হায়দরাবাদ: চলতি বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে তাপপ্রবাহ। অতিরিক্ত তাপ মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। শুধু ডিহাইড্রেশন বা শরীরে জলের অভাব নয়, গরমের সময় অনেকেই ত্বকের সমস্যা, হজমের সমস্যা, মাথাব্যথা, বমি বা নাক দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকেন। কিন্তু আয়ুর্বেদ অনুসারে, গ্রীষ্মের ঋতুতে খাদ্যতালিকায় ঠান্ডা প্রভাব-সহ খাদ্য, পানীয় এবং ভেষজ অন্তর্ভুক্ত করলে, স্বাস্থ্যের উপর প্রচণ্ড গরমের ক্ষতিকর প্রভাব অনেকাংশে কমানো যায় (Food and Herbs)।
শুধু আয়ুর্বেদ নয়, প্রায় সব চিকিৎসা ব্যবস্থায় এটা বিশ্বাস করা হয় যে সঠিক খাদ্য অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । বিশেষ করে আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে আবহাওয়ার প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে খাদ্য নির্বাচন করতে হবে । ভোপালের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডাঃ রাজেশ শর্মা বলেন, "আয়ুর্বেদে ঋতুচর্যা অনুসরণ করা হয় । যা দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত ঋতু মানে আবহাওয়া এবং চর্যা মানে নিয়ম ও শৃঙ্খলা । অর্থাৎ আয়ুর্বেদে ঋতু অনুযায়ী নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলার কথা বলা হয়েছে । এই নিয়ম ও শৃঙ্খলা শুধুমাত্র জীবনধারা বা দৈনন্দিন রুটিনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, খাদ্যও এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় ।
আয়ুর্বেদে শরীর এবং আবহাওয়া উভয়ের প্রকৃতি বাত, পিত্ত ও কফের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। এর মধ্যে গ্রীষ্মকালকে পিত্ত প্রকৃতির ঋতু হিসেবে ধরা হয়। এমতাবস্থায় পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়ায় আমাদের শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে থাকে ৷ ফলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা বাড়ে ।
তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, প্রচণ্ড গরমে মানুষ জলশূন্যতা, হিট স্ট্রোক, মাথাব্যথা, ত্বকের সমস্যা, পেট ও হজমের সমস্যা, বদহজম, মাথা ঘোরা বা বমি, নাক দিয়ে রক্ত পড়া এবং আরও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে ।
তাপের প্রভাব কমায় এমন খাবার গ্রহণ করুন: ডাঃ রাজেশ ব্যাখ্যা করেছেন যে গ্রীষ্মের মরশুমে যদি মানুষ তাদের খাদ্যতালিকায় এমন খাবার এবং পানীয় এবং ভেষজ অন্তর্ভুক্ত করে যা শীতল প্রভাব ফেলে বা যা শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে শীতল করতে পারে তবে গরমে ঘটতে থাকা অনেক শারীরিক সমস্যা এড়ানো যায় ৷
তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালে তরলের পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় শাক-সবজি ও ফলমূলের পরিমাণ বাড়াতে হবে যাতে জল, ভিটামিন ও ফাইবার-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন- করলা, পটল, ঢ্যাঁরস, শশা, মটরশুটি, ধনেপাতা, আপেল, জাম, তরমুজ, ন্যাশপাতি, বেদানা ইত্যাদি।
এছাড়া খাবার বা পানীয়তে পুদিনা, লেবু, মৌরি, এলাচ ও গোলাপ ইত্যাদি যোগ করলেও শরীরকে ঠান্ডা করে । নারকেল জল, বাটার মিল্ক, লস্যি, কম চিনিযুক্ত পানীয় এই সময়ে ভীষণ উপকারী ৷
ডাঃ রাজেশ ব্যাখ্যা করেছেন, এর সঙ্গে ক্বাথ বা অন্যান্য তুলসী, ব্রাহ্মী, অশ্বগন্ধা, মাজিষ্টা, মূলেঠি, মৌরি, সবুজ এলাচ, খসমূল, পুদিনা, ভৃঙ্গরাজ এবং অ্যালোভেরা পরিমিত সেবনও শরীরের তাপ কমাতে সহায়ক । শীতল করার বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি, ঔষধি গুণাবলি যেমন ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরিও পাওয়া যায় এই ভেষজগুলি থেকে। যা গ্রীষ্মে শরীরের জ্বালাপোড়া, ফোলাভাব এবং সংক্রমণ-সহ অনেক সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: