ETV Bharat / entertainment

'গানের কথা খুঁজে না-পেলে গালিগালাজ করতেন', রাহুল দেব বর্মনের জন্মদিনে অনেক অজানা তথ্য - RD Burman Birth Anniversary

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jun 27, 2024, 3:48 PM IST

RD Burman 85th Birth Anniversary: রাহুল দেব বর্মনের সাত সুরে গানের সঙ্গম আট থেকে আশি মন ছুঁয়ে যায় সকলের ৷ ভার্সেটাইল সুরকার তথা সঙ্গীত পরিচালকের গানে সুর তোলার রেওয়াজ ছিল ভারী অদ্ভুত ৷ খারাপ ভাষা বা গালিগালাজ যে কারোর গানের সাধনার অঙ্গ হতে পারে, কে জানত ? রইল 'পঞ্চমদার' সুরের সাত কাহন ৷

RD Burman 85th Birth Anniversary
রাহুল দেব বর্মনের জন্মদিন (ইটিভি ভারত)

কলকাতা, 27 জুন: সাত সুরে তাঁর দখল ছিল ষোলআনা ৷ হিন্দি ও বাংলা ছবি ও আধুনিক গানে তৈরি করেছিলেন অন্যঘরানা ৷ যা সিনেপ্রেমী ও সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে অমরসৃষ্টি হয়ে রয়ে গিয়েছে ৷ তিনি রাহুলদেব বর্মন ৷ সঙ্গীত পরিচালকের গানে সুর করা নিয়ে নানা সময়ে নানা অজানা কথা উঠে এসেছে ৷ কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই গান তৈরি করার সময় নানা রকমের খারাপ শব্দ বা অপশব্দ ব্যবহার করতেন সকলের পঞ্চম দা ৷ তাঁর 85তম জন্মদিনে ইটিভি ভারত তুলে ধরল এক অজানা গল্প ৷

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক প্রভাত রায় ইটিভি ভারতকে বলেন, "শ্বেত পাথরের থালা'র সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন পঞ্চম দা। মুকুল দত্ত গান লিখেছিলেন। 'যে প্রদীপ জ্বালছো তুমি...'গানের কথা তখনও মুকুল দত্ত দেননি। কিন্তু গানটার জন্য সুর ভেজে ফেলেছিলেন পঞ্চম দা। আর যেহেতু কথা ছিল না, তাই কিছু প্রচলিত গালাগাল বা যাকে চলতি কথায় আমরা খিস্তি বলি সেগুলো বসিয়ে সুর ভাজছিলেন। সবাই তো অবাক। এই সব কথা দিয়ে গান হবে নাকি? আমি তাঁদের বুঝিয়ে বলি বিষয়টা। আসলে পঞ্চমদা এটাই করতেন। কথা না-এলে সুর ভাজতেন গালাগাল বসিয়ে।"

শিল্পী কুমার শানু এক সাক্ষাৎকারে জানান, কারোর গান পছন্দ হলেই নাকি তাঁকে নানান গালিগালাজ দিতেন। ওটাই ছিল ওঁর প্রশংসা করার অভাবনীয় কায়দা। তিনি বলেন, "একবার ওঁর বাড়িতে গিয়েছি গানের জন্য। একজন এসে পঞ্চম দা'কে বললেন আপনার গাড়িটা নেই। খুব হাসতে হাসতে পঞ্চম দা বললেন, তা হলে কেউ চুরি করেছে। আমি বললাম আপনি হাসছেন এর জন্য। আমাকে ওই হাসতে হাসতেই বললেন, আমার গান চুরি হয়ে যাচ্ছে আর গাড়ি চুরি হবে না? এমনই রসিক মানুষ ছিলেন। পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে ভাবতেন না।"

