হায়দরাবাদ: খাদ্য বা পানীয়তে ভোজ্য ফুলের ব্যবহার নতুন কিছু নয় । দেশে-বিদেশে প্রায় সবসময়ই চা, শরবত বা ফুল থেকে তৈরি খাবারে বিশেষ করে মিষ্টিতে ভোজ্য ফুল ব্যবহার হয়ে আসছে । কিন্তু গত কয়েক বছরে ফুলের চা, বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে তৈরি শরবত এবং মিষ্টান্নে ভোজ্য ফুলের ব্যবহার বেশ ট্রেন্ডি ও ফ্যাশনেবল হিসাবে বিবেচিত হয়েছে (Health Benefits Of Edible Flowers) ।
স্বাস্থ্য সুবিধাসমুহ: সাধারণত মানুষ মনে করে যে খাবারে ফুল ব্যবহার করলে শুধুমাত্র খাবারের সুগন্ধ বা স্বাদ বৃদ্ধি পায়, তবে এর উপকারিতা শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় । অনেক ভোজ্য ফুলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে ও রোগ প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্যও থাকে। এই কারণেই কিছু বিশেষ ফুল আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় অনেক ওষুধেও ব্যবহার করা হয় ।
দিল্লির ডায়েটিশিয়ান ডাঃ দিব্যা শর্মা বলেন, "ভোজ্য ফুলের এমন বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যা স্বাস্থ্যের পুষ্টির পাশাপাশি কখনও কখনও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে । একই সময়ে, চা বা পানীয় আকারে অনেক ফুল খাওয়া মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে বিশেষ করে মানসিক চাপ কমাতে ।
তিনি বলেন, "বেশিরভাগ ভোজ্য ফুলে প্রোটিন, অনেক ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, প্রাকৃতিক তেল, সাকসিনেট, ক্যারোটিনয়েড, ফ্ল্যাভোনয়েড, ফেনোলিক অ্যাসিড এবং অ্যান্থোসায়ানিন ইত্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় । এছাড়াও অনেক ফুলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ভাইরালের মতো অনেক গুণ রয়েছে ৷ যা বিপাক ক্রিয়া ভালো রাখতে এবং শরীরকে রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। কিন্তু এখানে এটাও জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে সব ফুলই ভোজ্য নয় । তাই খাদ্যতালিকায় বা যে কোনও ফুল খাওয়ার আগে জেনে নিতে হবে সেগুলি ভোজ্য কি না ।
উত্তরাখণ্ডের অবসরপ্রাপ্ত উদ্ভিদবিদ ডাঃ আরসি পন্তের মতে, কিছু ফুল যা ভোজ্য ফুলের শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত ও তাদের ব্যবহার নিম্নরূপ ।
গোলাপ: গোলাপ ফুলের পাপড়ি মিষ্টি, নোনতা খাবার, গুলকন্দ, শরবত এবং চা আকারে খাওয়া বা পান করা যেতে পারে । এটির চাপ-হ্রাসকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে । বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে চা, শরবত বা এর থেকে তৈরি মিষ্টি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ।
ক্যামোমাইল: ক্যামোমাইল ফুল দিয়ে তৈরি চা ব্যবহারের প্রবণতা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে । এই ধরনের বৈশিষ্ট্য বিশেষত ক্যামোমিলে পাওয়া যায় যা আপনাকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে ৷
জবা: জবা একটি অত্যন্ত উপকারী ভোজ্য ফুল । এটি কিছু আয়ুর্বেদিক ওষুধেও ব্যবহৃত হয় । এ ছাড়া চা, শরবত, আইসক্রিম ও মিষ্টিতে জবা ফুল ব্যবহার করা হয়।
পদ্ম: শুধু পদ্ম ফুলই নয় এটি শাকসবজি, চা, শরবত, মিষ্টি ও স্যালাড ইত্যাদিতেও ব্যবহৃত হয় । পদ্ম ফুলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধক গুণ পাওয়া যায় ।
জাফরান: জাফরানের ফুলে পুষ্টির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধক গুণও পাওয়া যায় । শুধু জাফরান নয়, পুরো জাফরান ফুলই চায়ে বা আরও অনেক উপায়ে ব্যবহার করা হয় । আসলে জাফরান ফুলের মাঝের অংশ শুকিয়ে জাফরান তৈরি করা হয় । যা মিষ্টি, নোনতা খাবার, চা, দুধ ও শরবত ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয় ।
ল্যাভেন্ডার: ল্যাভেন্ডার ফুলেও প্রচুর ঔষধি গুণ পাওয়া যায় । আয়ুর্বেদে, এটি অনেক ভেষজের সঙ্গে ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহৃত হয় । একই সময়ে, ল্যাভেন্ডারে এমন নিরাময় বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় যা কেবল স্ট্রেস কমায় না, অনেক ধরণের সমস্যা সমাধানেও ব্যবহৃত হয়। চা, মিষ্টি, শরবত এবং জেলি তৈরিতে ল্যাভেন্ডার ব্যবহার করা হয় ।
সূর্যমুখী: স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী পুষ্টি ও প্রাকৃতিক তেলও প্রচুর পরিমাণে সূর্যমুখী ফুলে পাওয়া যায় । এমনকি এটি থেকে তৈরি তেলও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। এর ফুল এবং বীজ প্রায় সব স্বাদের (মিষ্টি এবং নোনতা) খাবারে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডাঃ পন্ত আরও জানান, এগুলি ছাড়াও গাঁদা, জুঁই, বুরান, জুঁই, স্কোয়াশ ব্লসম, পানসি, ভায়োলা এবং হানিসাকল ফুলের কিছু প্রজাতিও ভোজ্য ফুলের ক্যাটাগরিতে আসে । যা মিষ্টি, কেক, চা, শরবত, স্য়ালাড ড্রেসিং, জ্যাম এবং জেলি ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ।
ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন: ডাঃ দিব্যা বলেন, "বাজারে অনেক ফুলের চা ও শরবত রেডিমেড পাওয়া যায় । তবে তাজা ফুল যদি খাবার বা পানীয়তে ব্যবহার করা হয় তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।"
প্রকৃতপক্ষে, ফুলগুলিকে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়ার পরে এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন কী ধরণের ডায়েটে, কী পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে এবং ফুলের কোন অংশ ব্যবহার করতে হবে ইত্যাদি জানার পরেই ব্যবহার করা উচিত। সাধারণত, বেশিরভাগ ফুল খুব অল্প পরিমাণে খাবার বা মিষ্টিতে ব্যবহার করা হয় কারণ বেশিরভাগ ফুলের সুগন্ধ এবং স্বাদ খুব শক্তিশালী যা বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে স্বাদ নষ্ট হতে পারে ।
আরও পড়ুন: