কোল্লাম ও ক্যালিফোর্নিয়া, 15 ফেব্রুয়ারি: ভারতীয় বংশোদ্ভূত দম্পতি সাংসারিক অশান্তিতে ছিল বলেই মনে করছে তাঁদের আত্মীয়স্বজন ৷ ইটিভি ভারতকে তারা এমনটাই জানিয়েছে ৷ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি বাড়ি থেকে কেরলের দম্পতি আনন্দ সুজিত হেনরি (42) ও তাঁর স্ত্রী অ্যালিস প্রিয়াঙ্কার (40) দেহ উদ্ধার হয় ৷ তাঁদের 4 বছর বয়সি দুই যমজ সন্তানের দেহও উদ্ধার করে পুলিশ ৷ দম্পতি আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিল ৷ আনন্দ পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা সিনিয়র অ্যানালিস্টের কাজ করতেন ৷ প্রথমে নিউজার্সিতে থাকলেও পরে তারা সান মাতিও কাউন্টিতে একটি বাড়ি কেনেন, যার মূল্য 21 লক্ষ মার্কিন ডলার ৷ ওই চার জনের মৃত্যুর ঘটনাটিকে আত্মহত্যা-খুন বলেই উল্লেখ করেছে সান মাতিও পুলিশ ৷ কেন আত্মহত্যা করল কেরলের দম্পতি ?
এই প্রসঙ্গে অ্যালিস প্রিয়াঙ্কার মা জুলিয়েটের আত্মীয়রা ইটিভি ভারতকে জানান, প্রিয়াঙ্কার মা ভারতীয় সময় 12 ফেব্রুয়ারি সকালে আমেরিকা থেকে দেশে ফেরেন ৷ এদিনই কেরলের তিরুবনন্তপুরমে পৌঁছন ৷ বাড়ি ফিরে জুলিয়েট মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে ফোন করেছিলেন ৷ ফোনে তাঁর বাড়ি ফেরার বিষয়টি জানিয়েছিলেন ৷ দিব্য কথাবার্তা হয়েছিল দু'জনের মধ্যে ৷ তবে এর পরে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও মেয়েকে পাননি তিনি ৷ এমনকী হোয়্যাটসঅ্যাপে মেসেজের উত্তর দেয়নি প্রিয়াঙ্কা, হোয়্যাটসঅ্যাপ কলের উত্তরও দেননি ৷
(আমেরিকার স্থানীয় সময়) সোমবার উদ্বিগ্ন জুলিয়েট তাঁর এক আত্মীয়কে জামাই আনন্দ সুজিত হেনরির বাড়িতে পাঠান ৷ বাড়ির কাছে গিয়ে ওই আত্মীয়ের সন্দেহ হয় ৷ তিনি 911 নম্বরে ফোন করে খবর দেন ৷ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ৷ বাড়ির বাইরে থেকে কেউ জোর করে ভিতরে ঢোকেনি বলে জানা যায় ৷ এই প্রসঙ্গে পুলিশ আধিকারিক বলেন, "এটা দুর্ভাগ্যের, আমরা বাড়ির মধ্যে 4 জনের দেহ খুঁজে পাই ৷ একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা এবং দুই শিশু ৷"
তদন্তে জানা গিয়েছে, দুই শিশুকে শ্বাসরোধ করে অথবা তাদের কোনও ওষুধ অতিরিক্ত পরিমাণে খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে ৷ কারণ শিশুদের চোখেমুখে কোনও আতঙ্কের ছাপ নেই ৷ তবে তাদের দেহের ময়নাতদন্ত করার পরই আসল কারণ জানা যাবে ৷ আর আনন্দ ও প্রিয়াঙ্কাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শৌচাগারে পাওয়া যায় ৷ সেখান থেকে 9 মিলিমিটারের একটি পিস্তল এবং ম্যাগাজিন পেয়েছে পুলিশ ৷ পুলিশ নিশ্চিত যে, এই হত্যার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তি বাড়ির মধ্যেই ছিল ৷
এই মৃত্যু সম্পর্কে আত্মীয়রা ইটিভি ভারতকে জানায়, দম্পতি একবার বিবাহ-বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ৷ 2016 সালে তাঁরা সান ফ্রান্সিসকোয় বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন জানান ৷ পরে অবশ্য সে সব মিটিয়ে আবার একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন আনন্দ ও প্রিয়াঙ্কা ৷ এরপরই তাঁদের যমজ সন্তান হয় ৷ আনন্দের বাবা ডঃ জি হেনরি ফতিমা মাতা ন্যাশনাল কলেজ কোল্লামের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ৷ আর অ্যালিস কোল্লাম জেলারই কিলিকোল্লুর এলাকায় বাস করতেন ৷ বিয়ের পর দম্পতি আমেরিকায় পাড়ি দেয় ৷ এরপর আনন্দ আর কখনও কেরলে তাঁর বাড়িতে আসেননি ৷ আত্মীয়দের অনুমান, আনন্দ ও প্রিয়াঙ্কা মধ্যে কোনও দাম্পত্য অশান্তিতে ছিল ৷ আর সেই কারণে এমন চরম পদক্ষেপ করেছে তাঁরা ৷
আরও পড়ুন: