হায়দরাবাদ, 6 এপ্রিল: প্রচণ্ড গরম ৷ টানা শুষ্ক আবহাওয়া ও তাপপ্রবাহের মতো অবস্থার কারণে নাভিশ্বাস উঠেছে রাজ্যবাসীর ৷ এই অবস্থায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডায়েটে কোন কোন খাবার রাখলে শরীর থাকবে সুস্থ ও ফিট পরামর্শ দিলেন নিউট্রিশন মন্ত্রার প্রতিষ্ঠাতা তথা বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত ৷
সকালে খালি পেটে- আসলে স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রাখলে অনেকে খালি পেটে গরম জলে লেবু-মধু মিশিয়ে খান ৷ কিন্তু এই গরমে সেটা না করে ঠাণ্ডা জলে লেবু মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ শর্মিষ্ঠা ৷ তবে সেটা খালি পেটে খেতে হবে এমন কোনও বিষয় নেই ৷ তবে তিনি ডিটক্স ওয়াটার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন খালি পেটে ৷
*কীভাবে বানাবেন
- এক গ্লাস জলে চারটে-পাঁচটা পুদিনা পাতা, তিনটে থেকে চারটে তুলসী পাতা, এক চামচ জিরে, যদি ঘরে শশা থাকে এক ইঞ্চি খোসা সমেত, পাতি লেবুর একটা বা দুটো স্লাইস কেটে সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে । সকালে সেটা খালি পেটে খেতে হবে । গরমের জন্য এই জল খুব স্বাস্থ্যকর । কেউ চাইলে চা পান করতে পারেন । তবে লিকার চা বেটার।
ব্রেকফাস্ট বা টিফিন- সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার আধঘণ্টার মধ্যে টিফিন বা ব্রেকফাস্ট করা ভালো ৷ তবে যদি দেরি হয় তা যেন দেড় ঘণ্টার বেশি না হয় ৷ গরম খাবার না খেয়ে শরীরে তাপমাত্রাকে সঠিক রাখবে এমন খাবার বেছে নেওয়া যেতে পারে ৷ ওটস খাওয়া যেতে পারে । সঙ্গে একটা ডিমের সাদা অংশ । হলুদটা বাদ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে অতিরিক্ত গরমের জন্য । সঙ্গে যে কোনও সবজি সিজিওনাল । সেদ্ধ করে খেতে পারে । পিঁয়াজ-লঙ্কা যোগ করতে পারেন ।
- ছাতুর শরবত খেতে পারেন । এতে প্রোটিন আছে ।
- রুটি খেতে যাঁরা পছন্দ করেন খেতে পারেন ।
- অপশন হিসাবে বলা যেতে পারে রোস্টেড ওটসের সঙ্গে দই, স্প্রাউটস, খেঁজুর, মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে ৷ সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ রাখা যেতে পারে ।
মিড-মর্নিং স্ন্যাক্স
12-1টা নাগাদ বাইরে তাপমাত্রার পারদ আরও বেশি বেড়ে যায় ৷ এই সময়ে শরীরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী ৷ এই সময়ে তরমুজের রস, আখের রস খাওয়া ভালো ৷ শরীর ঠাণ্ডা থাকবে ৷ এছাড়া পুদিনার সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন ৷ খেতে পারেন ডাবের জলও ৷
দুপুরে খাবার বা লাঞ্চ
দুপুরে ভাতের সঙ্গে টক ডাল এই গরেমের জন্য খুব উপকারী ৷ এর সঙ্গে ঋতুকালীন কোনও সবজি বেশি মশালা না ব্যবহার করে রান্না করে খাওয়া ভালো ৷
