হায়দরাবাদ: চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স থেকে পরিত্রাণ পেতে লেজার সার্জারিকে একটি কার্যকর এবং নিরাপদ উপায় বলে মনে করা হয়। এটা লক্ষণীয় যে লেজার সার্জারি চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে এবং অন্যান্য দৃষ্টি সম্পর্কিত সমস্যা যেমন দূরদৃষ্টি বা মায়োপিয়া, হাইপারমেট্রোপিয়া এবং দৃষ্টিকোণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লেজার সার্জারি খুবই সহজ একটি সার্জারি, কিন্তু অনেক সময় সফল অস্ত্রোপচারের পরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা বা জিনিস না-নেওয়ার কারণে চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে (Laser surgery has a low risk of complications) ।
অস্ত্রোপচারের পরে যে কোনও ধরনের সমস্যা এড়াতে ও চোখের দ্রুত নিরাময়ের জন্য, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে লেজার সার্জারি শুধুমাত্র একজন যোগ্যতাসম্পন্ন এবং প্রশিক্ষিত চক্ষু বিশেষজ্ঞ দ্বারাই করানো উচিত এবং অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অনুসরণ করা উচিত ।
লেজার সার্জারি কী (Laser surgery) ?
নয়াদিল্লির চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ নুপুর জোশি ব্যাখ্যা করেছেন যে, লেজার সার্জারি হল একটি সাধারণ অস্ত্রোপচার পদ্ধতি যা কমপক্ষে 18 বছর বয়সের পরে দুর্বল দৃষ্টি দূর করার জন্য, অর্থাৎ দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে ও চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্সের প্রয়োজনীয়তা দূর করতে করা হয় ।
এই অস্ত্রোপচারে কর্নিয়ার আকৃতি ঠিক করা হয় । লক্ষণীয় যে, বিভিন্ন কারণে অনেক সময় চোখের কর্নিয়া বা লেন্স স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রসারিত বা সঙ্কুচিত হয়। যা মায়োপিয়া, হাইপারমেট্রোপিয়া এবং অ্যাস্টিগম্যাটিজম-সহ দৃষ্টি সম্পর্কিত নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। আসলে কোনও কারণে কর্নিয়ার আকৃতি অস্বাভাবিক হলে চোখের ভেতরে প্রবেশ করা আলো এক পর্যায়ে রেটিনায় ফোকাস করে না এবং দৃষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দেয় । লেজার সার্জারি হল একটি স্থায়ী চিকিৎসা যেখানে সার্জারির মাধ্যমে কর্নিয়ার আকৃতি স্বাভাবিক করা হয় । ফলে দৃষ্টিশক্তিও ঠিক হয়ে যায় ।
চিকিৎসক বলেন, "লেজার সার্জারির আগে ও পরে কিছু জিনিসের যত্ন নেওয়া এবং সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ যাতে শুধুমাত্র অস্ত্রোপচার সফল হয় না কিছু বিরূপ পরিণতিও দেখা না যায় ।"
সতর্কতা: চিকিৎসক বলেন, "18 বছর বয়সের পরেও এই অস্ত্রোপচার করা হয় । কিন্তু এরপরেও কিছু শর্ত রয়েছে যেখানে ডাক্তাররা অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন না । উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও ব্যক্তির একটি গুরুতর রোগ থাকে বা তার বিশেষ চিকিৎসা চলছে । এছাড়াও, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদেরও অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হয় না ।"
তিনি আরও বলেন, "অস্ত্রোপচারের আগে, চোখের পরীক্ষার সময় ব্যক্তির উচিত তার সার্বিক স্বাস্থ্যের বিশদ ডাক্তারকে দেওয়া ৷ যেমন তার পূর্বের কোনও রোগ আছে কি না বা কোনও কারণে সে নিয়মিত কোন ওষুধ সেবন করছে কিনা । যারা কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন, ডাক্তাররা সাধারণত তাদের অস্ত্রোপচারের কিছু সময় আগে কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার না-করার পরামর্শ দেন ।
ডাঃ নূপুর জোশি বলেন, "যদিও ল্যাসিক সার্জারির সময় বা পরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও জটিলতার সম্ভাবনা খুব কম ৷ তবুও অস্ত্রোপচারের পরে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয় । যাতে কোনও সমস্যা ছাড়াই ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করা যায় । এর মধ্যে কয়েকটি সতর্কতা নিম্নরূপ ।"
- অস্ত্রোপচারের পর অন্তত এক দিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিন ।
- ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত সমস্ত ওষুধ সময়মতো গ্রহণ করুন ও নিয়মিত চোখের ড্রপ প্রয়োগ করুন । এতে সংক্রমণ রোধ হবে ও চোখের ফোলাভাব দ্রুত কমে যাবে ।
- ল্যাসিক সার্জারির পরে পুনরুদ্ধারের সময়কালে চোখের জ্বালা বা চুলকানি হওয়া সাধারণ । কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে চোখ চুলকানো বা ঘষা এড়িয়ে চলতে হবে । কারণ এতে কর্নিয়ার ক্ষতি হতে পারে ও চোখের আরও কিছু সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় ।
ল্যাসিক সার্জারির পর, ডাক্তাররা কিছু সময়ের জন্য একটানা নিরাপত্তা চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দেন। অস্ত্রোপচারের পর পরের কয়েকদিন রোদে বের হওয়া উচিত নয়। আসলে, আপনি যখন রোদে বের হন, তখন আপনার চোখ অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে আসতে পারে, যা সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই নিরাপত্তা চশমা খুলে ফেলার পরও ঘরের বাইরে বা রোদে যাওয়ার সময় কিছু সময়ের জন্য সানগ্লাস পরা বাধ্যতামূলক ।
- কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য কম্পিউটার, টিভি বা মোবাইল স্ক্রিন ব্যবহার সীমিত করুন। এতে চোখের ওপর চাপ কম পড়বে।
- অস্ত্রোপচারের পর অন্তত এক মাসের জন্য সাঁতার কাটা এবং ধুলোবালির জায়গায় যাওয়া এড়িয়ে চলুন ।
- ল্যাসিক সার্জারির পরে প্রায় এক সপ্তাহ গাড়ি চালানো, ব্যায়াম করা, দৌড়নো, দ্রুত হাঁটা এবং চোখের মেক-আপ করা ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।
- চিকিৎসক পরামর্শ দেন এই সমস্ত সতর্কতা অনুসরণ করার পাশাপাশি, রোগীকে তার নিয়মিত ফলো-আপ অ্যাপয়েন্টমেন্টে যেতে হবে এবং ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ ও নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে ।