ETV Bharat / international

কুটনৈতিক চালে মাত মুইজ্জু ! ‘ঘনিষ্ট সঙ্গী ভারতই’, সুরবদল মলদ্বীপ রাষ্ট্রপ্রধানের - India Maldives Relation

Mohamed Muizzu: মহম্মদ মুইজ্জুর ভোলবদল ৷ 180 ডিগ্রি ঘুরে মলদ্বীপের রাষ্ট্রপ্রধান জানালেন, ভারতই তাদের ঘনিষ্টতম সহযোগী ৷ কেন এই পরিবর্তন ?

Mohamed Muizzu
Mohamed Muizzu
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 22, 2024, 11:03 PM IST

নয়াদিল্লি, 22 মার্চ: ক্রমশই বাড়ছিল ভারত-মলদ্বীপ কুটনৈতিক জটিলতা ৷ দিনকয়েক আগে সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান মহম্মদ মুইজ্জু জানিয়ে দেন, কোনও পোশাকেই ভারতীয় সেনা সেদেশে থাকতে পারবে না ৷ ফলে আরও কঠিন হয়েছিল ভারত-মলদ্বীপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ৷ তারপরেই আচমকা সুরবদল ৷ একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে মুইজ্জু জানিয়েদিলেন, ভারতই মলদ্বীপের ‘ঘনিষ্টতম’ সঙ্গী ৷

মহম্মদ মুইজ্জু 2023 সালের নভেম্বরে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ৷ নির্বাচনী প্রচারেই তাঁর ভারত বিরোধী মনোভাব প্রকাশ্যে এসেছিল ৷ মুইজ্জু জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি মলদ্বীপ থেকে প্রায় 75 জন ভারতীয় সামরিক কর্মীদের ছোট দলকে দেশ থেকে সরিয়ে দেবেন এবং মলদ্বীপের 'প্রথম ভারত' নীতিতেও পরিবর্তন আনবেন ৷ তারপরই এবার ফের ভোলবদল ৷

এখন আন্তর্জাতিক মহলে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কেন সুর বদলে ফেললেন মুইজ্জু ৷ কারণটা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট ৷ বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝা ৷ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মহম্মদ সোলিহের শাসনকালে মলদ্বীপ সরকার $ 1.4 মিলিয়ন (মলদ্বীপ রুপিয়া 22 মিলিয়ন) ঋণ নিয়েছিল । গত বছরের শেষ নাগাদ ভারতের কাছে মলদ্বীপের পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মলদ্বীপ রুপিয়া 6.2 বিলিয়ন (প্রায় $ 401 মিলিয়ন) । ভারতীয় টাকায় যার 2606 কোটি টাকা ৷

মুইজু বলেছেন, ভারত তাঁর দেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে থাকবে ৷ একই সঙ্গে, তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে নয়াদিল্লি ঋণ পরিশোধে ছাড় দেবে । মুইজ্জু বলেন, “আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে ভারত থেকে অনেক বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে । আমরা এই ঋণের পরিশোধের কাঠামোর মধ্যে ছাড়ের জন্য আলোচনা করছি । কোনও প্রকল্প বন্ধ না-করে যাতে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তাও দেখা যাচ্ছে । আমি সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে দু’দেশের সম্পর্কে কোনও বিরূপ প্রভাবের কারণ দেখি না ।”

ভোলবদলের পিছনে কোন অভিসন্ধি ?

ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছতে শুরু করে কয়েকমাস আগে থেকে ৷ রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের পাবলিক পলিসি সেক্রেটারি আবদুল্লাহ নাজিম ইব্রাহিম জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি মুইজু আনুষ্ঠানিকভাবে 15 মার্চের মধ্যে ভারতকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে বলেছেন ৷ তারপরেই দু’দেশের দু’টি বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে এই সামরিক কর্মীদের বেসামরিক ভারতীয় কর্মীদের দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হবে ৷ প্রথম ব্যাচটি 10 মার্চ এবং শেষ ব্যাচটি 10 মে বদলানো হবে । ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ভারতীয় নাগরিকদের প্রথম ব্যাচ মলদ্বীপে পৌঁছেছিল ।

তারপরেই মলদ্বীপের একটি সংবাদ সংস্থা এডিশন.এমভি’কে মুইজু বলেন, ‘‘10 মে’র পর দেশে কোনও ভারতীয় সৈন্য থাকবে না ৷ ইউনিফর্ম ছাড়াও বেসামরিক পোশাকেও তারা থাকবে না । ভারতীয় সামরিক বাহিনী এদেশে কোনও পোশাকেই থাকবে না । আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই এটা বলছি ।” মুইজ্জু আইধাফুশিতে এক বক্তৃতায় বলেন, “এই লোকেরা (ভারতীয় সামরিকবাহিনীর সদস্য) চলে যাচ্ছে না, তারা তাদের পোশাক পরিবর্তন করে ফিরে আসছে ৷’’

