আপনি জানেন কেন মাঝে মাঝে আমাদের হঠাৎ মিষ্টি খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা হয় ? এমন পরিস্থিতিতে আমরা মিষ্টি, চকলেট এবং যেকোনও ধরনের মিষ্টিজাতীয় খাবার খুঁজতে শুরু করি । মিষ্টি না-পেলে আমরা অস্থির হয়ে যাই, অনীহা বা খিটখিটে বোধ করি । কেন এমনটা হয় তা কি কখনও ভেবে দেখেছেন ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় 'সুগার ক্রেভিং' খুবই সাধারণ একটি আচরণ । কিন্তু মানুষের মধ্যে যদি এটি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে, তবে তা কখনও কখনও শরীরে একধরনের পুষ্টির ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে ৷ যেখানে এটি নিয়ন্ত্রণ না-করা হলে এবং এই ইচ্ছার কারণে মিষ্টি খাওয়া হলে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ।
দিল্লির পুষ্টিবিদ ডাঃ দিব্যা শর্মা বলেন, ‘‘মিষ্টি খাবার আসলে শরীরে শক্তি উৎপাদন ও বজায় রাখতে সাহায্য করে । অনেক সময়, যখন আমরা মানসিক বা শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি বা চাপের সম্মুখীন হই, আমাদের শরীর তাৎক্ষণিক শক্তির প্রয়োজন, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করে ৷ যাতে শরীরে ইনস্ট্যান্ট শক্তি আসে ৷’’
এছাড়াও, শরীরে রক্তে শর্করার ওঠানামা বৃদ্ধি বা হ্রাসের কারণেও এটি হতে পারে । কখনও কখনও নির্দিষ্ট হরমোনের পরিবর্তনও এই লোভের জন্য দায়ী হতে পারে । বিশেষ করে, মহিলাদের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে শরীরে মিষ্টি খাওয়ার আগ্রহ বেড়ে যায় ।
চিকিৎসক জানান, মাঝে মাঝে মিষ্টির লোভ থাকা খুবই স্বাভাবিক ৷ কিন্তু যদি এটি খুব বেশি হয় তবে এটি অস্বাভাবিক বলে মনে করা হয় ৷ এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন । এছাড়া ঘন ঘন মিষ্টির ইচ্ছার কারণে যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মিষ্টি খাওয়া হয় তাহলে তা অনেক সমস্যারও সৃষ্টি করতে পারে ।
ডাঃ দিব্যা বলেন, "খাবারে অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে ৷ যেমন অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে ওজন বাড়তে পারে ৷ আবার এটি ডায়াবেটিসের মতো অনেক রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে ৷ তাই এটি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি । স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, সুষম খাদ্য এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এই লোভগুলি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।"
মিষ্টি লোভ নিয়ন্ত্রণের উপায়:
তিনি পরামর্শ দেন, একজন ব্যক্তির অস্বাভাবিক মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা থাকলে তবে তাদের একজন পুষ্টিবিদ বা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত । এছাড়াও, কিছু জিনিস এবং অভ্যাস রয়েছে যা আপনার দৈনন্দিন রুটিনে গৃহীত হলে মিষ্টির প্রতি অস্বাভাবিক লোভ কমাতে সাহায্য করতে পারে । যার কয়েকটি নিম্নরূপ ।
সুষম খাদ্য খাওয়া: আপনার খাদ্যে প্রোটিন, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি অন্তর্ভুক্ত করুন ৷ যাতে শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করা যায় এবং চিনির লোভ কমানো যায় ।
পর্যাপ্ত ঘুম: ভালো ঘুম শরীরে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং মিষ্টির প্রতি আকাঙ্ক্ষা কমায় ।
চাপ নিয়ন্ত্রণ: মানসিক চাপ কমাতে প্রতিদিন ব্যায়াম, ধ্যান এবং যোগব্যায়াম করা প্রয়োজন । এতে মিষ্টি খাওয়ার অহেতুক ইচ্ছা কমে যাবে ।
ফল এবং ড্রাই ফ্রুট খাওয়া: যদি মিষ্টির প্রতি আগ্রহ থাকে তবে চকলেট বা মিষ্টির পরিবর্তে ফল বা ড্রাই ফ্রুট খেতে পারেন ৷ এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ৷
হাইড্রেটেড থাকা প্রয়োজন: শরীরে ডিহাইড্রেশনের কারণেও মিষ্টির লোভ দেখা দিতে পারে, তাই পর্যাপ্ত জল পান করার চেষ্টা করুন ।