হায়দরাবাদ, 1 এপ্রিল: যে সময়ে দেশে সাধারণ নির্বাচন চলবে, সেই সময় ভারতে আবহাওয়ার পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে সোমবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় আর্থ সায়েন্সেস মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ৷ তিনি জানিয়েছেন যে পূর্বাভাস অনুযায়ী এপ্রিলের শেষের দিকে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি শুরু হতে পারে ৷ ফলে এর জন্য সকলকেই এখন থেকে প্রস্তুত হওয়া উচিত ৷
মৌসম ভবনের পূর্বাভাসের প্রেক্ষিতেই তিনি এই কথা বলেছেন ৷ মৌসম ভবন জানিয়েছে যে এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে দেশের অধিকাংশ এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকবে ৷ 10-20 দিন স্থায়ী হতে পারে তাপপ্রবাহ ৷ তবে আইএমডি জানিয়েছে, লা নিনার প্রভাবে বর্ষার দ্বিতীয়ার্ধে ভালো বৃষ্টি হতে পারে এবার ৷
তাপপ্রবাহ কী: অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রার সময়কেই তাপপ্রবাহ বলে ৷ গরমের সময় যখন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তখনই সাধারণত তাপপ্রবাহ হয় ৷ যদি কোনও জায়গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পরপর দু’দিন 45 ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয় কিংবা টানা পাঁচ বা তার থেকে বেশিদিন দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গড় তাপমাত্রার পাঁচ ডিগ্রি সেললিয়াস বেশি হয়, তখন সেই পরিস্থিতিকে তাপপ্রবাহ বলা যেতে পারে ৷ তাপপ্রবাহের প্রভাবে অনেক সময় মৃত্যুও ঘটনাও ঘটতে পারে ৷
তাপপ্রবাহ এবং প্রচণ্ড গরম থেকে সুরক্ষিত থাকতে, কী কী করবেন, কী কী করবেন না ?
তাপজনিত রোগ প্রতিরোধের উপায়:
- বাড়ির বাইরের কাজের সময় নির্ধারণে সতর্কতা জরুরি: আপনাকে যদি বাইরে বের হতেই হয়, তাহলে সকালে ও সন্ধ্যায় যাওয়ার চেষ্টা করুন ৷ শরীরের থার্মোস্ট্যাট পুনরুদ্ধারে ছায়াযুক্ত এলাকায় প্রয়োজনে বিশ্রাম নিন ৷
- বেলা 12টা থেকে দুপুর 3টের মধ্যে রোদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন ৷
- কী খাবেন: হালকা খাবার খান ৷ গ্রীষ্মকালীন ফল ও অন্যান্য খাবার, যাতে স্বাভাবিকভাবেই জল, তা খাওয়ার চেষ্টা করুন ৷ শরীর ঠান্ডা রাখে এমন খাবার খাওয়া উচিত ৷ স্ট্রবেরী, লেবু, শসার মতো ফল খাওয়া যেতে পারে৷ ভারী খাবার, মশলা ও তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত ৷
- প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন: যতবার সম্ভব পর্যাপ্ত জল খাওয়ার চেষ্টা করুন ৷
- ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে জল, ফলের রস বা সবজির রস পান করুন । যেহেতু তাপ-সম্পর্কিত অসুস্থতা লবণের হ্রাসের ফলেও হতে পারে, তাই চরম তাপ ও আর্দ্রতার সময় জলের বদলে কোনও ইলেক্ট্রোলাইট-সমৃদ্ধ স্পোর্টস ড্রিংক পান করা যেতে পারে ।
- ওআরএস ব্যবহার করুন, ঘরে তৈরি পানীয় যেমন লস্যি, ভাতের জল, লেবুর জল, বাটারমিল্ক ইত্যাদি যা শরীরকে রিহাইড্রেট করতে সাহায্য করে, সেগুলোও খাওয়া যেতে পারে ৷
- অ্যালকোহল, ক্যাফিন বা প্রচুর পরিমাণে চিনিযুক্ত তরল পান করবেন না ৷ এগুলি আসলে আপনার শরীর থেকে জল বের করে দিতে পারে ৷ এছাড়াও খুব ঠান্ডা পানীয় এড়িয়ে চলুন ৷ কারণ, এর ফলে পেটে ব্যথা হতে পারে ৷