গত কয়েক মাস ধরেই নয়াদিল্লি ও মালের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে । মুইজ্জু 2023 সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । তাঁর নির্বাচনী প্রচারে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি তাঁর দ্বীপরাষ্ট্র থেকে প্রায় 75 জন ভারতীয় সামরিক কর্মীদের একটি ছোট দলকে সরিয়ে দেবেন এবং মলদ্বীপের 'ভারত প্রথম' নীতি পরিবর্তন করবেন ।

এরপরেই স্বাস্থ্যখাতকে লক্ষ্য করে নয়াদিল্লির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে মাল । চিকিৎসার জন্য মলদ্বীপের সার্বজনীন স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্প, ‘আসান্ধা’র (Aasandha) অধীনে তালিকাভুক্ত হাসপাতালগুলি শুধুমাত্র ভারত এবং শ্রীলঙ্কায় থাকলেও তার সিংহভাগ ছিল ভারতে । বিদেশী হাসপাতালে আসান্ধার বিতরণ করা সবচেয়ে বেশি অর্থ ভারতীয় হাসপাতালে গিয়েছে । মুইজ্জুর নির্দেশের পরেই এখন তাইল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর (ইউএই) সঙ্গেও আলোচনা করছে সেদেশ । দু’দেশই চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারীদের মধ্যে শীর্ষে থাকলেও সেদেশ খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি ।

ভারত মহাসাগরে ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে ৷ যা ভারতীয় বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৷ তথ্যবিশ্লেষণকারী সংস্থা উড ম্যাকেঞ্জির মতে, ভারত তার তেলের চাহিদার 88 শতাংশ পূরণ করে সমুদ্রবাহিত আমদানির মাধ্যমে ৷ সমুদ্রপথে কোনও বাধা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির ।পাশাপাশি চিনা গবেষণা জাহাজ 'জিয়াং ইয়াং হং 3'কে মালে বন্দরে ডক করার ছাড়পত্র দিয়েছে মলদ্বীপ ৷ এর আগে যেই জাহাজটিকে নিজেদের বন্দরে নোঙর করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল শ্রীলঙ্কা ৷

পাশাপাশি চিনের একটি কোম্পানি রাজধানী মালের দ্বীপ ফেইডহো ফিনোলহুর 50 বছরের জন্য ইজারা নিয়েছে । যেটি মিনিকয় দ্বীপ থেকে 900 কিলোমিটার এবং ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে 1000 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ৷ ফলে ওই দ্বীপে চিনা সামরিক ঘাঁটি তৈরি হলে তা ভারতের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে ৷

পুনশ্চ: মহম্মদ মুইজু 2023 সালের নভেম্বরে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ৷ নির্বাচনী প্রচারেই তাঁর ভারত বিরোধী মনোভাব প্রকাশ্যে এসেছিল ৷ অতীতে মলদ্বীপের রাষ্ট্রপ্রধানরাই বিস্তৃত দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক এবং ভারতের সঙ্গে সে দেশের সম্পর্ক বিবেচনা করে প্রথমেই ভারত সফর করেছিলেন ৷ তারপরে চিন সফরে যান ৷ চিন মলদ্বীপে বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করে দ্বীপরাষ্ট্রে তার প্রভাব বিস্তার করেছে । মুইজুই প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান যিনি প্রথমে চিন সফরে যান ৷

সম্প্রতি লাক্ষাদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ তাঁর এই সফরকে ঘিরে অবমাননাকর মন্তব্য করেন মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী ৷ এরপরেই এই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক চাপানউতোর তৈরি হয় । পরে অবশ্য ওই তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করেছে মলদ্বীপ সরকার ৷

মুইজু জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি মলদ্বীপ থেকে প্রায় 75 জন ভারতীয় সামরিক কর্মীদের ছোট দলকে দেশ থেকে সরিয়ে দেবেন এবং মলদ্বীপের 'প্রথম ভারত' নীতিতেও পরিবর্তন আনবেন ৷ সেনা প্রত্যাহারের সময় ঠিক করে দিয়ে তারই শুরুটা করেছিলেন ৷ এবার চিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়িয়ে ভারতবৈরিতা আরও পাকা করছেন বলেই মত কূটনৈতিক মহলের একটা বড় অংশের । তারমধ্যেই মলদ্বীপের রাষ্ট্রপ্রধানের এহেন মন্তব্যে কুটনীতির ‘জল’ মাপতে শুরু করেছে নয়াদিল্লি ৷

আরও পড়ুন:

  1. চিনের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ বাড়াচ্ছে মলদ্বীপ, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় তৎপর ভারতও
  2. কোনও পোশাকেই দেশে থাকবে না ভারতীয় সেনা, মুইজ্জুর হুঁশিয়ারিতে ফের সংকটে ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্ক
  3. ভারত বিরোধিতার জের ? মলদ্বীপে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে পরাজিত প্রেসিডেন্ট মুইজুর দল

নয়াদিল্লি, 22 মার্চ: ক্রমশই বাড়ছিল ভারত-মলদ্বীপ কুটনৈতিক জটিলতা ৷ দিনকয়েক আগে সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান মহম্মদ মুইজ্জু জানিয়ে দেন, কোনও পোশাকেই ভারতীয় সেনা সেদেশে থাকতে পারবে না ৷ ফলে আরও কঠিন হয়েছিল ভারত-মলদ্বীপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ৷ তারপরেই আচমকা সুরবদল ৷ একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে মুইজ্জু জানিয়েদিলেন, ভারতই মলদ্বীপের ‘ঘনিষ্টতম’ সঙ্গী ৷

মহম্মদ মুইজ্জু 2023 সালের নভেম্বরে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ৷ নির্বাচনী প্রচারেই তাঁর ভারত বিরোধী মনোভাব প্রকাশ্যে এসেছিল ৷ মুইজ্জু জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি মলদ্বীপ থেকে প্রায় 75 জন ভারতীয় সামরিক কর্মীদের ছোট দলকে দেশ থেকে সরিয়ে দেবেন এবং মলদ্বীপের 'প্রথম ভারত' নীতিতেও পরিবর্তন আনবেন ৷ তারপরই এবার ফের ভোলবদল ৷

এখন আন্তর্জাতিক মহলে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কেন সুর বদলে ফেললেন মুইজ্জু ৷ কারণটা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট ৷ বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝা ৷ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মহম্মদ সোলিহের শাসনকালে মলদ্বীপ সরকার $ 1.4 মিলিয়ন (মলদ্বীপ রুপিয়া 22 মিলিয়ন) ঋণ নিয়েছিল । গত বছরের শেষ নাগাদ ভারতের কাছে মলদ্বীপের পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মলদ্বীপ রুপিয়া 6.2 বিলিয়ন (প্রায় $ 401 মিলিয়ন) । ভারতীয় টাকায় যার 2606 কোটি টাকা ৷

মুইজু বলেছেন, ভারত তাঁর দেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে থাকবে ৷ একই সঙ্গে, তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে নয়াদিল্লি ঋণ পরিশোধে ছাড় দেবে । মুইজ্জু বলেন, “আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে ভারত থেকে অনেক বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে । আমরা এই ঋণের পরিশোধের কাঠামোর মধ্যে ছাড়ের জন্য আলোচনা করছি । কোনও প্রকল্প বন্ধ না-করে যাতে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তাও দেখা যাচ্ছে । আমি সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে দু’দেশের সম্পর্কে কোনও বিরূপ প্রভাবের কারণ দেখি না ।”

ভোলবদলের পিছনে কোন অভিসন্ধি ?

ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছতে শুরু করে কয়েকমাস আগে থেকে ৷ রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের পাবলিক পলিসি সেক্রেটারি আবদুল্লাহ নাজিম ইব্রাহিম জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি মুইজু আনুষ্ঠানিকভাবে 15 মার্চের মধ্যে ভারতকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে বলেছেন ৷ তারপরেই দু’দেশের দু’টি বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে এই সামরিক কর্মীদের বেসামরিক ভারতীয় কর্মীদের দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হবে ৷ প্রথম ব্যাচটি 10 মার্চ এবং শেষ ব্যাচটি 10 মে বদলানো হবে । ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ভারতীয় নাগরিকদের প্রথম ব্যাচ মলদ্বীপে পৌঁছেছিল ।

তারপরেই মলদ্বীপের একটি সংবাদ সংস্থা এডিশন.এমভি’কে মুইজু বলেন, ‘‘10 মে’র পর দেশে কোনও ভারতীয় সৈন্য থাকবে না ৷ ইউনিফর্ম ছাড়াও বেসামরিক পোশাকেও তারা থাকবে না । ভারতীয় সামরিক বাহিনী এদেশে কোনও পোশাকেই থাকবে না । আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই এটা বলছি ।” মুইজ্জু আইধাফুশিতে এক বক্তৃতায় বলেন, “এই লোকেরা (ভারতীয় সামরিকবাহিনীর সদস্য) চলে যাচ্ছে না, তারা তাদের পোশাক পরিবর্তন করে ফিরে আসছে ৷’’

গত কয়েক মাস ধরেই নয়াদিল্লি ও মালের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে । মুইজ্জু 2023 সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন । তাঁর নির্বাচনী প্রচারে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি তাঁর দ্বীপরাষ্ট্র থেকে প্রায় 75 জন ভারতীয় সামরিক কর্মীদের একটি ছোট দলকে সরিয়ে দেবেন এবং মলদ্বীপের 'ভারত প্রথম' নীতি পরিবর্তন করবেন ।

এরপরেই স্বাস্থ্যখাতকে লক্ষ্য করে নয়াদিল্লির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে মাল । চিকিৎসার জন্য মলদ্বীপের সার্বজনীন স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্প, ‘আসান্ধা’র (Aasandha) অধীনে তালিকাভুক্ত হাসপাতালগুলি শুধুমাত্র ভারত এবং শ্রীলঙ্কায় থাকলেও তার সিংহভাগ ছিল ভারতে । বিদেশী হাসপাতালে আসান্ধার বিতরণ করা সবচেয়ে বেশি অর্থ ভারতীয় হাসপাতালে গিয়েছে । মুইজ্জুর নির্দেশের পরেই এখন তাইল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর (ইউএই) সঙ্গেও আলোচনা করছে সেদেশ । দু’দেশই চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারীদের মধ্যে শীর্ষে থাকলেও সেদেশ খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি ।

ভারত মহাসাগরে ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে ৷ যা ভারতীয় বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৷ তথ্যবিশ্লেষণকারী সংস্থা উড ম্যাকেঞ্জির মতে, ভারত তার তেলের চাহিদার 88 শতাংশ পূরণ করে সমুদ্রবাহিত আমদানির মাধ্যমে ৷ সমুদ্রপথে কোনও বাধা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকির ।পাশাপাশি চিনা গবেষণা জাহাজ 'জিয়াং ইয়াং হং 3'কে মালে বন্দরে ডক করার ছাড়পত্র দিয়েছে মলদ্বীপ ৷ এর আগে যেই জাহাজটিকে নিজেদের বন্দরে নোঙর করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল শ্রীলঙ্কা ৷

পাশাপাশি চিনের একটি কোম্পানি রাজধানী মালের দ্বীপ ফেইডহো ফিনোলহুর 50 বছরের জন্য ইজারা নিয়েছে । যেটি মিনিকয় দ্বীপ থেকে 900 কিলোমিটার এবং ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে 1000 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ৷ ফলে ওই দ্বীপে চিনা সামরিক ঘাঁটি তৈরি হলে তা ভারতের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে ৷

পুনশ্চ: মহম্মদ মুইজু 2023 সালের নভেম্বরে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ৷ নির্বাচনী প্রচারেই তাঁর ভারত বিরোধী মনোভাব প্রকাশ্যে এসেছিল ৷ অতীতে মলদ্বীপের রাষ্ট্রপ্রধানরাই বিস্তৃত দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক এবং ভারতের সঙ্গে সে দেশের সম্পর্ক বিবেচনা করে প্রথমেই ভারত সফর করেছিলেন ৷ তারপরে চিন সফরে যান ৷ চিন মলদ্বীপে বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করে দ্বীপরাষ্ট্রে তার প্রভাব বিস্তার করেছে । মুইজুই প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান যিনি প্রথমে চিন সফরে যান ৷

সম্প্রতি লাক্ষাদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ তাঁর এই সফরকে ঘিরে অবমাননাকর মন্তব্য করেন মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী ৷ এরপরেই এই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক চাপানউতোর তৈরি হয় । পরে অবশ্য ওই তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করেছে মলদ্বীপ সরকার ৷

মুইজু জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি মলদ্বীপ থেকে প্রায় 75 জন ভারতীয় সামরিক কর্মীদের ছোট দলকে দেশ থেকে সরিয়ে দেবেন এবং মলদ্বীপের 'প্রথম ভারত' নীতিতেও পরিবর্তন আনবেন ৷ সেনা প্রত্যাহারের সময় ঠিক করে দিয়ে তারই শুরুটা করেছিলেন ৷ এবার চিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়িয়ে ভারতবৈরিতা আরও পাকা করছেন বলেই মত কূটনৈতিক মহলের একটা বড় অংশের । তারমধ্যেই মলদ্বীপের রাষ্ট্রপ্রধানের এহেন মন্তব্যে কুটনীতির ‘জল’ মাপতে শুরু করেছে নয়াদিল্লি ৷

আরও পড়ুন:

  1. চিনের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ বাড়াচ্ছে মলদ্বীপ, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় তৎপর ভারতও
  2. কোনও পোশাকেই দেশে থাকবে না ভারতীয় সেনা, মুইজ্জুর হুঁশিয়ারিতে ফের সংকটে ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্ক
  3. ভারত বিরোধিতার জের ? মলদ্বীপে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে পরাজিত প্রেসিডেন্ট মুইজুর দল
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.