1939 সালে এদিনেই কলকাতাতে শচীনদেব বর্মন এবং মীরা দাশগুপ্তর কোলে জন্ম নেন রাহুল দেব বর্মন। বাবা সঙ্গীতজ্ঞ আর মা ছিলেন গীতিকার। এহেন দুই মানুষের কোলে যাঁর জন্ম তিনি সুরের সাথী হবেন না তো কে হবেন? মাত্র নয় বছর বয়সে 'অ্যায় মেরি তোপি পালট কে আ...' গানটি রচনা করেন তিনি। আর সেটি শচীনকর্তা 1956 সালে চলচ্চিত্র 'ফান্টুশ'-এ ব্যবহার করেন। এরপর সময় এগিয়েছে গানের সঙ্গে পথচলা শুরু হয় পঞ্চমদার। 'তিসরি মঞ্জিল' ছবিতে সুর দেওয়ার পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি। তাঁর সুরারোপিত ছবির সংখ্যা নির্ণয় করা দায়। তার মধ্যে কয়েকটি শান’, ‘বরসাত কি এক রাত’, ‘রকি’, ‘কালিয়া’, ‘ সত্তে পে সত্তা’, ‘সনম তেরি কসম’, ‘মাসুম’, ‘বেতাব’, ‘জিভা’, ‘সাগর’, ‘ইজাজত’, ‘পরিন্দে', 'হরে রামা হরে কৃষ্ণ'।

সঙ্গীত পরিচালনার পাশাপাশি বহু ছবিতে গানও গেয়েছেন তিনি। শুধু কি তাই ! অভিনয় করার অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর। 'ভূত বাংলা', 'পেয়ার কা মৌসুম'-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। সত্তরের দশকে এক প্রকার ভারতীয় সিনেমার সুরের জগতে রাজত্ব করে গিয়েছেন তিনি। 1983 এবং 1984 সালে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সম্মানিত হন তিনি। এহেন মানুষটিকেই আবার শুনতে হয়েছে যে তিনি 'অপয়া'। রটেছিল রাহুলদেব বর্মনকে দিয়ে সুর করালে নাকি, সেই ছবি সিনেমা হলে চলবে না। শোনা যায়, সেই সময় নেশাতে মগ্ন হয়ে একা থাকতে পছন্দ করতেন তিনি। তবে, বেশিদিন নয়। এরপর তাঁকে ভরসা করে '1942 আ লভ স্টোরি'র সুরের দায়িত্ব দেন পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়া ৷ বাকিটা ইতিহাস ৷ আজও সেই গান ফেরে মানুষের মুখে মুখে।

1995 সালে ফিল্মফেয়ার অনুষ্ঠানে সব সিনেমাকে পিছনে ফেলে একটার পর একটা অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় বিধু বিনোদ চোপড়ার '1942 আ লাভ স্টোরি'। সেই বছর সেরা মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে পুরষ্কৃত হন রাহুল দেব বর্মন। কিন্তু সেই দিনটা দেখার সৌভাগ্য হয়নি পঞ্চমের। তার আগেই 1994 সালে মাত্র 54 বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন সবার প্রিয় 'পঞ্চমদা'।

কলকাতা, 27 জুন: সাত সুরে তাঁর দখল ছিল ষোলআনা ৷ হিন্দি ও বাংলা ছবি ও আধুনিক গানে তৈরি করেছিলেন অন্যঘরানা ৷ যা সিনেপ্রেমী ও সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে অমরসৃষ্টি হয়ে রয়ে গিয়েছে ৷ তিনি রাহুলদেব বর্মন ৷ সঙ্গীত পরিচালকের গানে সুর করা নিয়ে নানা সময়ে নানা অজানা কথা উঠে এসেছে ৷ কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই গান তৈরি করার সময় নানা রকমের খারাপ শব্দ বা অপশব্দ ব্যবহার করতেন সকলের পঞ্চম দা ৷ তাঁর 85তম জন্মদিনে ইটিভি ভারত তুলে ধরল এক অজানা গল্প ৷

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক প্রভাত রায় ইটিভি ভারতকে বলেন, "শ্বেত পাথরের থালা'র সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন পঞ্চম দা। মুকুল দত্ত গান লিখেছিলেন। 'যে প্রদীপ জ্বালছো তুমি...'গানের কথা তখনও মুকুল দত্ত দেননি। কিন্তু গানটার জন্য সুর ভেজে ফেলেছিলেন পঞ্চম দা। আর যেহেতু কথা ছিল না, তাই কিছু প্রচলিত গালাগাল বা যাকে চলতি কথায় আমরা খিস্তি বলি সেগুলো বসিয়ে সুর ভাজছিলেন। সবাই তো অবাক। এই সব কথা দিয়ে গান হবে নাকি? আমি তাঁদের বুঝিয়ে বলি বিষয়টা। আসলে পঞ্চমদা এটাই করতেন। কথা না-এলে সুর ভাজতেন গালাগাল বসিয়ে।"

শিল্পী কুমার শানু এক সাক্ষাৎকারে জানান, কারোর গান পছন্দ হলেই নাকি তাঁকে নানান গালিগালাজ দিতেন। ওটাই ছিল ওঁর প্রশংসা করার অভাবনীয় কায়দা। তিনি বলেন, "একবার ওঁর বাড়িতে গিয়েছি গানের জন্য। একজন এসে পঞ্চম দা'কে বললেন আপনার গাড়িটা নেই। খুব হাসতে হাসতে পঞ্চম দা বললেন, তা হলে কেউ চুরি করেছে। আমি বললাম আপনি হাসছেন এর জন্য। আমাকে ওই হাসতে হাসতেই বললেন, আমার গান চুরি হয়ে যাচ্ছে আর গাড়ি চুরি হবে না? এমনই রসিক মানুষ ছিলেন। পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে ভাবতেন না।"

1939 সালে এদিনেই কলকাতাতে শচীনদেব বর্মন এবং মীরা দাশগুপ্তর কোলে জন্ম নেন রাহুল দেব বর্মন। বাবা সঙ্গীতজ্ঞ আর মা ছিলেন গীতিকার। এহেন দুই মানুষের কোলে যাঁর জন্ম তিনি সুরের সাথী হবেন না তো কে হবেন? মাত্র নয় বছর বয়সে 'অ্যায় মেরি তোপি পালট কে আ...' গানটি রচনা করেন তিনি। আর সেটি শচীনকর্তা 1956 সালে চলচ্চিত্র 'ফান্টুশ'-এ ব্যবহার করেন। এরপর সময় এগিয়েছে গানের সঙ্গে পথচলা শুরু হয় পঞ্চমদার। 'তিসরি মঞ্জিল' ছবিতে সুর দেওয়ার পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি। তাঁর সুরারোপিত ছবির সংখ্যা নির্ণয় করা দায়। তার মধ্যে কয়েকটি শান’, ‘বরসাত কি এক রাত’, ‘রকি’, ‘কালিয়া’, ‘ সত্তে পে সত্তা’, ‘সনম তেরি কসম’, ‘মাসুম’, ‘বেতাব’, ‘জিভা’, ‘সাগর’, ‘ইজাজত’, ‘পরিন্দে', 'হরে রামা হরে কৃষ্ণ'।

সঙ্গীত পরিচালনার পাশাপাশি বহু ছবিতে গানও গেয়েছেন তিনি। শুধু কি তাই ! অভিনয় করার অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর। 'ভূত বাংলা', 'পেয়ার কা মৌসুম'-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। সত্তরের দশকে এক প্রকার ভারতীয় সিনেমার সুরের জগতে রাজত্ব করে গিয়েছেন তিনি। 1983 এবং 1984 সালে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সম্মানিত হন তিনি। এহেন মানুষটিকেই আবার শুনতে হয়েছে যে তিনি 'অপয়া'। রটেছিল রাহুলদেব বর্মনকে দিয়ে সুর করালে নাকি, সেই ছবি সিনেমা হলে চলবে না। শোনা যায়, সেই সময় নেশাতে মগ্ন হয়ে একা থাকতে পছন্দ করতেন তিনি। তবে, বেশিদিন নয়। এরপর তাঁকে ভরসা করে '1942 আ লভ স্টোরি'র সুরের দায়িত্ব দেন পরিচালক বিধু বিনোদ চোপড়া ৷ বাকিটা ইতিহাস ৷ আজও সেই গান ফেরে মানুষের মুখে মুখে।

1995 সালে ফিল্মফেয়ার অনুষ্ঠানে সব সিনেমাকে পিছনে ফেলে একটার পর একটা অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় বিধু বিনোদ চোপড়ার '1942 আ লাভ স্টোরি'। সেই বছর সেরা মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে পুরষ্কৃত হন রাহুল দেব বর্মন। কিন্তু সেই দিনটা দেখার সৌভাগ্য হয়নি পঞ্চমের। তার আগেই 1994 সালে মাত্র 54 বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন সবার প্রিয় 'পঞ্চমদা'।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.