন। ওই সাল থেকে রাজ রাজেশ্বরী হলে পুজো হয়। একচালার দেবী প্রতিমা শিলিগুড়ির কুমোরটুলি থেকে টয়ট্রেনে করে কার্শিয়াং পর্যন্ত নিয়ে আসা হত। শুধুমাত্র মাকে নিতেই পাহাড়ের ওই যাত্রীবাহী টয়ট্রেনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হতে মালবাহী বগি। সেই বগিতে চড়েই মা উঠতেন পাহাড়ে। কার্শিয়াং স্টেশনে নেমে সেখান থেকে পালকি করে মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হত উমাকে।
বিসর্জনের সেকাল-একাল
দশমীর পর এক চালার এত বড় প্রতিমা আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে, নীচে নামিয়ে তিস্তায় বিসর্জন দেওয়া সম্ভব ছিল না। সেকারণে আশেপাশের বড় পাহাড়ি ঝরনায় দেওয়া হত বিসর্জন। কিন্তু এখন বর্ষাকাল ছাড়া আর সেভাবে ঝরনায় জল লক্ষ্য করা যায় না। কাজেই কার্শিয়াং থেকে নেমে প্রায় সমতলে দুধিয়ার নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয় মাকে।
কী বলছেন পুজো উদ্যোক্তা?
বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য চন্দন কর্মকার বলেন, "আগে ঠাকুর টয়ট্রেনে আসত। তখন বাঙালির সংখ্যা আরও কম ছিল। ঠাকুরও ছোট হত। যাতে কয়েকজন মিলেই সেটাকে বহন করা যায়। সেই থেকেই চলছে পুজো। বিসর্জনের সময় সেই কয়েকজন পালকি করেই ঝরনায় গিয়ে বিসর্জন দিয়ে আসত। তবে এখন রাস্তাঘাট অনেক উন্নত হয়েছে, ফলে ঝরনায় পৌঁছনোর রাস্তাগুলো সরু হয়েছে। সেখানে এত বড় মূর্তি নিয়ে পৌঁছনই সম্ভব নয়। তাই দুধিয়ার নদিতেই বিসর্জন দিই।"
তিনি আরও বলেন, "বাঙালিদের পুজো হলেও পাহাড়ের সবাই মিলেই আনন্দ করি। 2017 সালে পুজোর আগে আগুন লেগে সমস্তটাই পুড়ে যায়। তারপর আবার নতুনভাবে এই হল তৈরি করে চলছে পুজো।" এবারের পুজোতেও নবমীতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। থাকছে মায়ের ভোগ। পাহাড়বাসীর পাশাপাশি পর্যটকরাও মায়ের পুজোতে মেতে উঠতে পারবেন অনায়াসেও ৷