কলকাতা, 6 ফেব্রুয়ারি: সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরে আজ দ্বিতীয় প্রয়াণ বার্ষিকী। শিল্পী নেই তবে তাঁর কাজ আজও রয়ে গিয়েছে মানুষের মনের মণিকোঠায় ৷ কোকিলকণ্ঠী সুরের জাদুতে বাঁধা পড়েছেন আপামর দেশবাসী ৷ প্রেমে, বিরহে, আনন্দে, দুঃখে, বেদনায় বারবার সম্বল হয়ে ওঠে তাঁর গান ৷ সেই ধারা ভাঙবে কার সাধ্যি ? নানা ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। ঝরঝরে বাংলা বলতেন। প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন বাংলাকে । কিন্তু তিনি কতগুলি ভাষায় গান গেয়েছেন বা গানের পরিসংখ্যান কত, তা অনেকেই জানেন না ৷ সেই হিসেব রেখেছেন আর এক বাঙালি গবেষক তথা শিক্ষক স্নেহাশিস ৷
লতা মঙ্গেশকরের স্নেহধন্য গবেষক, সঙ্গীত শিল্পী তথা শিক্ষক স্নেহাশিস চট্টোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক গবেষণা ভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী সবমিলিয়ে 38টি ভাষায় 6703টি গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। 38টি ভাষার মধ্যে 32টি ভারতীয় এবং 6টি বিদেশি ভাষায়। তবে, তাঁর গানের রেকর্ড সংখ্যা কত তা নিয়ে বিশিষ্টদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে বিস্তর। লতাজি'র গানের আর্কাইভ বানিয়েছেন স্নেহাশিস চট্টোপাধ্যায়। 1990 সাল থেকে লতা মঙ্গেশকরের গানের সব হিসেব রাখেন তিনি। কেন রাখেন? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, "লতাজি'র গানের প্রতি অসম্ভব ভালো লাগা থেকেই এই কাজ।"
তিনি ইটিভি ভারতকে বলেন, "উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় একবার দেখতে পাই মহম্মদ রফি সাহেবের গানের পরিসংখ্যান নিয়ে লেখা বেরিয়েছে। তখন ভাবলাম লতা জি'কে নিয়েও তো এমন হতে পারে। 1990 থেকে আমার শুরু সুরাজলাল মুখোপাধ্যায় (হারু দা'র) হাত ধরে। উনিই পথ দেখান আমাকে কীভাবে কী করতে হবে। খাতা-পেন নিয়ে শুরু করলাম জার্নি। লিখে রাখতাম সবকিছু। তখনও বই লিখব, আর্কাইভ বানাব এতকিছু তো ভাবিনি। নিজেই পরিসংখ্যান বানাব বলে লিখে রাখতাম। 1997 সালে আমার প্রথম বই বেরোয়। সেবারই বইমেলায় আগুন লাগে। আমার 40টা বই পুড়ে যায়। লতাজি'র গানের কথা, তথ্য, কোন ব্যানারে গানটি এসেছে, মিউজিক ডিরেক্টর কে, কাস্টিং-এ কারা ছিলেন সব আমার 'লতা গীতকোষ'-এ পাওয়া যায়। আমার লেখা প্রত্যেকটা বই আমি পৌঁছে দিতাম ওঁকে। খুশি হতেন। খুশি না হলে আজ 16টা ভলিউম বের হত না। সাহস পেতাম না।"
তিনি আরও বলেন, "লতা মঙ্গেশকর ক'টি গান গেয়েছেন তা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড যা দেয় তার উপর ভিত্তি করে যে যার মতো করে বাড়িয়ে দেন, কমিয়ে ফেলেন। কিন্তু হিসেব নিকেষ করে দেখা যায় সেই সংখ্যা 6703। ফিল্ম, নন ফিল্ম, নাটকের গান, সিরিয়ালের গান, রেডিওর গান সবই রয়েছে তার মধ্যে।" বারোতম সংকলনটি মারাঠি ভাষার গানের উপরে লিখে 2021 সালে সুরসম্রাজ্ঞীর জন্মদিনে তাঁকে বইটি উপহার হিসেবে পাঠান স্নেহাশিস চট্টোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, বইটি দেবনাগরী ভাষায় লেখা হয়। আর তথ্য লেখা হয়েছে ইংরেজিতে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয় লেখকের কলমে দুটি খণ্ডে 'মেরি আওয়াজ হি পহেচান হ্যায়'। এই বিষয়ে তিনি বলেন, "আমি লতা জি'র ফ্যান। কাছে যাওয়ার সুযোগ একাধিকবার হয়েছে। আমার সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলতেন। একাধিকবার দেখা হয় লতাজি'র সঙ্গে। তবে, 1993-এর পর দেখা হয় 2002 সালে দীক্ষামঞ্জরীর ওপেনিং-এ। আমি একটা গুজরাটি বই উপহার দিই। আমাকে সেদিনই বলেন, ওনার মরাঠি গানের উপর কাজ করব কি না। আমি সময় চাই।"
তিনি আরও বলেন, "কেন না উনি 1942 সাল থেকে মরাঠি গান গাইছেন। আর আমাকে বলছেন 2002 সালে। গানগুলো দরকার। নাহলে আমি লিখতে পারব না। অবশেষে 2021-এ বইটা তৈরি হয়। আমি ওনাকে জন্মদিনে বইটা উপহার হিসাবে দিই ৷ ওটাই ছিল লতাজির সঙ্গে আমার শেষ দেখা ৷ দেখে যেতে পারলেন না দুটি খণ্ডে 'মেরি আওয়াজ হি পহেচান হ্যায়' বইয়ের প্রকাশ। আমার কাছে মণিপুরী এবং ওড়িয়া গান চেয়েছিলেন। মাঝেমধ্যে ফোনে কথা হত লতাজি'র সঙ্গে। জীবনে এমন মানুষের সান্নিধ্য আর পাব না ৷" লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে নীরবেই নিজের গবেষণা চালিয়ে গিয়েছেন স্নেহাশিস ৷ নীরবে কাজ করলেও তাঁকে চিনতেন লতা মঙ্গেশকর, সেটাই যেন স্নেহাশিস চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বড়ো প্রাপ্তি।
আরও পড়ুন:
1. 'মন কিঁউ বহেকা রে বহেকা...' সুরের ভুবনে লতা-আশার যুগলবন্দি আলোড়ন তোলে আজও
2. 'নাম গুম জায়েগা...', লতার কণ্ঠে মুগ্ধ আপামর দেশবাসী; মৃত্যুবার্ষিকীতে সুরসম্রাজ্ঞীকে প্রণাম
3. গ্র্যামির আসরে বিশাল নাটক, তিনটি পুরস্কার জেতার পরেই গ্রেফতার কিলার মাইক