- উপযুক্ত পোশাক পরুন: হালকা ওজনের, হালকা রঙের, ঢিলেঢালা এবং ছিদ্রযুক্ত সুতির পোশাক পরুন । রোদে বের হওয়ার সময় সানগ্লাস, ছাতা বা টুপি ব্যবহার করুন ।
কাজ করার সময়ের নির্দেশিকা:
- বাইরের তাপমাত্রা বেশি হলে বেশি পরিশ্রম হয়, এমন ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন ৷ বেলা 12টা থেকে 3টের মধ্যে বাইরে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন ৷
- বাইরে গেলে সঙ্গে জল নিয়ে যান ৷
- আপনি যদি বাইরে কাজ করেন, তবে টুপি বা ছাতা ব্যবহার করুন ৷ এবং আপনার মাথা, ঘাড়, মুখ এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে একটি ভেজা কাপড় ব্যবহার করুন ।
- ভারী ঘাম শরীর থেকে লবণ ও খনিজ পদার্থ বের করে দেয় । এগুলো অবশ্যই প্রতিস্থাপন করতে হবে ৷
- আপনাকে যদি ব্যায়াম করতেই হয়, প্রতি ঘণ্টায় 2-4 গ্লাস শীতল ও অ্যালকোহল নেই এমন তরল পান করুন ৷
- স্পোর্টস ড্রিঙ্ক ঘামের ফলে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া লবণ ও খনিজগুলিকে প্রতিস্থাপন করতে পারে । আপনি যদি কম লবণযুক্ত ডায়েটে থাকেন, তবে স্পোর্টস বেভারেজ পান বা লবণের ট্যাবলেট খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ৷
- ঘর ঠান্ডা রাখুন, পর্দা, শাটার বা সান-শেড ব্যবহার করুন ও রাতে জানালা খুলুন ৷
- ফ্যান ও স্যাঁতসেঁতে পোশাক ব্যবহার করুন এবং ঘন ঘন ঠান্ডা জলে স্নান করুন ৷
- ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের যত্ন নিন: যাঁদের শারীরিক সমস্যা আছে৷ যাঁরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন, তাঁদের সকলের যত্ন নিন ৷ পার্ক করা গাড়িতে শিশু বা পোষা প্রাণীকে কখনোই ফেলে রেখে চলে যাবেন না ৷
- ঘরের ভিতর ঠান্ডা থাকুন: ঘরে ঠান্ডা থাকুন ৷ ঘন ঘন ঠান্ডা জলে স্নান করুন ৷ পায়ে, হাতে, মুখ ও ঘাড়ে ঠান্ডা জল দিন ৷ প্রয়োজনে ভেজা কাপড় ব্যবহার করুন ৷ বাড়ির তাপমাত্রা কম রাখতে গ্যাস বা উনুনের ব্যবহার কম করুন ৷ বাড়ির যে অংশ বেশি ঠান্ডা, সেই অংশ বেশি সময় কাটানোর চেষ্টা করুন ৷
- পোষা প্রাণী: পোষা প্রাণীদের জন্য প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করুন এবং ছায়াযুক্ত এলাকায় তাদের জন্য জল ছেড়ে দিন ৷
- মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা ও মাথাব্যথার মতো ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলির দিকে খেয়াল রাখুন ৷ অসুস্থ বোধ করলে চিকিৎসকের কাছে যান ৷
সানস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার পরামর্শ:
কারও সানস্ট্রোক হলে আগে তাঁকে শীতল ও ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখুন ৷ ভেজা কাপড় দিয়ে তাঁর শরীর মুছে দিন ৷ মাথার তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে জল ঢালুন ৷ শরীরের তাপমাত্রা কমানোই আসল লক্ষ্য হওয়া উচিত ৷ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তকে ওআরএস বা লেবুর জল দেওয়া যেতে পারে শরীরকে রিহাইড্রেট করার জন্য ৷ তার পর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে ৷ প্রয়োজনে ভরতিও করতে হতে পারে ৷ কারণ, হিট স্ট্রোক মারাত্মক হতে পারে ৷
আরও পড়ুন: