ওয়াশিংটন, 22 জুলাই: রাজনীতির ভাষ্যকারদের অনেকেই মনে করেন রক্তক্ষরণ ছাড়া সমাজের পরিবর্তন হয় না। আধুনিক পৃথিবীতে মাঝেমধ্যেই তাঁদের ভুল প্রমাণিত হতে হয়। তেমনই এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে আমেরিকা। দলের প্রবল চাপের মুখে শেষমেশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ালেন জো বাইডেন। সোশাল মিডিয়ায় এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁর পছন্দ ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রেসিডেন্ট হওয়া বাইডেন নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে যাওয়ায় অন্য তাৎপর্য আছে । ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে প্রার্থী হওয়া দৌড়ে সবচেয়ে আগে রয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট । তবে আরও কয়েকজনও প্রার্থী হতে পারেন । আগামী মাসে দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়তে পারে । আর তা যদি হয় তাহলে এই প্রথম কোনও ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকার প্রথম নাগরিক হওয়ার দৌড়ে সরাসরি অবতীর্ণ হবেন ।
কিন্তু কেন প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন বাইডেন?এর নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণ আছে বলে মনে করছে আমেরিকার রাজনৈতিক মহল। প্রথমত, সম্প্রতি আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বিতর্ক সভায় অংশ নিয়েছিলেন বাইডেন। সেখানে ট্রাম্পের সামনে তাঁকে অনেকটাই বিবর্ণ মনে হয়েছে। এরপর থেকেই বাইডেনকে সরে যেতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। দলের একটা বড় অংশই চাইছিলেন না বাইডেন আরও একবার নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানে থাকুন। শেষমেশ নিজের রাজনৈতিক জীবনের বোধহয় সবথেকে বড় এবং কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিলেন বাইডেন।
এমনিতেই তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। মার্কিন প্রশাসনের অনেকেই আশঙ্কা করছেন বাইডেনের হয়তো কোনও জটিল রোগ হয়েছে। প্রকাশ্যেই তিনি এমন কিছু আচরণ করেছেন যা মার্কিন প্রেসিডেন্টসুলভ নয়। তবে হোয়াইট হাউজ তার বাসিন্দার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনও রকম বক্তব্যকেই প্রাধান্য দেয়নি । কিন্তু এবার যেভাবে বাইডেন নিজেই সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করলেন তাতে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো আরও একবার প্রাসঙ্গিক হয়ে গেল।
গত কয়েক মাস ধরে নিজের দলেই জনপ্রিয়তা কমছিল বাইডেনের। বেশ কয়েকজন বড় নেতা চেয়েছিলেন বাইডেন এবার সরে যান। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের মতো কেউ কেউ অবশ্য বাইডেনের অবদানকে প্রকাশ্যেই মান্যতা দিয়েছেন।
এদিকেে বাইডেনের সরে যাওয়া ঘিরে ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। ইংল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন বাইডেনের সিদ্ধান্তকে তিনি শ্রদ্ধা করেন। অন্যদিকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ঋষি সুনকও এই মুহূর্তে বাইডেনের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন।