ঢাকা ও কলকাতা, 5 অগস্ট: পতন ঘটল বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের ৷ অন্তর্বতী সরকার গঠন হওয়া পর্যন্ত দেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্বে, জানালেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ৷ এদিকে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অশান্তির আঁচ যাতে সীমান্তে না পড়ে তার জন্য 4,096 কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে বিএসএফ চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছ ৷ ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন বিএসএফের কার্যনির্বাহী প্রধান দলজিৎ সিং চৌধুরি ৷ বিভিন্ন জায়গায় সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে ৷ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ৷ চেন্নাই থেকে ঢাকাগামী বিমান কলকাতায় অবতরণ করেছে ৷
#Bangladesh: Full video of protestors storming PM’s palace in Dhaka. Protestors can be seen inside the office of Sheikh Hasina.pic.twitter.com/I0F0vPJYpY
— Ahmer Khan (@ahmermkhan) August 5, 2024
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ওড়ার পর আগরতলা হয়ে গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করল শেখ হাসিনার সি-130 পরিবহণ বিমান ৷ দেশের আকাশসীমায় প্রবেশের পর থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনী এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলির দ্বারা বিমানের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল ৷ হাসিনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী তা এখনও স্পষ্ট নয় ৷ একটি সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছিল হাসিনা ছেলে জয়ের কাছে লন্ডনে চলে যাবেন ৷ তবে তাতে বেশ কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে ৷ তাই সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয় ৷ তবে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার মেয়ে সাইমা ওয়াজেদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন হাসিনা ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিভাগের এই আধিকারিক কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন ৷ তাঁর সঙ্গে মঙ্গলবার দেখা হতে পারে হাসিনার ৷
পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র সংবাদসংস্থা এএফপিকে একথা জানিয়েছে । সূত্র আরও জানিয়েছে, দুপুর 2.30 মিনিট নাগাদ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছেন ৷ পাশাপাশি তাঁর বাসভবন গণভবনের দখল নিয়েছে জনতা ৷
সোমবারের বাংলাদেশ মনে করিয়ে দিয়েছে দু'বছর দুয়েক আগের শ্রীলঙ্কা ৷ ঠিক একইভাবে প্রবল জনরোষের মাঝে দেশ ছেড়েছিলেন শ্রীলঙ্কার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপাক্ষে ৷ এবার দেশ ছাড়লেন হাসিনা ৷ শুধু তাই নয়, আওয়ামি লিগের ধানমুন্ডির কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ পাশাপাশি ওই এলাকায় থাকা দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদউদজামান খানের বাড়িতেও ভাঙচুর হয়েছে ৷ বিক্ষোভকারীরা প্রধান বিচারপতি ওবাইদুল হাসানের ধানমুন্ডির বাড়ির পাঁচিল টপকে ঢুকে পড়ে ৷ সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হচ্ছে ৷ এর পাশাপাশি 32 নম্বর ধানমুন্ডি রোডে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের স্মৃতি যাদুঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ আরও পরে সংসদ ভবনের দখল নিল জনতা ৷ তাছাড়া দেশের নিজের বাসভবন বঙ্গভবনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছেন রাষ্ট্রপতি
জানা গিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ প্রগতি সরণি ধরে এগিয়ে যান গণভবনের দিকে ৷ ধীরে ধীরে মুজিবদের বাসভবন চলে যায় জনতার দখলে ৷ বাড়ির বসার ঘর থেকে শুরু করে অন্য বিভিন্ন জায়গার দখল নিয়ে নেয় ভিড় ৷ সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যেই সেই সমস্ত ভিডিয়ো ছডিয়ে পড়েছে ৷ অন্যদিকে, ছাত্র আন্দোলনের কো-অর্ডিনেটর আসিফ মাহমুদ সামরিক শাসন প্রত্যাখান করেছেন ৷ স্থানীয় সময় বেলা তিনটে নাগাদ ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, "দেশ এখনও স্বাধীন হয় নাই ৷ স্বাধীনতার ঘোষণা আসলে শাহবাগ থেকে আসবে, ক্যান্টনমেন্ট থেকে না ৷"
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সাবধানি প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, "আমরা বিস্তারিত জানি না। আমরা সকলেই উদ্বিগ্ন ৷ এই অবস্থায় বাংলায় সবাইকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করব। কেউ যেন কোন উত্তেজনা না ছাড়ায় ৷ কেউ কোনও উত্তেজনায় পা দেবেন না ৷ উস্কানিমূলক কোনও কথা বলবেন না ৷ কারণ ব্যাপারটা ভারত সরকারের অধীনে। ভারত সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে আমরা তা মেনে চলবো। দুটো সরকারের ব্যাপার। ভারত সরকার আমাদের যে নির্দেশ দেবে তাই পালন করব। বিজেপি এবং আমাদের নেতাদেরও বলব সকলে শান্ত থাকুন ৷ ভারত সরকারকে বিবেচনা করতে দিন বিষয়টি নিয়ে ৷"
এএফপি আরও জানিয়েছে যে, ঢাকা ছাড়ার আগে একটি বক্তৃতা রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ৷ তবে সেটিও করার সুযোগ পাননি তিনি ৷ ইতিমধ্যেই গণভবনের সামনে হাজির হয়েছেন হাজারো বিক্ষোভকারী ৷ গত কয়েকদিনের সরকার বিরোধী বিক্ষোভে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে অন্তত 300 জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ ও চিকিৎসকরা ৷
রবি-ছুটির দিনে মৃত্যুমিছিলের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ ৷ দফায় দফায় সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা 100 ছাড়িয়েছে ৷ বিক্ষোভকারীরা আজ 'ঢাকা পর্যন্ত মহামিছিল'এর কর্মসূচি নিয়েছেন ৷ আর সেই মহামিছিলে সাধারণ জনগণকে যোগদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে ৷ এই কর্মসূচিকে ঘিরেই সপ্তাহের প্রথম দিনে ফের উত্তাল হয়েছে প্রতিবেশী দেশ ৷ আজ আরও 6 জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে রবিবার সরব হন বিক্ষোভকারীরা ৷ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয় ৷ সংঘর্ষে 14 জন পুলিশকর্মী-সহ অন্তত 100 জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সে দেশের শীর্ষস্থানীয় বাংলা ভাষার সংবাদপত্র প্রথম আলো ৷
চাকরিতে সংরক্ষণ পদ্ধতি ইস্যুতে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি নিয়ে রবিবার আন্দোলনের সুর চড়ান ছাত্ররা ৷ স্টুডেন্টস আগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশনের ব্যানারে তাঁরা অসহযোগ কর্মসূচিতে অংশ নেন ৷ তখনই তাঁদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ, ছাত্রলিগ ও যুবলিগ কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে । হিংসা মুহূর্তে এতটাই বেড়ে যায় যে, প্রশাসন বাধ্য হয়ে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় এবং একটি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে ।