ওয়াশিংটন, 6 নভেম্বর: আমেরিকার 47তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড জন ট্রাম্প ৷ 2016 সালের পর 2024 সালে তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসের সূচনা হয়েছে বুধবার ৷ চার বছর আগে 2020 সালে তাঁকে হারিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন জো বাইডেন ৷ এবার ট্রাম্পের অবিশ্বাস্য ক্যামব্যাক দেখল বিশ্ব।
পরাজয় অবশ্য ট্রাম্প মেনে নিতে চাননি এবং আজও মানেন না ৷ এরপর 2021 সালের 6 জানুয়ারি একদল উত্তেজিত জনতা ওয়াশিংটন ডিসি-র ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায় ৷ প্রশাসন মনে করে তাঁরা সবাই ট্রাম্পের সমর্থক ছিলেন ৷ এই ঘটনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ৷ এছাড়া ফৌজদারি মামলাও হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে ৷ সেসব এখন ইতিহাস ৷ রিপাবলিকান প্রার্থী 280টি ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে দ্বিতীয় বার হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা হতে চলেছেন ৷ 277টি ভোট পেলেই জয় নিশ্চিত হয়। 224টি ভোট নিয়ে অনেক পিছনে থাকতে হচ্ছে হ্যারিসকে। সম্পূর্ণ ফলাফল প্রকাশিত হলে বোঝা যাবে কে কোথায় থামলেন ?
জয় নিশ্চিত হতেই তিনি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, "আমেরিকায় স্বর্ণযুগের সূচনা হয়েছে ৷ আমেরিকাবাসীদের ধন্যবাদ ৷ আপনারা আমাকে দেশের 45তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত করেছিলেন ৷ আপনারাই ফের 47তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নিয়েছেন ৷ আপনাদের আশা-আকাঙ্খা পূরণ না-হওয়া পর্যন্ত আমি কাজ করে যাব। "
দুনিয়ায় কী প্রভাব?
আমেরিকায় ট্রাম্পের দ্বিতীয় শুরুর ইঙ্গিত পেতেই চাঙ্গা হয়েছে শেয়ার বাজার ৷ কিন্তু বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রনেতাদের কাছে এই জয় কি একটা ধাক্কা ? রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছে, ইউরোপে আমেরিকার মিত্র দেশগুলি, এশিয়াও তাঁর জাতীয়তাবাদী নীতিগুলির ফিরে আসা নিয়ে ভয়ে রয়েছে ৷ তাঁর মধ্যে রাশিয়ার 'স্বৈরাচারী' প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ছায়া দেখতে পাচ্ছে দুনিয়ার একাংশ ৷ এসব সত্ত্বেও আমেরিকান ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে ৷ বিটকয়েন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে ৷
ইতিহাসের ট্রাম্প-কার্ড
নির্বাচনের আগে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে প্রচার করেছিলেন ডেমোক্র্যাট ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ৷ বোঝা যাচ্ছিল না, কে হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ? শেষমেশ জিতলেন ট্রাম্প। আর তার সঙ্গে বেশ কয়েকটি রেকর্ডের মালিকও হলেন তিনি-
- ট্রাম্প ফিরে আসায় তিনিই হলেন দেশের সবচেয়ে বেশি বয়সি প্রেসিডেন্ট ৷
- তিনিই আবার দেশের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট, যিনি মাঝের একটি নির্বাচন ছাড়া বাকি দু'টিতেই জয়ী হয়েছেন ৷
- তিনিই দেশের প্রথম সেই প্রেসিডেন্ট, যাঁর বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা রয়েছে ৷
কী হলে কী কী হত?
সব অভিযোগকে পিছনে ফেলে অবিশ্বাস্য জয় পেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ৷ ফ্লোরিডায় তাঁর মার-আ-লাগো রিসর্টে এখন উৎসবের আবহ ৷ জিতলে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেবেন হ্যারিস, এমনটাই কথা ছিল । তা আর হয়নি ৷ এদিকে, ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক বিশ্বের পয়লা নম্বর ধনকুবের ইলন মাস্ক লিখেছেন, "গেম, সেট অ্যান্ড ম্যাচ ৷" ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস জিতলে তিনিই হতেন-
- দেশের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ মহিলা প্রেসিডেন্ট
- প্রথম দক্ষিণ এশিয় প্রেসিডেন্ট ৷
জুলাই মাসে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে প্রচার থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন 81 বছর বয়সি জো বাইডেন ৷ তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ঘিরে আশার আলো দেখেছিলেন ডেমোক্র্যাটরা ৷
- ট্রাম্পের জয়ের ইঙ্গিতে তুঙ্গে শেয়ারবাজার ! ঊর্ধ্বমুখী Sensex-Nifty, মালামাল বিনিয়োগকারীরা
কেমন ছিল প্রচার?
ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে শুরু নারী স্বাধীনতার মতো ইস্যুকে হাতিয়ার করেছিলেন ৷ হ্যারিস বারবার বুঝিয়েছেন, ট্রাম্প গণতন্ত্রের জন্য হুমকি ৷ শুধু তাই নয়, তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীম দু'দুবার অনাস্থার মুখোমুখি হয়েছেন ৷ বারংবার এই কথাগুলি হ্যারিসের প্রচারে উঠে এসেছে ৷
এদিকে ট্রাম্পের উপর ভরসা করেছেন আমেরিকার শ্রমিক শ্রেণির মানুষ ৷ দেশে লাগাতার মূল্য বৃদ্ধি, সীমান্তে সুরক্ষা, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলিতে জোর দিয়েছিলেন ট্রাম্প ৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেই তিনি দেশ থেকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ৷ তার 'আমেরিকাকে শ্রেষ্ঠ করে তোলার' প্রতিশ্রুতিই মন কেড়েছে আমেরিকাবাসীর একাংশের ৷
ট্রাম্প এবং আগামী
একবছর আগে থাকতে শুরু হওয়া এই নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নজর রেখেছিল সারা পৃথিবী ৷ এমনকী ইউক্রেন, অশান্ত মধ্যপ্রাচ্যও ৷ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশের অর্থনীতি, বিদেশনীতি, কূটনীতি, প্রতিরক্ষা, যুদ্ধনীতি, অভিবাসনের মতো বিষয়গুলিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি কী হবে ? চিন আর রাশিয়াকে কীভাবে সামলাবে আমেরিকা ? এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর পেতে দ্বিতীয় ট্রাম্প জমানার দিকে তাকিয়ে দুনিয়া ৷