এছাড়াও মাছ রাখাও গুরুত্বপূর্ণ তবে সেটা দই দিতে করতে পারেন, সঙ্গে ব্যবহার করুন সবজি ৷ তাহলে অতিরিক্ত পুষ্টি যাবে ৷ তবে মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত মশলা কোনও রান্নাতেই ব্যবহার না করাই ভালো ৷ শরীরে প্রোটিনের লেভেল ব্যালেন্স হয় ৷ ক্যালসিয়াম ঢোকে, শরীর হাইড্রেটেড রাখে ৷
পান্তাভাত এই সময়ে খাওয়া ভীষণ ভালো ৷ আগের দিন রাতে ভাত করার পর তাতে জল ঢেলে সেটা সকালে খেতে পারি । সেটা খুব হেলদি । মোটামোটি 12 ঘণ্টা জলে ভেজানো ভাত স্বাস্থ্যকর । তার সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ-লঙ্কা ব্যক্তির পছন্দের উপর নির্ভর করছে ৷ সঙ্গে সবজি ৷ মাছ বা মাংস রোস্ট করে খেতে পারেন ৷
টমেটোর টক খেতে পারেন ৷ চিনি ছাড়া হালকা টক জাতীয় খাবার এই সময়ে খাওয়া ভালো ৷ শশা রাখার চেষ্টা অবশ্যই করবেন ৷ এছাড়াও দই-ভাত খেতে পারেন ৷ সবজিগুলিকে রোস্ট করে খেতে পারেন ৷
বিকেল 4টে নাগাদ একটা ভ্যাপসা গরম অনুভূত হয় ৷ এই সময় কিছু ফল রাখতে পারেন ৷ আঙুর, তরমুজ, দইয়ের ঘোল ইত্যাদি খেতে পারেন ৷
সন্ধ্যের টিফিন বা ইভিনিং স্ন্যাক্স
এই অনেকে সন্ধ্যের টিফিন খান না বা স্কিপ করে যান ৷ তবে এটা কিন্তু ম্যান্ডাটরি ৷ বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ৷ হোমমেড আইসক্রিম দিতে পারেন ৷ জার্মানির এক রিসার্চ অনুযায়ী, আইসক্রিম খেলে বাচ্চাদের ব্রেন ডেভেলপমেন্ট করে ৷ তাই বাইরের আইসক্রিম না দিয়ে ঘরে তৈরি আইসক্রিম দিতে পারেন ৷ দই, ইয়োগার্ট, পুদিনার ছাঁচ, লস্যি, ছাতুর সরবত খাওয়া যেতে পারে ৷ সঙ্গে ঘরে যে ধরনের ড্রাই ফ্রুটস রয়েছে তা ব্যবহার করুন ৷
রাতের খাবার বা ডিনার
এক্ষেত্রে পুষ্টিবিদের পরামর্শ সম্ভব হলে তাড়াতাড়ি ডিনার বা রাতের খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ৷ ভাতের সঙ্গে ডাল-সবজি খেতে পারেন ৷ বাইরে কেনা খাবার খেতে হলে ইডলি-সম্বার খেতে পারেন ৷ ইডলিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক রয়েছে ৷ পেট ঠাণ্ডা করতে সাহায্য করে ৷ এই সমসেয়র জন্য খুব ভালো ৷ রেডি টো কুক খেতে গেলে হুইট ফ্লেক্স (wheat Flakes) খেতে পারেন টক দই দিয়ে ৷
কীকী খাবার খাবেন না
এই সময়ে পিৎজা, বার্গার, বা প্রসেস ফুড খাওয়া উচিত নয় ৷ গরমে শরীর ভালো রাখতে এই ধরনের খাবার খাওয়া উচিত নয় ৷ সঙ্গে ঠাণ্ডা পানীয় বা কালারযুক্ত পানীয় খাওয়াও উচিত নয় ৷ যদি কেউ খেতে চান, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ হবে ৷
আরও পড়ুন
1. অকারণে মেজাজ খিটখিটে, শারীরিক সম্পর্কে অনীহা... পেরিমেনোপজের লক্ষণ নয় তো?
2. ভারতে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা: সুরক্ষিত থাকতে কী করবেন, কী করবেন না, জেনে নিন...
3. গরমে সাবধান না হলে কিডনিতে হতে পারে পাথর, সতর্কবার্তা চিকিৎসকের