হায়দারবাদ: বেশিরভাগ ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘‘নিয়মিত হাঁটা ও দৌড়ানো সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন উপায়ে উপকারী ।’’ অনেক গবেষণার ফলাফলে নিয়মিত হাঁটা এবং দৌড়ানোর সুবিধার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ৷ এই শারীরিক ক্রিয়াকলাপের নিয়মিত অনুশীলন শরীরের প্রায় সমস্ত পেশীর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে ৷ এছাড়াও ভালো মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতেও সহায়তা করে । ওজন নিয়ন্ত্রণেও খুব উপকারী । এমনকী অনেক গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়মিত হাঁটা ও দৌড় মানুষের আয়ু বাড়াতে সাহায্য করে ।
এমনিতেই মানুষের মধ্যে হাঁটা ও দৌড়ানোর আগ্রহ অনেক বেশি ৷ কিন্তু গত কয়েক বছরে ফিটনেস ট্রেন্ড বা ফিটনেস ফ্যাশনের কারণে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের হাঁটা ও দৌড়ানোর চর্চার প্রবণতা বেড়েছে ।
দিল্লির লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক ডঃ আশরির কুরেশি বলেন, "হাঁটা এবং দৌড়ানো সহজ হলেও খুবই উপকারী ব্যায়াম । তাদের নিয়মিত অনুশীলন হার্টের স্বাস্থ্য, ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উন্নতি, পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে ও ওজন কমাতে সহায়তা করে ৷ কারণ তাদের নিয়মিত অনুশীলন ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য় করে । এছাড়া এই কাজগুলি শারীরিক শক্তির মাত্রা বাড়াতে, ক্লান্তি, অলসতা কমাতে, বিপাকক্রিয়ার উন্নতিতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, হাড় ও পেশির স্বাস্থ্যের উন্নতিতে, ভালো ঘুমের উন্নতিতে সাহায্য করে ৷ এটি শরীরকে সুঠাম ও আকর্ষণীয় করে তুলতে ও কার্যক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে ৷ এই ক্রিয়াকলাপগুলি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে ।
বিভিন্ন ধরনের হাঁটা ও সেগুলির সুবিধা
মুম্বইয়ের ফিটনেস বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষক এরিক ডি'সিলভা বলেন, "আজকাল দেশে ও বিদেশে অনেক ধরনের হাঁটা বা দৌড়ানো কার্যকলাপের প্রবণতা রয়েছে । ধীরগতিতে হাঁটা, দ্রুত হাঁটা, জগিং, ট্রেডমিলে হাঁটা-সহ অনেক ধরনের হাঁটা বা দৌড়ানোর প্রক্রিয়া রয়েছে যা বিভিন্ন সুবিধা এবং ফিটনেস প্রবণতার কারণে সব বয়সের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে । তিনি বলেন, "প্রতিটি ধরনের হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী । কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট হাঁটা বা দৌড়ানোর কাজে, শরীরের বিভিন্ন অংশে গতি, হাঁটার ধরন এবং অন্যান্য কারণে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায় । তবে তিনি বলেন, নিয়মিত সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার অনুশীলন করা প্রয়োজন ৷"
তিনি বলেন, ‘‘কিছু সাধারণ পুরানো হাঁটার শৈলীর সঙ্গে অনেক নতুন ধরনের হাঁটার প্রবণতাও বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ।’’ এই নতুন ও পুরনো হাঁটার কার্যক্রম এবং সেগুলি করার উপায়গুলি নিম্নরূপ ।
স্বাভাবিক গতিতে হাঁটা: এটি সবচেয়ে সহজ প্রক্রিয়া ৷ দিনের যেকোনও সময় যেকোনও জায়গায় এটি করা যেতে পারে ।
দ্রুত হাঁটা: সাধারণত হাঁটা এবং দৌড়ের মধ্যের গতিতে হাঁটাকে দ্রুত হাঁটা বলে । দ্রুত হাঁটার সময় হাতের নড়াচড়াও পায়ের গতি অনুযায়ী সামনে পিছনে হয় । প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে 150 মিনিটের জন্য দ্রুত হাঁটা শরীরের জন্য উপকারী । অনেক গবেষণায়, দ্রুত হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে ।
পাওয়ার ওয়াক: এতে একজনকে স্বাভাবিক হাঁটার গতির তুলনায় ঘণ্টায় প্রায় 4 থেকে 5 মাইল গতিতে হাঁটতে হয় । নিয়মিত এই হাঁটা সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার করলে অনেক মানসিক ও শারীরিক উপকার পাওয়া যায় ।
ক্যানিয়ন হাঁটা বা হাইকিং: এতে পাহাড়ি এলাকায় দীর্ঘ সময় হাঁটা হয় । এটি বাইরের দেশে খুবই সাধারণ ও জনপ্রিয় ।
নর্ডিক ওয়াকিং: নর্ডিক ওয়াকিং স্বাভাবিক বা মাঝারিভাবে দ্রুত গতিতে করা হয় ৷ এক্ষেত্রে দু’হাতে একটি লাঠি থাকে । এটি একটি সম্পূর্ণ শারীরিক ওয়ার্ক-আউট বলে মনে করা হয় ।
ইনফিনিটি ওয়াক: ইনফিনিটি ওয়াক হল একটি ধ্যান ভিত্তিক কার্যকলাপ যা মানসিক এবং শারীরিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে করা হয় । এটিতে মনোনিবেশ করার সময় খালি পায়ে হাঁটতে হবে ।
মন দিয়ে হাঁটা: প্রকৃতিতে নিঃশব্দে বা সম্পূর্ণভাবে স্থিরভাবে হাঁটাকে মননশীল হাঁটা বলা হয় । এটি মননশীলতা ধ্যানের একটি অংশ হিসাবে বিবেচিত হয় ।
বিপরীত হাঁটা: বিপরীত হাঁটাতে হাঁটা উলটো বা পিছনের দিকে করা হয় । এটি একটি ট্রেডমিলেও করা হয় । এই হাঁটার ফলে ভারসাম্য ও হাঁটার গতি উন্নত হয় ৷ শরীরের শক্তি ও নমনীয়তা বৃদ্ধি পায় এবং কার্ডিওরেসপিরেটরি ফিটনেসও উন্নত হয় ।
রেস ওয়াকিং: এই ধরনের হাঁটার ক্ষেত্রে একজনকে প্রায় দৌড়ানোর মতোই হাঁটতে হয় । এই হাঁটা প্রত্যেকের জন্য নয় ৷ এটির নিয়মিত অনুশীলন করার আগে একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন ।
জগিং: জগিং মানে হালকা গতিতে দৌড়ানো । এতে প্রথমে হালকা গতিতে হাঁটা শুরু করুন । তারপর ধীরে ধীরে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দৌড়ের গতিতে আনা হয় । এটি সমস্ত বয়সের জন্য একটি আদর্শ ব্যায়াম হিসাবে বিবেচিত হয়, যা পুরো শরীরের ব্যায়াম প্রদান করে ।