হায়দরাবাদ, 27 মার্চ: আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন চিনা নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে ৷ মঙ্গলবার পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে খাইবার-পাখতুনওয়ালায় একটি বিস্ফোরক-বোঝাই গাড়ি একটি বাসে ধাক্কা মারে ৷ ওই বাসটিতেই চিনা নাগরিকরা ছিলেন ৷ তাঁরা দাসু হাইড্রোপাওয়ার প্রজেক্টে কাজ করছিলেন ৷ পুলিশ জানিয়েছে, বাসটি ইসলামাবাদ থেকে কোহিস্তানের দিকে যাচ্ছিল ৷ সেই সময় উলটো দিক থেকে আসা গাড়িটি বাসে ধাক্কা মারলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয় এবং চিনে নাগরিকরা প্রাণ হারান ৷ ঘটনাটি ঘটেছে শাংলা জেলার বিশম এলাকায় ৷ এর আগেও পাকিস্তানে বহু চিনা নাগরিকের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে ৷
তার কয়েকটি রইল একনজরে:
2024 সালের 20 মার্চ ৷ বালোচের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ গদর বন্দরে সশস্ত্র হামলা চালায় ৷ তাদের সঙ্গে বোমা, বন্দুক ছিল ৷ এই বন্দরটি চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের জন্য উল্লেখযোগ্য ৷ কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা হয় এই গদর বন্দরে ৷ নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুলিযুদ্ধ বাধে ৷ তাতে 7 জন জঙ্গির মৃত্যু হয় ৷
গত বছরে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমে বালোচিস্তান প্রদেশে চিনের কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ারের কনভয়ের উপর আক্রমণ চালায় কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় জঙ্গি ৷ 2023 সালের 13 অগস্ট ওই হামলায় তিনজন নিরাপত্তা আধিকারিক জখম হন ৷ দু'জন জঙ্গির মৃত্যু হয় এবং তিন জন আহত হয় ৷ তবে কনভয় হামলায় চিনের কোনও নাগরিকের কোনও ক্ষতি হয়নি ৷ 2023 সালের 29 সেপ্টেম্বর দু'টি পৃথক বিস্ফোরণের ঘটনায় বহু মানুষের মৃত্যু হয় ৷ বিস্ফোরণটি হয় একটি শোভাযাত্রায় ৷
2022 সালে করাচিতে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় তিনজন চিনা শিক্ষক প্রাণ হারান ৷ ঘটনাটি ঘটে 2022 সালের 26 এপ্রিল ৷ হামলাকারী একজন মহিলা ছিলেন ৷ 2021 সালের 14 জুলাই ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় 9 জন চিনা কর্মীর ৷ একটি বাসে বেশ কয়েকজন চিনা কর্মী ছিলেন ৷ বাসে বিস্ফোরণ হওয়ায় 9 জন প্রাণ হারান ৷ 2020 সালের 29 জুন পাকিস্তানে একটি হামলার ঘটনায় বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি দায় স্বীকার করে ৷
পাকিস্তানের গদরে পার্ল কন্টিনেন্টাল হোটেলে চিনে পর্যটকদের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল জঙ্গি সংগঠন ৷ সময়টা ছিল 2019 সাল ৷ এদিকে চিনে নাগরিকদের নিশানা করে আত্মঘাতী হামলার সূচনা হয় 2018 সালে ৷ বালোচিস্তানের দালবানদিন এলাকায় অগস্ট মাসে প্রথম আত্মঘাতী আক্রমণ হয় চিনা কর্মীদের উপর ৷ কমপক্ষে 3জন চিনা ইঞ্জিনিয়ার জখম হয়েছিলেন সেই ঘটনায় ৷ ওই চিনা নাগরিকরা একটি খনির প্রজেক্টে কাজ করছিলেন ৷ আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল বিএলএ কম্যান্ডারের ছেলে আসলাম বালোচ ৷ তার বয়স ছিল মাত্র 22 বছর ৷
দেশের রাষ্ট্রপতিও জঙ্গি আক্রমণ থেকে বাদ যাননি ৷ 2003 সালের 25 ডিসেম্বর ৷ একটুর জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি পারভেজ মুশারফ ৷ তবে ওই আত্মঘাতী বোমা হামলায় 15 জনের মৃত্যু হয়েছিল ৷ বালোচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণে শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রার্থনাগৃহে বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে 43 জনের মৃত্যু হয়েছিল ৷ ঘটনাটি ঘটেছিল 2005 সালের 20 মার্চ ৷
এর থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছিল 2006 সালের 11 এপ্রিল করাচিতে ৷ সুন্নি মুসলিমদের প্রার্থনা সভা চলছিল ৷ আত্মঘাতী বোমা হামলায় 57 জন প্রাণ হারিয়েছিলেন ৷ এমনকী পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে টার্গেট করে আক্রমণ চালানো হয় ৷ 2007 সালের 18 অক্টোবর করাচিতে সেই হামলার ঘটনায় 139 জনের মৃত্যু হয়েছিল ৷ আট বছর বিদেশে থাকার পর পাকিস্তানে ফিরছিলেন বেনজির ভুট্টো ৷ তবে সেই বছরে জঙ্গি আক্রমণেই তাঁর মৃত্যু হয় ৷ দিনটা ছিল 27 ডিসেম্বর ৷ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় ৷
শুক্রবার নমাজ পাঠের দিনও জঙ্গি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ৷ 2010 সালের 5 নভেম্বর, শুক্রবার ৷ নমাজ পাঠ হচ্ছে দারা আদম খেল নামের একটি মসজিদে ৷ এক আত্মঘাতী হামলাকারী ওই মসজিদে হামলা চালায় ৷ 68 জনের মৃত্যু হয় ৷ ওইদিনই পরে আরেকটি মসজিদে গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা ৷ সেখানে 4 জনের মৃত্যু হয় ৷ এই ঘটনা দু'টির দায় স্বীকার করেছিল পাকিস্তানের তালিবান সংগঠন ৷
আরও পড়ুন: